দেশের সময়: শুরু হয়ে গেল এ রাজ্যের ভোট গ্রহণ পর্ব।বৃহস্পতিবার উত্তর বঙ্গের দুই আসনে ভোট গ্রহণ শুরুর আগেই পরিষ্কার এবার এ রাজ্যে চরম সংঘাত হতে য়াচ্ছে মোদী ও মমতার।এ রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে ওঠা চিটফান্ড থেকে শুরু করে যাবতীয় অভিযোগ নিয়ে মোদী যে আবার সক্রিয় হবেন তাঁর স্পষ্ট ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন,রাজ্য জুড়ে বুয়া-ভাতিজার লুটতরাজ রুখতে এবার তিনি যথার্থ চৌকিদারের ভূমিকা নেবেন।

এরই মধ্যে দুবার রাজ্যে সভা করে ফেলেছেন প্রধানমন্ত্রী।মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও উত্তরবঙ্গের মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছেন ভোটের আগে।দাবি-আর পাল্টা দাবিতে রীতিমত উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি।এবারের ভোট যুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একটা বিষয় পরিষ্কার মমতা ও বিজেপির যে গোপন বোঝাপড়া নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠত এবার সেখানে কিছু অন্য ট্যুইস্ট যোগ হয়ে গেছে।বিজেপি এ রাজ্যকে টার্গেট করে ফেলায় মমতা বুঝে গেছেন এবার তাঁকে বিজেপির বিরুদ্ধে অলআউট যেতে হবে।

লড়াইতে হেরে গেলে মমতা যেমন তাঁর রাজ্যপাট চালাতে বিপদে পড়ে যাবেন,তেমনি উল্টোদিকে বিজেপিও বুঝে গেছে এ রাজ্যে প্রভাব বাড়াতে মমতাকে ধাক্কা দেওয়া ছাড়া গতি নেই,কারণ এ রাজ্যে মমতা একেবারে বিজেপির ভাবনা ও দর্শনেরই এক অন্য রকম প্রয়োগ ঘটিয়ে রাজ্যের এক অংশের ভোট নিজের দিকে রাখতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

যে বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে,এ রাজ্যের শাসক দলও সেই বিভাজনের রাজনীতিটাকেই অন্যভাবে প্রয়োগ করে চলেছে।,মুসলিম ভোটারদের বিজেপি ভীতিকে কাজে লাগিয়ে মমতা যেমন একদিকে সংখ্যালঘু ভোট নিজের দিকে নিশ্চিত করতে চাইছেন,অন্যদিকে তেমনি বিজেপির সুরেই নিজেকে বড় হিন্দু বলে প্রমাণ করার তাড়নায়,দুর্গা পুজোর উদ্যোক্তাদের অর্থ দিয়ে ও রামনবমির পান্টা হিসেবে হনুমান মন্দির ও নানাবিধ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করে হিন্দু সম্প্রদায়কেও বার্তা দিয়ে নিজের দিকে রাখতে চাইছেন।

বিজেপি মমতার এই কৌশলকেই পাল্টা হিসেবে হিন্দু ভোটারদের একত্রিত করতে নেমেছে,তাদের আর একটা হাতিয়ার এ রাজ্যের শাসক দলের লাগাতার দুর্নীতি,চিটফান্ড থেকে শুরু করে নারদা সবকিছুতেই যেভবে শাসক দলের নেতা-নেত্রীদের নাম জড়িয়েছে তাতে সেই বিষয়টা সামনে রেখে তৃণমূলকে আক্রমণ করলে যে মানুষের সমর্থন মিলবে তা মনে করেই বিজেপি তৃণমূলকে এ বিষয় আক্রমণ শানাচ্ছে।শুধু তাই নয় বিজেপি এবার তৃণমূলকে ভাঙার অংকটাও সাজিয়ে রেখেছে।

শোনা যাচ্ছে একাধিক নেতা বিজেপিতে নাম লেখাতে তৈরি হয়ে বসে আছেন।তঁদের তালিকাও বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের হাতে তুলে দিয়েছেন এ রাজ্যের বিজেপির মুখ্য পরিচালক মুকুল রায়।মুকুল রায় জানেন এবারের নির্বাচনটা তাঁর কাছে একেবারে শিয়রে সংক্রান্তির মত,কোন সাফল্য দেখাতে না পারলে তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার নষ্ট হয়ে যেতে পারে,তাই সর্বাত্মক যুদ্ধে নেমেছেন তিনি,তাঁর কথাতেই এ রাজ্যে বিজেপির প্রচারের প্রধানমুখ হয়ে সামনে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদী।সংঘাতকে চরম আকার দিতেই যে মোদীর সামনে এগিয়ে আসা তাতে কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়।

মোদি জানেন এ রাজ্যে তাঁর এই সর্বাত্মক লড়াইয়ের পরও যদি কোন সাফল্য না আসে সেটা তাঁর ব্যর্থতা বলেই চিহ্নিত হবে তাই সংঘাতটা তিনি জেনে বুঝেই বেছে নিয়েছেন।মমতাও জানেন মোদী তাঁর সঙ্গে লড়াইতে নেমেছেন,তাই লড়াইটা তাঁর জন্যও কঠিন।তিনি এই জন্যই বলছেন এবারটা তাঁর কাছে মরণ-বাঁচন লড়াই,মমতা জানেন,দিল্লিতে বিজেপি যদি ফিরে আসে তবে এ রাজ্যকে তরা একেবারে গ্রাস করার চেষ্টা করবে,তাই এ রাজ্যে বিজেপিকে যদি শূণ্য করে দেওয়া যায় তাহলে এ রাজ্য নিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের আগ্রহ কমে যাবে।

সেই প্রয়াসেই তিনি রাজ্যের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও চাইছেন তাঁর ক্যারিসমায় এ রাজ্যে তৃণমূলের মাটি আলগা করে দিতে।তাই বিজেপি-তৃণমূল সংঘাতটা এখন চরমে।সুত্র বলছে এই সংঘাতটা আর বাড়বে,প্রথম পর্যায়ে উত্তরবঙ্গে ভোটের পর রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়বে এই সংঘাতের উত্তেজনা।বিজেপি ও তৃণমূলের বোঝাপড়ার গল্প এখন অতীত সামনে শুধুই লড়াই,সেই লড়াইয়ের পর শেষ হাসি কে হাসবেন তা জানতে আমাদের এখনও প্রায় মাস দেড়েক অপেক্ষা করতে হবে।এখন রাজ্য বাসীর আশঙ্কা একটাই এই সংঘাত কোন রক্ত হানির কারণ হযে উঠবে না তো?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here