দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শ্রীলঙ্কায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পর জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস)পরবর্তী নিশানা কি তবে বাংলা?
দেশ জুড়ে সতর্কবার্তা জারি হয়েছিল আগেই। বস্তুত, আইএসের স্লিপার সেল ভারতেও তাদের শাখা প্রশাখা বিস্তার করতে পারে এমন ইঙ্গিতও মিলেছিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ)তরফে, তবে এই সাম্প্রতিক উদ্বেগের কারণ আইএসের একটি নতুন পোস্টার। সেটিকে ঘিরেই সম্ভাবনার মেঘ ক্রমশই গাঢ় হচ্ছে। পোস্টারটি লেখা বাংলা ভাষায় এবং তাতে বড় বড় হরফে লেখা রয়েছে ‘শীঘ্রই আসছে, ইনশাল্লাহ।’ গোয়েন্দাদের সন্দেহ, প্রথমত বাংলা হরফ, দ্বিতীয়ত ‘শীঘ্রই আসছে’ বলতে এই সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বাংলা ও তার আশপাশে হামলা চালানোর একটা বড় ষড়যন্ত্র করছে।
- বাংলাদেশে ইতমধ্যেই জামাত-উল-মুজাহিদিনের মাধ্যমে আইসিস-এর উপস্থিতি যথেষ্ট শক্তিশালী ভাবেই রয়েছে।
- জেএমবি সদস্যরা লোক নিয়োগের জন্য মাঝেমধ্যেই কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের অন্যত্র ঘোরাঘুরি করে।
পোস্টারটি সামনে এনেছে আইএস মদতপুষ্ট ‘টেলিগ্রাম’ নামের একটি মেসেজিং অ্যাপ। এনআইএ সূত্রে খবর, বাংলা ভাষাভাষী রাজ্য বলতে ভারতে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু অংশে হামলা চালাতে পারে আইএস। পাশাপাশি কোনও ভাবেই বাদ দেওয়া যাচ্ছে না বাংলাদেশকেও। সেখানে খুবই সক্রিয় জামাতুলল মুজাহিদিন (জেএমবি) সংগঠন। এমনকি তাদের ডালপালা ছড়িয়ে রয়েছে বাংলাতেও। সুতরাং, ভোটের মরসুমে বড়সড় নাশকতা ঠেকাতে দেশজুড়ে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা বেষ্টনী। সতর্ক করা হয়েছে রাজ্য পুলিশকেও।
গত ২১ এপ্রিল শ্রীলঙ্কায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন ২৫০ জনেরও বেশি মানুষ। আহত প্রায় সাড়ে চারশো জন। তল্লাশি চালিয়ে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইতিমধ্যেই এই ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিস্ফোরণের পর থেকে এই নিয়ে গ্রেফতারির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬। মনে করা হচ্ছে এরা সকলেই স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠী ন্যাশনাল তৌহিদ জামাতের (এনজেটি) সদস্য। বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে আইএস।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি নাশকতার পর পরই ভারতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ভারতের হাইটেক শহরগুলিতে যেমন বেঙ্গালুরু, মাইসোর, কর্ণাটকে সম্ভাব্য জঙ্গি নাশকতার আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত সতর্কবার্তা জারি করেছে প্রশাসন। সংবেদনশীল জায়গা, ধর্মীয় স্থান, শপিং মল, বাজার, মাল্টিপ্লেক্স, পাব-রেস্তোরাঁ, বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল-সহ জনসমাগম হয় এমন জায়গাগুলিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ ও তার আশপাশের রাজ্যগুলিতে বহুদিন ধরেই ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে জেএমবি জঙ্গিরা, এমনটাই জানিয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। ২০১৪-য় বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের ঘটনাতে অন্যতম চক্রী ছিল জেএমবি জঙ্গিরা। চলতি বছরেই বাবুঘাট থেকে জেএমবি-র সক্রিয় সদস্য আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। শিয়ালদহ থেকে ধরা পড়ে জেএমবি-র অপর সদস্য মনিরুল ইসলাম। রাজ্য পুলিশের আওতায় থাকা জেএমবি মাথা কওসরকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ছিল তারা। পশ্চিমবঙ্গ ও অসমকে কেন্দ্র করে জেহাদের প্রস্তুতি নিয়েছিল জেএমবি জঙ্গি নেতা কওসর। ওই দলেই ছিল মনিরুল, আরিফুল-সহ বেশ কয়েকজন।বেঙ্গালুরু থেকে গ্রেফতার করা হয় কওসরকে। তাকে জেরা করে একে একে বাকি সদস্যদের নাম জানতে পারে কলকাতা পুলিশ এবং জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। কাজেই জেএমবি-র হাত ধরে বাংলাতেও আইএসরা তাদের স্লিপার সেল ছড়িয়ে দিতে পারে বলেই ধারণা গোয়েন্দাদের।
এখন প্রশ্ন তবে কি তারা আসছে?