দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বাংলায় তৃণমূল বিরোধী আক্রমণে এ বার বিজেপির নিশানা দৃশ্যত স্পষ্ট। একটাই শব্দ। আর তাতে বার বার আঘাত করতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ মায় সকলেই। তা হল—‘ভাইপো’। বাংলায় ‘দুর্নীতি’ ও ‘ভাইপো’ এই দুটি সমার্থক বলে প্রতিষ্ঠিত করে দিতে চাইছেন তাঁরা।
বৃহস্পতিবার নামখানার সভাতেও ‘ভাইপো ও তাঁর সিন্ডিকেটের দুর্নীতির’ সমালোচনা করে তাতে শান দিতে চেয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী।
গেরুয়া শিবিরের কৌশল যখন এমনই তখন রক্ষণাত্মক হলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বরং নাম না করে অমিত শাহর উদ্দেশে বললেন, আগে ‘ভাতিজাকে লড়’! তার পর অভিষেক ও তাঁর পরিবারের বড় হয়ে ওঠার ব্যাপারে এদিন দীর্ঘ সাফাই দিলেন দিদি।
বৃহস্পতিবার পৈলানে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মিসভা ছিল। সেই সভায় দাঁড়িয়ে মমতা বলেন, “আরে দিদিকে পরে লড়বি, আগে ভাতিজাকে লড়।” তাঁর কথায়, “এতই যদি তোদের দিদি আর ভাতিজা বলতে হয়, তা হলে আমি চ্যালেঞ্জ করছি অমিত শাহকে, ফার্স্ট ইউ কনটেস্ট অভিষেক ব্যানার্জি অ্যান্ড টেল দ্য নেম।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় অমিত শাহের সভার পরেই পৈলানে কর্মী সম্মেলন করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বিজেপি-কে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন তিনি। অমিত শাহর নাম না করে তিনি বলেন, ‘রোজ পিসি ভাইপোর কথা বলছে, আমি বলব, আগে ভাইপোর সঙ্গে লড়াই করে দেখাও। মনে রাখুন অমিত শাহ, দুর্নীতির অভিযোগ থেকে আপনার ছেলেও রক্ষা পাবে না। সে-ও তো আমার ভাইপো।’ চাচাছোলা ভাষায় অমিত শাহকে আক্রমণ করেন তিনি।
https://www.facebook.com/MamataBanerjeeOfficial/videos/886258018582973/
এ দিন পৈলানে দাঁড়িয়ে মমতা বলেন, ‘‘খালি পিসি-ভাইপো করছে। আগে ভাইপোর সঙ্গে লড়াই করে দেখাও। মনে রাখুন অমিত শাহ, দুর্নীতির অভিযোগ থেকে আপনার ছেলেও রক্ষা পাবে না। নিজের ছেলেকে আড়াল করবেন আর বাকিদের ভয় দেখাবেন। আপনার ছেলে কী করে ক্রিকেটের মাথায় বসল? কী করে কোটি কোটি টাকা করল? মনে রাখবেন সে-ও তো আমার ভাইপো।’’
নির্বাচনী প্রচারে বার বার বিজেপি নেতৃত্বের মুখে ‘পিসি-ভাইপো’ কটাক্ষ উঠে এসেছে। কালীঘাট প্রসঙ্গে উঠে এসেছে পরিবারেরতন্ত্রের প্রসঙ্গও। তা নিয়েও এ দিন গেরুয়া শিবিরকে একহাত নেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘অভিষেক বাড়তি গুরুত্ব পায় না আমার কাছে। হাজরায় যখন আমাকে মারা হয়েছিল, মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ও তখন ছোট। মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে একাই কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে মিছিল করত। স্লোগান দিত, দিদিকে কেন মারলে জবাব দাও। তার জন্যই ওকে রাজনীতিতে এনেছি। তোমাদের ছেলেমেয়েরা তো বিদেশে চলে যায়। আমাদের ছেলেমেয়েরা এই মাটিতে থেকে লড়াই করে।’’
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের বিরুদ্ধে বিজেপি যে একা সমালোচনা করছে তা নয়। বাম, কংগ্রেস সহ তামাম বিরোধী দলের অভিযোগ রয়েছে পরিবারের বিরুদ্ধে। সুজন চক্রবর্তীরা তালিকা তুলে ধরে দাবি করেন, কীভাবে হরিশ মুখার্জি রোডে একের পর এক জমি বাড়ি দখল হয়ে গিয়েছে।
এ হেন পরিস্থিতিতে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,-
অভিষেক আমার কাছে স্পেশাল প্রায়োরিটি পায় না। হাজরায় যখন আমাকে মারা হয়েছিল, মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তখন অভিষেক একদম ছোট। ও দেখত আমার মাথায়, হাতে ব্যান্ডেজ। ওর মা ওকে গল্প করত দিদিকে সিপিএম মেরেছে। ও ওই ছোট বয়সেই হাতে একটা কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে একা একা মিছিল করত, দিদিকে মারলে কেন জবাব চাই, জবাব দাও। ওর ছোটবেলা থেকেই রাজনীতিতে ইন্টারেস্ট।
তোমরা তো ছেলেমেয়েদের বিদেশে পাঠিয়ে দাও। আমার দাদার ছোট্ট একটা মেয়ে ছাড়া কেউ বিদেশে যায়নি। ওকেও আমি বারণ করেছিলাম। এরাও তো চাইলে যেতে পারত। কিন্তু এই মাটিতেই রয়েছে।
ওকে (পড়ুন অভিষেককে) অ্যাকসিডেন্ট করে মারার চেষ্টা হয়নি? একটা চোখে দেখতে পায় না। মণিটা উপড়ে এসেছিল।
খুব খারাপ লাগে আমার জন্য ওকে কথা শুনতে হয়। আমি তো ওকে ডেপুটি চিফ মিনিস্টার বা চিফ মিনিস্টার করিনি। আমি ওকে বলেছিলাম, তোকে ভোটে দাঁড়াতে হবে না। তুই পার্টির কাজ কর তোকে রাজ্যসভায় সিট দিয়ে দেব। ও রাজি হয়নি। বলেছে, আমি মানুষের ভোটেই নির্বাচিত হব। এটা তো আমার হাতের মুঠোয় ছিল।
এদিন নাম না করে অমিত শাহর চেহারা ছবি নিয়েও টিপ্পনি কাটেন মমতা। তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে লড়াই করতে গেলে ডেডিকেশন থাকতে হবে। এই চেহারায় হবে না। ফোলা ফোলা চেহারা। বেশ নাদুস নুদুস। সুন্দর সুন্দর দেখতে। ফানুস ফানুস চেহারা। ফাটুস ফুটুস চেহারা।”
তবে সে সব টিপ্পনির উর্ধ্বে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল অভিষেক ও পরিবার সম্পর্কে সাফাই। এখন দেখার বিরোধীরা এ নিয়ে কী বলেন।