নিজস্ব প্রতিবেদনঃ-এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যারা চেনেন তারা জানেন কোন লড়াইকেই তিনি হালকাভাবে নেন না।প্রতিপক্ষ যত শক্তিশালীই হোক না কেন বিনা লড়াইতে দমে যাবার পাত্র তিনি নন।তাই কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রাধীন সংস্থা সিবিআই যখন এ রাজ্যে একের পর নেতা ও পুলিশ আধিকারিকদের গ্রাপ্তারের পরিকল্পনা করছে তখন মমতাও পাল্টা চাপ তৈরি করতে তাঁর পরিকল্পানা ছকে ফেললেন।

যেপুলিশআধিকারিককে ঘিরে গোটা দেশ জুড়ে সম্প্রতি তুমুল আলোড়ন,যাকে বাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে সিবিআইকে রাজ্য প্রশাসনের রোশের মুখে পড়তে হয়,বেশ কিছু সিবিআই অফিসারকে থানায় পর্যন্ত যেতে হয়।যে ঘটনায় খোদ মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় জুলুমের অভিযোগে ধর্ণায় বসে গোটা দেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন,সেই রাজীবকুমারকে মুখ্যমন্ত্রী সিবিআইয়ের মাথায় বসিয়ে পরিষ্কার একটা বার্তা দিয়ে দিলেন বিজেপি নেতৃত্বকে।

আর সেই বার্তাটা হল এই যে, সিবিআই বাড়াবাড়ি করলে সিআইডিও তার পাল্টা দেবে।কেউ বলতেই পারেন,সিবিআই এর ক্ষমতা সিআইডির চেয়ে অনেক বেশী,কিন্তু এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে,সিবিআই এর পান্টা হিসেবে এ রাজ্যে বিজেপি নেতাদের চাপে রাখার জন্য সিআইডিই যথেষ্ট।আর রাজীকুমার হলেন তেমন একজন অফিসার কেস সাজাতে যার জুড়ি মেলা ভার।তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ জেলবন্দি থাকার সময় অভিযোগ করেছিলেন যে রাজীবকুমার তাঁকে হুমকি দিয়েছিলেন যে তাঁর কথামত না চললে তিনি কুণালের বিরুদ্ধে এমনভাবে কেস সাজাবেন যে কুণাল একটার পর একটা কেসে জড়িয়ে যাবেন,তাঁর জামিন পাওয়াটা এককথায় অসম্ভব হয়ে যাবে।

ব্যাপারটা যে শুধু কথার কথা নয়,কুণালের পরিণতি বিষয়টির সত্যতা প্রমাণ করেছে।দীর্ঘদিন কুণালকে জেল খাটতে হয়েছে,রাজ্য সরকারই কুণালকে একটানা জেলবন্দি থাকার ব্যবস্থা করেছিল,আর এর পেছনে ছিল রাজীবকুমারের কেস সাজানোর অসাধারণ দক্ষতা।মনে রাখা দরকার যতদিন সারদা তদন্তের ভার রাজ্য পুলিশের হাতে ছিল ততদিন জামিন পান নি কুণাল ঘোষ,তিনি জামিন পেয়েছিলেন সিবিআই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সারদা তদন্তের দায়িত্ব পাবার পর।

সুতরাং রাজীবকুমার যে কেস সাজিয়ে যে কাউকে দিনের পর দিন হাজতে পুরে রাকতে কতটা দক্ষ তার প্রমাণ পাওয়া মুখ্যমন্ত্রী এবার সিবিআই এর পাল্টা দাওয়াই হিসেবেই রাজীবকুমারকে সিআইডির মাথায় বসিয়ে দিয়েছেন।সূত্রের খবর এ রাজ্যের একাধিক বিজেপি নেতা সিআইডির নজরে আছে।শিশুচুরি থেকে,খুন,এমনকী ভুয়ো শিক্ষাগত যোগ্যতার মার্কশিট নেওয়া নেতাদেরও নজরে রাখছে সিআইডি।খবর হল মুকুল রায় আছেন সিআইডির হিট লিস্টে,আছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও।শুধু মিথ্যা মার্কশিট নয়,দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে শেনা যাচ্ছে এক মহিলাকে প্রতারণা করার অভিযোগ নিয়েও খোঁজখবর শুরু করেছে সিআইডির অফিসাররা।

প্রসঙ্গত বলে রাখা দরকার গত বছরই আরএসএসের এক দাপুটে নেতাকে সিআইডি বিজেপিরই এক মহিলা কর্মীর অভিযোগের ভিত্তিতে দিল্লি থেকে গ্রেপ্তার করে এনেছিল,সেই অভিযোগে দিলীপ ঘোষের নামও জড়িয়েছিল,তা নিয়ে নতুন করে খোঁজখবর করতে শুরু করেছে সিআইডি।সিআইডির নজরে আছে বাবুল সুপ্রিয়,রুপা গাঙ্গুলির নামও।যবতীয় নথি ও তথ্য সাজাতে শুরু করে দিয়েছেন রাজীবকুমার,অন্তত সূত্রের খবর তেমনটাই।ফলে এ রাজ্যের নেতাদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রাখলে সিবিআিইকে দিয়ে ভোটের আগে বড় কোন ঝটকা দেবার আগে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের ভাবতেই হবে,ইট মারলে পাল্টা পাটকেল মমতাও মারবেন।

রাজীবকুমার সেই পাটকেল তৈরির দক্ষ কারিগড়,সেটা বুঝেই মমতা তাঁকে সিআইডির দায়িত্ব দিয়েছেন।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অন্তত এটা বুঝিয়ে দিতে পেরেছেন,এদেশে অনেকে যা পারে না,তিনি তা পারেন,তিনিই পারেন সিবিআই অফিসারদের জেলে ভরে দিতে,তিনিই পারেন,একজন পুলিশ আধিকারিকের হয়ে ধর্ণায় বসে যেতে,তিনিই পারেন অমিত শাহ ও যোগী আদিত্যনাতের হেলিকপ্টার এ রাজ্যে নামতে না দিতে,শুধু সাহস নয় মমতা বন্দ্যপাধ্যায় কখোন কখোন দুঃসাহসীও।

আর এই দুঃসাহসের কথা মাথায় রাখলে এ রাজ্যে সিবিআই এর পাল্টা দিসেবে সিআইডি যে অনেককিছুই করতে পারে সেই বার্তাটাই মমতা দিয়ে দিলেন বিজেপিকে।আসন্ন ভোটের আগে এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন চমকও বলা যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here