দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ চিটফান্ড কাণ্ডের তদন্তের প্রয়োজনে শিলংয়ে সিবিআই দফতরে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার ও তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদ কুণাল ঘোষকে জেরায় মুখোমুখি বসানো হয়েছিল গত রবি ও সোমবার কিন্তু সিবিআই সূত্রের খবর, ওই দু’দিন জেরার সময় প্রায় ৪ বার এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যে, রাজীব কুমার ও কুণালের মধ্যে তর্কাতর্কি থামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন খোদ সিবিআই কর্তারাই। অনেকটা রেফারির ভূমিকায় নেমে পড়তে হয়েছিল তাঁদের। শেষমেশ নাকি এই ভাবে মেটানো হয় যে, সিবিআই অফিসারদের মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নের জবাব দেবেন কলকাতার পুলিশ কমিশনারএবং কুণাল৷
জেরার সময় ঠিক কী হয়েছিল?
সিবিআই সূত্রে যা দাবি করা হয়েছে, সেটা মোটামুটি এই রকম, কুণাল ঘোষের সঙ্গে যৌথ জেরার ব্যাপারে প্রথমে আপত্তি করেছিলেন রাজীববাবু। তিনি বলেছিলেন, আগে কুণালের নার্কো অ্যানালিসিস হোক। তার পর যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে। অভিযুক্তকে ওষুধ দিয়ে একপ্রকার ঘোরের মধ্যে রেখে নার্কো অ্যানালিসিস করার নিয়ম। এ কথা শুনেই চটে ওঠেন কুণালবাবু। তিনি বলেন, নার্কো অ্যানালিসিসে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু একই সঙ্গে দু’জনের নার্কো অ্যানালিসিস করতে হবে এক্ষেত্রে৷ প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদ তখন এও বলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন তিনি, পরে চিটফান্ড কাণ্ডে তাঁদের জেরা করেছে সিবিআই বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। কিন্তু রাজীববাবুকে বলতে হবে, উনি মুখ বন্ধ খামে সুপ্রিম কোর্টের কাছে অভিযুক্তদের নাম দিলেও তাঁদের আগে কেন তদন্তের জন্য জেরা করেননি। এ ভাবে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতেই সিবিআই কর্তারা তাঁদের থামিয়ে দেন। যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ পরে করার ব্যাপারে রাজীব কুমারের আবেদনও গৃহীত হয়নি।
কেন্দ্রীয় এই তদন্ত এজেন্সি সূত্রে আরও জানা যাচ্ছে, পরে যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন এক সময়ে রাজীববাবু সিবিআই কর্তাদের কুণাল সম্পর্কে বলেন, ওঁর স্বভাবই হল সবার নামে অভিযোগ করা। এ কথা শুনেই আপত্তি করেন কুণাল বাবু। উনি নাকি পাল্টা বলেন, ওঁর স্বভাবও তা হলে বলছি। যে যখন ক্ষমতায় থাকেন, তাঁর তাবেদারি করে উচ্চ পদ নেওয়া, প্রভাবশালীদের তোষামোদি করা ওঁর অভ্যাস। এই বাদানুবাদের সময় ফের দু’জনকে থামান সিবিআই অফিসাররা। বলেন, দয়া করে আপনারা ব্যক্তিগত আক্রমণ বন্ধ করুন। তদন্তের জন্য যে টুকু প্রাসঙ্গিক সেটাই বলুন। পরে রাজীব কুমার ও কুণাল পরস্পরের প্রতি করা এই মন্তব্য নাকি প্রত্যাহার করে নেন।
সিবিআই সূত্রে আরও বলা হচ্ছে, ব্যাপারটা এখানেই থামেনি। রাজীববাবু গোড়াতেই সিবিআইয়ের কাছে বলেছিলেন, তিনি চিটফান্ড তদন্তে সক্রিয় ভাবে ছিলেন না। অর্ণব ঘোষ ও অন্য অফিসাররা ভাল তদন্ত করেছেন। পরদিন আবার এক সময় জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন রাজীব নাকি বলেন, ‘মাই বয়েজ ডিড আ গুড জব।’ সূত্রের খবর, তিনি এ কথা বলতেই কুণাল নাকি প্রায় লাফিয়ে উঠে বলেন, ‘মাই বয়েজ’ কথাটা তিনিই বলতে পারেন, যিনি তদন্তের নেতৃত্ব দিয়েছেন। অর্থাৎ চিটফান্ড তদন্ত ভাল হলেও উনি করেছেন, খারাপ হলেও উনিই করেছেন। সিবিআইয়ের এক সূত্রের দাবি, এর পর রাজীব নাকি ‘মাই বয়েজ’ শব্দটি বদলে লিখিত বয়ানে ‘আওয়ার বয়েজ’ করতে বলেন।
পরে শেষের দিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় কুণাল কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন। তখনই রাজীব কুমার তাঁকে থামিয়ে কিছু বলতে যান। সেই সময়ে কুণাল বলেন, ‘উনি যখন কথা বলেছেন, আমি কোনও ফোড়ন কাটিনি। কিন্তু আমার কথা বলার সময় উনি বাধা দিলে ভাল হবে না। এমন ফোড়ন কাটব যে উনি কথা বলতেই পারবেন না।’ এর পরেই সিবিআই অফিসাররা তাঁকে থামিয়ে বলেন, একে অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে জবাব দেওয়ার দরকার নেই। তাঁদের দিকে তাকিয়ে যেন জবাব দেন রাজীব কুমার ও কুণাল।
জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন এই ধরনের বাদানুবাদ যে হয়েছে, সে সম্পর্কে অবশ্য বাইরে বেরিয়ে রাজীব কুমার বা কুণাল ঘোষ কেউই সাংবাদিকদের কিছু জানাননি। তবে সিবিআই সূত্রে বলা হয়েছে, এই সবকিছুই ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়েছে। তাতেই সংলাপের সবটুকু ধরা রয়েছে।তবে দুজনের মধ্যে যে বিশেষ বাদানুবাদ হয়েছে সেটা কিন্তু অনেকটাই স্পষ্ট বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা৷