দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ রাজনীতির স্বার্থে এতদিন মতুয়াদের শুধু ব্যবহার করেছে তৃণমূল। বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরকে পাশে বসিয়ে দাবি করলেন মুকুল রায়। তিনি জানিয়েছেন, দ্রুত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কার্যকর হবে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন যখন হয়েছে, তখন তা কার্যকর হবেই। দলবদলের জল্পনা উড়িয়ে জানালেন শান্তনু ঠাকুর। বনগাঁর বিজেপি সাংসদের দাবি, ১৯ জানুয়ারি ঠাকুরনগরে গিয়ে এ নিয়ে বিশদে জানাবেন অমিত শাহ। সমস্ত উদ্বাস্তু সমাজকে তিনি এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করবেন। আমাদের আদর্শগত বিষয় হল সিএএ। কোনওভাবেই এই আইনের বিরোধীদের সঙ্গে হাত মেলানোর প্রশ্ন নেই। অতিমারীর জন্য কিছুটা সময় লাগতে পারে।
দুই বিজেপি নেতার মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, মুকুল ও শান্তনু দুজনেই নাগরিকত্ব আইনটা বোঝেন বলে মনে হয় না। ওরা এমন বলছে, যেন আইনটা মতুয়ার জন্য। মতুয়াদের জন্য এই আইনের কোনও দরকারই নেই। তাঁরা ভারতেরই নাগরিক। তাঁদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কেন? এঁদের কে ভয় দেখিয়ে বিজেপি লোকসভায় ভোট নিয়েছে। বিজেপিও বুঝতে পেরেছে, এটা ঠিক হবে না। অসমে ১৯ লক্ষ লোকের নাম বাদ পড়েছে। তার মধ্যে ১২ লক্ষ হিন্দু। ব্যুমেরাং হচ্ছে বুঝতে পেরেছে, তাই থমকে গেছে ওরা। এখন নিয়ম তৈরির অজুহাত দিয়ে লোককে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে বিজেপি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ২০ ডিসেম্বর বলেন, ‘করোনার জন্যই আটকে আছে সিএএ। টিকাকরণ শুরুর পর এই নিয়ে ভাবা হবে।’
তবে অমিত শাহের এই বক্তব্যে সন্তুষ্ট হননি বিজেপি সাংসদ ও সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর। তিনি বলেছিলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আমাদের প্রশ্ন, কবে সিএএ লাগু হবে? কাদের কারনেই বা লাগু হচ্ছে না?’
সিএএ কার্যকর না হওয়ায় মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন শান্তনু ঠাকুর। কিন্তু, এর জেরে কি আবার তৃণমূলে ফিরতে পারেন তিনি? সেই জল্পনাও উস্কে দেন খোদ শান্তনুই।
তিনি ইঙ্গিত দিতেই তা কার্যত লুফে নিয়েছিল তৃণমূল। শান্তনু ঠাকুরকে সরাসরি দলে আসার আহ্বান জানান তৃণমূলের জেলা সভাপতি এবং রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
তৃণমূলে থাকাকালীন যাঁর সঙ্গে শান্তনুর বিবাদ ছিল চরমে, সম্পর্কে জ্যেঠিমা সেই মমতাবালা ঠাকুরের গলাতেও শোনা যায় কার্যত আপসের সুর। তিনি বলেছিলেন, ‘দলের স্বার্থে একমঞ্চে থাকতে পারি আমরা, কোনও সমস্যা নেই, পারিবারিক সমস্যা থাকতেই পারে, মতের মিল নাও হতে পারে, তবে দল চাইলে একসঙ্গে কাজ করতে আপত্তি নেই।’
পাল্টা দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, ‘শান্তনু একটি সমাজের নেতা, প্রচুর মানুষ আছেন তারা নেতাকে জিজ্ঞাসা করেন। আর জ্যোতিপ্রিয় যদি আহ্বান করেন, ওনার আশীর্বাদ নিয়ে যদি পাপস্খালন করতে চান তাহলে ডাকুন।’
কিন্তু, সোমবার আবার তৃণমূলে ফেরার প্রশ্নে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন বিজেপি সাংসদ শান্তনু। যারা সিএএ সমর্থন করে না, তাদের কাছে যাব কেন? তৃণমূলে ফেরার জল্পনা এভাবেই উড়িয়ে দেন শান্তনু ঠাকুর। তাঁর বক্তব্য, ‘আমি সিএএ কার্যকর হওয়ার জন্য ১৯৭১ সালের পরে আসা মানুষের পক্ষে যাতে যায় তার জন্য আন্দোলন করছি, যারা এর সমর্থনই করছে না সেখানে যাওয়ার প্রশ্ন আসে কী করে। আগে তারা বলুক সিএএ সমর্থন করছে, তারপর আমরা দেখছি কী করা যায়।’
ওই দিন রাতে দিলীপ ঘোষের সঙ্গে তাঁর বৈঠকও হয়।
প্রসঙ্গত, বুধবারই শান্তনুর দাবিমতো বনগাঁ লোকসভা এলাকাকে আলাদা ‘সাংগঠনিক জেলা’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্য বিজেপি প্রতিটি লোকসভা আসনকে একটি করে সাংগঠনিক জেলা হিসেবে দেখলেও এতদিন বনগাঁ বারাসত জেলার মধ্যেই ছিল। বুধবারই নতুন বনগাঁ জেলা গঠন করে তার সভাপতি হিসেবে শান্তনুর ‘ঘনিষ্ঠ’ মানসপতি দেবের নাম ঘোষণা করা হয়।
বুধবার বিকেলে হেস্টিংসে রাজ্য বিজেপি-র নির্বাচনী দফতরে মুকুলের সঙ্গে সাংবাদিক বৈঠকে বসেন শান্তনু। রাজ্য বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ১৯ বা ২০ জানুয়ারি ঠাকুরনগরে যেতে পারেন অমিত। মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের সামনে তিনি নিজেই সিএএ নিয়ে কেন্দ্রের পরিকল্পনার কথা জানাবেন।
শান্তনু জনিয়েছেন, দল নিয়ে তাঁর কোনও ক্ষোভই নেই। তিনি বলেন, “আমি শুধু চেয়েছিলাম, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখানে এসে ঘোষণা করুন। সেটা হচ্ছে জানার পরে আমি খুশি।”
রাজ্যে মতুয়া ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ৩ কোটির বেশি। ৭৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে মতুয়া ভোটাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। গত লোকসভা ভোটে বনগাঁ ও রানাঘাট কেন্দ্র দু’টি তৃণমূলের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। সিএএ নিয়ে টানাপোড়েনের আবহে একুশের ভোটের ফল কী হবে? সেটাই দেখার।