সম্পাদকীয়ঃপ্রদীপ জ্বালাবার পর যে প্রশ্নগুলো থাকে

0
586

প্রধানমন্ত্রীর বার্তা মেনে আমরা করোনা ভাইরাসের মোকাবিলা করতে প্রদীপ জ্বালিয়েছি।শধু প্রদীপ জ্বালিয়েই অবশ্য আমরা খান্ত হইনি,একই সঙ্গে দেদার বাজি পুড়িয়েছি,শব্দ বাজি ফাটাতেও আমাদের কোন কুন্ঠা হয় নি।আমরা করোনার আতঙ্ক ও মৃত্যুকে সেলিব্রেট করেছি।আমরা মত্ততা আর হুল্লোরের সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করি,তাই তো মৃত্যুও আমাদের কাছে একটা উপভোগ করার মত বিষয়।

আমরা আমাদের নেতা মন্ত্রীদের বাক্যকে বেদবাক্য বলে মান্যতা দিতে অভ্যস্ত।আমরা প্রশ্ন করতে পারি না,প্রশ্ন করতে শিখিনি আমরা শুধু নেতা নেত্রীরা যা বলেন তা মেনে নিতে শিখেছি।আমরা গণতন্ত্রের মানে বুঝিনি,তাই জানি না গণতন্ত্রে সাধারণ নাগরিকের কথা শুনতে বাধ্য থাকেন নেতা বা নেত্রীরা,আমরা উল্টো জানি নেতা বা নেত্রীরা যা বলবেন ঘাড় গুঁজে আমদের তা মেনে নেওয়া কর্তব্য।তাই তো আমরা করোনা নিয়ে এত আতঙ্কের মধ্যেও প্রধানমন্ত্রীর বার্তা মেনে থালা কাঁশর নিয়ে রাস্তায় নামি,প্রদীপ জ্বালাই,বাজি পোড়াই।

আমরা আকাট,অশিক্ষিত,নির্বোধ বলে আমাদের দেশের নেতাদের খুব সুবিধা হয়েছে তারা যেমন করে চান আমাদের নাচাতে পারেন।আমরা নাচি,আমরা যেমন নাচতে নাচতে ভোট দিতে যাই,তেমনি করোনা সংক্রমণেও হিন্দু-মুসলমান ভাগাভাগি করে নাচতে নাচতে মরি।আর আমাদের এরকম নির্বোধের মত মরে যেতে দেখে খুব মজা পান আমাদের দেশের নেতা নেত্রীরা।

যদি আমরা নির্বোধ ও অশিক্ষিত না হতাম তবে প্রদীপ জ্বালাবার পর কিছু প্রশ্ন করতে পারতাম,জিজ্ঞাসা করতে পারতাম এদেশে করোনা সংক্রমণ হবে তা তো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু অনেক আগে জানিয়েছিল তা হলে এ দেশের সরকার আর াগে ব্যবস্থা নিল না কেন?হু তো ১১ মার্চ ঘোষণা করেছিল বিশ্বজুড়ে অতিমারি ঘটতে যাচ্ছে।তাহলে তার পরেও কেন দেশের সরকার মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সম্বর্ধনা দিতে আমেদাবাদ স্টেডিয়ামে অতবড় সমাবেশ করল? তাহলে কি বুঝতে হবে এদেশের সরকার সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তার চেযেও মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে আদিখ্যেতা দেখানোটাকেই বেশী গুরুত্বের বলে বিবেচনা করেছিলেন?

প্রধানমন্ত্রীর বাণী শুনে যারা প্রদীপ জ্বালাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তারা যদি প্রশ্ন করেন সাধারণ মানুষের জীবনের মূল্যের চেয়েও কোন যুক্তিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ডের সম্বর্ধনা বেশী গুরুত্ব পায়?প্রধানমত্রীর কথায় নেচে যারা প্রদীপ জ্বালালেন তারা প্রশ্ন করবেন না,কেন এদেশের পরিযায়ী শ্রমিকের দল পায়ে হাঁটতে হাঁটতে পথে মরে যেতে বাধ্য হয়?কেন তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়ার সমস্ত ব্যবস্থা সরকার করতে পারে না?যে সরকার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সম্বর্ধনা দিতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে সেই সরকার কেন দেশের গরিব মানুষের জীবন বাঁচাতে এতটা উদাসীন?কেন এদেশের সমস্ত স্বাস্থ্য কর্মীদের কেন এখনও সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া হল না?

লকডাউনে আটকা থাকা মানুষের থাওয়ার ব্যবস্থা,অর্থ যোগানের ব্যবস্থা কেন সরকার করবে না?কানাডা,চিন সব জায়গাতেই লকডাউনের সময় খাবার ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে আমাদের সরকারই বা তা করবে না কেন?

প্রধানমন্ত্রীর কথায় নেচে প্রদীপ জ্বালাবার পর এই সব প্রশ্নগুলো যদি না করেন তা হলে বুঝতে হবে নির্বোধ ও অশিক্ষিত আমাদের নীরবে মৃত্যু বরণ করাটাই শ্রেয়।তাই মাথা থেকে অশিক্ষা ও কুশিক্ষার জঞ্জাল সরিয়ে আসুন নিজেদের স্বার্থে নিজেদের রক্ষার তাগিদে নেতা নেত্রীদের কথায় হাঁ হাঁ বলা সঙ সেজে নাচার আগে একটু বোদ্ধ বুদ্ধিতে শান দেওয়ার চেষ্টা করি।মনে রাখবেন প্রধানমন্ত্রীর কথায় নেচে প্রদীপ জ্বালিয়ে বাজি পুড়িয়ে আমরা যেভাবে করোনার আতঙ্ক ও মৃত্যুকে সেলিব্রেট করেছি তাতে গোটা পৃথিবীর মানুষ আমাদের অশিক্ষা ও নির্বোধ আচরণকে ধিক্কার দিচ্ছে।আমাদের উচিত এবার তার প্রায়শ্চিত্ত করা তা না হলে মানুষ হিসেবে আমাদের কোন মর্যাদা অবশিষ্ট থাকবে না।

Previous articleCorona : life versus livelihood 
Next articleমৃত সন্তানকে বুকে আঁকড়ে ৪৮ কিলোমিটার পথ হাঁটলেন মা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here