(বিশেষ প্রতিবেদন)
দেশের সময়ঃ-সম্প্রতি বিজেপির রাজ্য সভাপতি যে ভাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর জন্ম দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁকে এদেশের সম্ভাব্য বাঙালি প্রধানমন্ত্রী বলে তুলে ধরেছেন তাতে রাজ্য রাজনীতিতে রীতিমত আলোড়ন পড়ে গেছে,কেউ কেউ বলছেন একেবারে অসাবধানতায় মুক ফসকে কথাটা বলে ফেলেছেন দিলীপবাবু।এর জন্য তাঁকে দিল্লির নেতাদের তিরস্কার শুনতে হবে।যারা এরকম ভাবছেন তাদের বলতেই হচ্ছে না, বিষয়টা মোটেই তেমন নয়।বিজেপির অন্দরমহলের খবর হল,এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে সম্ভাব্য বাঙালি প্রধানমন্ত্রী বলে তুলে ধরাটা আসলে বিজেপির শীর্ষ নেতাদেরই কৌশল,সেই কৌশনের গুটি বা বোড়ে হিসেবেই কাজ করেছেন দিলীপ ঘোষ।দিলীপ ঘোষকে দিয়ে কথাটা আসলে বলানো হয়েছে।কথাটা বলতে দিলীপবাবু যে খুব স্বস্তি বোধ করেন নি তা তাঁর বলার ধরন দেখেই বোঝা গেছিল।গোটা দেশে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি যে চাপের মুখে আছে,তা থেকে পরিত্রান পেতে নানা কৌশল নিচ্ছে বিজেপি সেই কৌশলের অঙ্গ হিসেবেই মমতাকে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরে বিরোধী জোটকে দুর্বল করতে প্রয়াস চালাচ্ছে বিজেপি।কংগ্রেস গোটা দেশ জুড়ে বিরোধী ভোট ভাগ হওযা আটকাতে যে পদ্ধতিতে বিজোপির বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দাঁড় করানোর প্রয়াস চালাচ্ছে,এবং সেই লক্ষ্যে সমস্ত বিজেপি বিরোধী দলগুলিকে এক ছাতার তলায় আনার চেষ্টা করছে তাতে বিজেপির বিপদ বাড়তে পারে বুঝেই বিরোধী ঐক্য ভাঙতে নতুন কৌশল নিয়েছে বিজেপি।সেই কৌশলের অঙ্গ হিসেবেই তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখরকে দিয়ে নতুন করে ফেডারেল ফ্রন্ড তৈরির প্রয়াস চলছে বলে খবর।মমতা ও চন্দ্রশেখর ইতিমধ্যেই বৈঠক করে গেছেন,অবস্থা বুঝেই মমতাকে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তাতাতে চাইছে বিজেপি,মমতা যেন কোন ভাবেই রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব না মেনে নেন সেদিকে লক্ষ্য রেখেই মমতাকে দেশের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী বলে প্রচার করার কৌশল সাজিয়েছে বিজেপি।এ দেশের এখন যা সামগ্রিক পরিস্থিতি তাতে নরেন্দ্র মোদীর বিপোরীতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাহল গান্ধী ছাড়া যে কারের নাম আসতে পারে না,তা খুব ভাল করে বুঝে গেছে বিজেপি,আর এই স্বাভাবিক ভাবনাটাকে গুলিয়ে দিতেই তাদের কৌশল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গোটা দেশ জুড়ে বিরোধীদের একাধিক নাম ভাসিয়ে দেওয়া।মায়াবতী,অখিলেশ,মমতা,যেখানে যেমনভাবে হোক নাম ভাসিয়ে দাও তাহলে গুলিয়ে যাবে সাধারণ মানুষের ভাবনা।বিরোধীদের মধ্যে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রীদের তালিকা যত দীর্ঘ হবে ততই উন্টোদিকে নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী বিজেপির এক ও অদ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্থায়ী জায়গা করে নেবে।এটাই চাইছে বিজেপি রাহুলের নেতৃত্বকে চ্যানেঞ্জ করার মত নানা জনকে বাজারে নামিয়ে দেওয়া।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আচমকা সৌজন্য দেখিয়ে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী বলে তুলে ধরেন নি দিলীপ ঘোষ,বরং তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের কথা মত এ রাজ্যের নেতা হিসেবে মমতাকে একটা বার্তা দিতে চেয়েছেন,যে মমতা যদি চান তবে বিজেপি তাঁকেও সহোগিতা করতে পারে,সে ক্ষেত্রে দিল্লিতে মমতার দলের শক্তি বাড়তেও পারে,তবে কংগ্রেসকে কোনভাবেই জায়গা দেওয়া যাবে না।লক্ষ্য করলে দেখা যাবে পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে তিনটি রাজ্যে কংগ্রেস যে জয় পেল তাতে মমতা কিন্তু রাহুল গান্ধীকে অভিনন্দন জানিয়ে কোন বার্তা দেন নি,বরং তাঁর বক্তব্য ছিল যে ঐ তিনটি রাজ্যে মানুষের জয় হয়েছে।গোটা দেশের সমস্ত আঞ্চলিক দলগুলো যখন কংগ্রেসকে সামনে রেখেই বিজেপি বিরোধিতার জায়গায় যেতে চাইছে মমতা তখন উন্টো দিকে হাঁটছে দেখেই বিজেপি তাঁকে হাতিয়ার করতে চাইছে।মমতা ও বিজেপির একটা অলিখিত সখ্য তৈরি হয়ে গেছে তা রাজ্য রাজনীতিতে একটু নজর রাখলে যে কেউই বলতে পারেন।যেমন গোটা দেশ জুড়ে ৮ ও ৯ জানুয়ারি ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনগুলির ডাকে যে কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধী ধর্মঘট হয়ে গেল তাতে এ রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে ডাকা ধর্মঘট ব্যর্থ করতে যে উদ্যোগ তৃণমূল কর্মী ও তাদের পুলিশ প্রশাসন নিল তাতে বুঝতে অসুবিধা হয় না বিজেপি ও তৃণমূলের একটা বোঝাপড়া তলায় তলায় কাজ করে যাচ্ছে।
এটাও মাথায় রাখতে হবে যে এ রাজ্যে মমতার প্রধান বিপদ কিন্তু বিজেপি নয়,তাঁর প্রধান বিপদ অবশ্যই বামেরা ও কংগ্রেস দল।কারণ বামেরা এ রাজ্য দীর্ঘদিন শাসন করেছে এটা তাদের চেনা মাটি,বামেরা একবার আবার জায়গা দখল করতে পারলে বিপদ বাড়বে।কংগ্রেসও অনেকটা তাই।তুলনায় বিজেপি এ রাজ্যের মাটি চেনে না,তারা এখনও বাঙালির পার্টিই হয়ে উঠতে পারেনি,শুধু ধর্মের প্যানপ্যানানি দিয়ে যে রাজ্য জেতা যায় না তা,বিজেপির অপদার্থ রাজ্য নেতারা এখনও বুঝতেই পারেন নি।এই দলটা অন্তত এ রাজ্যে মমতার কাছে কম বিপজ্জনক,এই জন্যই মমতা সিপিএম ও কংগ্রেসের সংগঠন দিনের পর দিন ভেঙে দিয়ে বিজেপিকে রাজ্যে প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে খাঁড়া করেছেন।অত্যন্ত চতুর রাজনীতিক মমতা জানেন বিজেপি এ রাজ্যে প্রধান বিরোধী হিসেবে থাকলে মুসলিম ভোট একজোট হয়ে তাঁর দিকে পড়বে।মুসলিম ভোটাররা বিজেপিকে ভয় পায়।তাই মুসলিম ভোট নিশ্চিত করতে এ রাজ্যে বিজেপি জুজু বজায় রাখতেই হবে মমতাকে।দিল্লি থেকে বিজেপি সরে গেলে সেখানে কংগ্রেসের কর্তৃত্ব তৈরি হলে এ রাজ্যের ভোটারদের মধ্যেও যে নতুন ভাবনা শুরু হতে পারে তা বুঝেই মমতাও কংগ্রেসের অগ্রগতিকে ভয়ই পাচ্ছেন।২০১৯ এ কেন্দ্রে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সরকার যে মমতার পক্ষেও খুব স্বস্তিকর নয় তা টের পেয়েছেন মমতাও,তাই তাঁর কন্ঠে ফেডারেল ফ্রন্ডের ঘোষণা,দিদির ভাইরা দিদিকে প্রধানমন্ত্রী করার স্বপ্ন দেখছে।বলাই বাহুল্য এই স্বপ্নটা মমতাই দেখতে বলেছেন তাঁর দলের সবাইকে,আর সেই সবাইয়ের তালিকায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও ঢুকে পড়লেন।আপাতভাবে বিষটা খুবই আশ্চর্যের মনে হতে পারে,তবে এর পেছনে অনেক বড় অংক আছে,হিসেব আছে।এই জন্যই না বলা হয় রাজনীতি হল সম্ভাব্যতার শিল্প,,,।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here