দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবসময়েই নিজেকে ‘গরিব সরকার’-এর মুখ্যমন্ত্রী বলে দাবি করেন। ডিএ বৃদ্ধি থেকে বেতন কমিশনের দাবি, সব প্রসঙ্গেই এই একই ভাবে সরকারের আর্থিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন তিনি।
সম্প্রতি মিড ডে মিল-এ ডিম না খাওয়ানোর যুক্তি হিসেবেও সরকারি তহবিলের ‘অত টাকা নেই’ বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনও তার অন্যথা হয়নি। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে রাজ্যের শারদীয় উৎসবের বৈঠকে নিজের বক্তব্যের শুরুতেই রাজ্য সরকারকে ‘গরিব সরকার’ বলেন মুখ্যমন্ত্রী। আর সেই বক্তৃতার মধ্যেই ঘোষণা, এবার পুজোয় পুজো কমিটিগুলিকে কমপক্ষে ৭০ কোটি টাকা দেবে রাজ্য।
পুজো কমিটিকে টাকা দেওয়া নতুন নয়। গত বছরেও রাজ্যের ২৮ হাজার পুজো কমিটিকে ১০ হাজার টাকা করে সরকারি অনুদান দেওয়া হয়। এবার সেটাই বেড়ে ২৫ হাজার টাকা হচ্ছে।
এর উপরে আবার যে সব পুজো কমিটির পরিচালনার দায়িত্ব মহিলাদের উপরে সেখানে ২৫-এর জায়গায় ৩০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। তবে মহিলা পরিচালিত পুজো কমিটির সংখ্যা এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। সকলকে ২৫ হাজার টাকা দেওয়ার হিসেবেই ২৮ হাজার পুজোর জন্য খরচ হবে ৭০ কোটি টাকা।
এখানেই শেষ নয়। পুজোর কার্নিভালের জন্যও সরকারি খরচ রয়েছে। অন্য দিকে, পুজোর সময়ে সরকারি আয়ও এবার কমবে। তার পিছনেও রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের ঘোষণা। মমতা জানিয়েছেন, সব পুজো কমিটি বিদ্যুতের খরচে ২৫ শতাংশ ছাড় পাবে।
দমকল বিভাগকে অনুমতির জন্য কোনও টাকা দিতে হবে না। একই সঙ্গে রাজ্যের পুরসভাগুলিও পুজো কমিটির বিজ্ঞাপন থেকে আয় করতে পারবে না। এদিন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন এবার আর পুজো কমিটি থেকে বিজ্ঞাপন-কর নেওয়া যাবে না।
মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বিরোধীরা ক্ষোভ জানাতে শুরু করেছেন। তাদের প্রশ্ন, অর্থাভাবে সরকার যখন রাজ্যের কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ দিতে পারে না, অন্যান্য রাজ্য তথা কেন্দ্রের হারে বেতন দিতে পারে না সেখানে এত টাকা কী করে উৎসবের জন্য খরচ করা যায়?
এনিয়ে সিপিএম নেতা তথা বিধানসভায় বাম-পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “আমরা দাবি করেছি, সমস্ত অস্থায়ী, চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের মাইনে বাড়ানো হোক। এই বাজারে তাঁরা যা পান, তাতে চলছে না।
প্যারাটিচার-সহ অন্য যাঁরা হকের দাবি করছেন, তাঁরা পুলিশের মার খাচ্ছেন। আর মুখ্যমন্ত্রী ফূর্তিতে ৭০ কোটি টাকা দিচ্ছেন। কার টাকা? এ রকম আজব রাজ্য আর দায়িত্ব জ্ঞানহীন মুখ্যমন্ত্রী দেশে দুটো নেই।”
বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, এই গোটাটাই মুখ্যমন্ত্রী করছেন রাজনীতির জন্য। তাঁর কথায়, “আগে ১০ হাজার টাকা করে দিয়েছেন। লোকসভার ফলে প্রমাণ তাতে কোনও কাজ হয়নি।
এবার ২৫ হাজার করে ৭০ কোটি টাকা দেবেন। তাতেও কাজ হবে না। মানুষের বিশ্বাসই নষ্ট হয়ে গিয়েছে এই সরকারের প্রতি। সুতরাং, উনি যাই করুন না কেন তাতে আর কোনও কাজ হবে না। সরকারের শেষ দিন গোণা শুরু হয়ে গিয়েছে।” দিলীপ ঘোষের আরও দাবি, এটা আসলে ঘুষ দিয়ে ভোট পাওয়ার লক্ষ্য।