দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ এবং ডিভিশন বেঞ্চে দু’দুবার করে ঘোরার পরও ফয়সালা হয়নি। শেষে বঙ্গ বিজেপি-র রথ মামলা গিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু সেখানেও খারিজ হয়ে গেল গেরুয়া শিবিরের কর্মসূচি। আদালত জানিয়ে দিল রথযাত্রা করতে পারবে না বিজেপি।রথযাত্রা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে বড় ধাক্কা খেল বিজেপি। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে এখনই রথযাত্রা করতে পারবে না বিজেপি। কারণ রথযাত্রার জন্য আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়া নিয়ে রাজ্য সরকারের উদ্বেগ অযাচিত নয়। বিজেপিকে রাজ্যের কাছে রথযাত্রার অনুমতি চেয়ে নতুন করে আবেদন করতে হবে।
কলকাতা হাইকোর্টের রথযাত্রা নিয়ে দেওয়া নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল বিজেপির রাজ্য শাখা। সেই আবেদনের শুনানিতেই মঙ্গলবার এই নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ–এর নেতৃত্বে বিচারপতি এল এন রাও এবং এস কে কৌল–এর বেঞ্চ। একইসঙ্গে বেঞ্চ রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, বিজেপি যাতে নিরাপদে পশ্চিমবঙ্গে মিছিল এবং সমাবেশ করতে পারে সেব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে। এছাড়া বিজেপি যখন ফের রথযাত্রার আবেদন করবে, তখন যেন সংবিধানে উল্লিখিত ভাষা এবং অভিব্যক্তি বয়ানের মৌলিক অধিকারের কথা মাথায় রেখে অনুমতি দেয় রাজ্য, সেই নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
আদালতের মন্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এই রথযাত্রা নিয়ে যে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে তা মোটেই অমূলক নয়। অর্থাৎ এই কর্মসূচির ফলে রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও আইন-শৃঙ্খলার যে গুরুতর অবনতি হতে পারে, সেটা মেনে নিল দেশের শীর্ষ আদালত। তবে আগে থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করে ও প্রশাসনকে আগাম জানিয়ে মিটিং-মিছিল করতে পারে বিজেপি।
ডিসেম্বরের ৭ তারিখ থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল বঙ্গ বিজেপির রথযাত্রা। কোচবিহার, গঙ্গাসাগর এবং তারাপীঠ থেকে তিনটি যাত্রা বের করার পরিকল্পনা করেছিলেন ৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেনের ম্যানেজাররা। কিন্তু আইনি জটিলতায় সব পরিকল্পনায় একপ্রকার জল পড়ে যায়।
অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে রাজ্যের কাছে তিনটি যাত্রার জন্য অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন দিলীপ ঘোষরা। কিন্তু নবান্ন ‘হ্যাঁ’-‘না’ কিছুই না বলায় রাজ্য বিজেপি আদলতের দ্বারস্থ হয়। প্রথমে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ রায় দেয় ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত যাত্রা স্থগিত। চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় গেরুয়া শিবির। ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যকে নির্দেশ দেয় বিজেপি-র প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে রথের পথ ঠিক করতে। লালবাজারে বৈঠকে বসে দু’পক্ষ। কিন্তু তার একদিন পর বিজেপি রাজ্য দফতরে ফ্যাক্স করে নবান্ন জানিয়ে দেয়, নিরাপত্তা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুন্ন রাখতে রথযাত্রায় অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না।
ফের মামলা যায় সিঙ্গল বেঞ্চে। দ্বিতীয় দফায় সিঙ্গল বেঞ্চ রথযাত্রায় ছাড়পত্র দেয়। কিন্তু এর মাঝেই রাজ্যের তরফে মুখ বন্ধ খামে গোয়েন্দা রিপোর্ট জমা দেওয়া হয় আদালতে। সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে এরপর ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য। সেখানে রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, গোয়েন্দা রিপোর্ট পড়েও দেখেনি সিঙ্গল বেঞ্চ। ডিভিশন বেঞ্চ ফের আটকে দেয় রথ। এরপর গঙ্গাপারের হাইকোর্ট থেকে মামলা যায় দিল্লি দরবারে।
সুপ্রিম কোর্টে বিজেপি-র তরফে আবেদন জানানো হয়েছিল যাতে অবকাশকালীন বেঞ্চে মামলার শুনানি হয়। কিন্তু ক্রিসমাসের আগে সেই আবেদন খারিজ করে দেয় দেশের শীর্ষ আদালত। জানিয়ে দেয়, ছুটির পর আদালত খুললেই হবে শুনানি। গত মঙ্গলবার প্রথম শুনানির পর আদালতে রাজ্যের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি বলেন, গোয়েন্দা রিপোর্টে যা উঠে এসেছে তা যেন আদালত গুরুত্ব দিয়ে দেখে। ওই দিনই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয় পরের মঙ্গলবার চূড়ান্ত শুনানি হবে।
রায়ের পর বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। সেকারণেই আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। কোর্ট যা রায় দিয়েছে সেই মেনেই পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করব।” বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা বলেন, “রথযাত্রা আটকে যাওয়া মানে বিজেপি আটকে যাওয়া নয়। রথযাত্রা বন্ধ হলেও তৃণমূলের বিনাশ মমতা ঠেকাতে পারবেন না।”
গোয়েন্দা রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল, যেখান দিয়ে রথযাত্রা যাবে, সেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিঘ্ন ঘটড়তে পারে। রাজ্যের তরফে বলা হয়েছে, বিজেপি-র রথযাত্রা মানে সেখানে বিশ্বহিন্দু পরিষদ এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের কর্মীরাও যুক্ত হবেন। সমস্যা হতে পারে আইন-শৃঙ্খলায়। আদালত তাতেই সিলমোহর দিল এ দিন। তবে রাজ্যের তরফে বলা হয়েছে, মিটিং-মিছিল করা গণতান্ত্রিক অধিকার। আগাম জানিয়ে যদি বিজেপি কোথাও জনসভা বা মিছিল করে, তাতে অনুমতি দিতে আপত্তি নেই রাজ্যের।
আদালতের আইনি যুদ্ধে বিজেপি বনাম রাজ্য সরকারের প্রেস্টিজ ফাইট চলছিল গত দেড়মাস ধরে। আর তাতে শেষ হাসি হাসল নবান্নই।