দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ রাত তখন সাড়ে এগারোটা। শীতের রাতেও প্রতিবাদ কর্মসূচি চলছিল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস জুড়ে। তার মধ্যেই আচমকা হামলা চালাল একদল দুষ্কৃতী। সকলের হাতে লাঠি, রড, উইকেট। অতর্কিতে মারধর করতে শুরু করে ছাত্রদের। সংঘর্ষে আহত হন অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র স্বপ্ননীল মুখোপাধ্যায় এবং ফাল্গুনী পান নামে দুই ছাত্র। তাঁরা দু’জনেই এসএফআই করেন বলে জানা গিয়েছে। অন্যদিকে হামলাকারীরা এবিভিপির সদস্য বলেই অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদের তরফে।
চলতি মাসের পাঁচ তারিখে অনেকটা এই ধাঁচেই আক্রমণ নেমে এসেছিল জেএনইউয়ের ছাত্রছাত্রীদের উপর। হস্টেলে ঢুকে নির্বিচারে মারধর করা হয়েছিল অধ্যাপিকা ও ছাত্রীদের। পরে জানা যায় এবিভিপির সদস্যরাই মুখ বেঁধে, অস্ত্র হাতে নিয়ে ওই হামলা চালায়। ঠিক তেমনটাই হল বিশ্বভারতীতেও। তবে এখানেই শেষ নয়। আহত অবস্থায় ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পিয়ারসন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অভিযোগ, সেখানে ঢুকে ফের একপ্রস্ত মারধর করে এবিভিপি। বৃহস্পতিবার সকালে দেখা যায়, হাসপাতাল ঘিরে রেখেছে পুলিশ।
https://www.facebook.com/mumtendu/videos/10157009553842648/
এই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা। প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সারা রাজ্যে। সোশ্যাল মিডিয়ায় রাত থেকেই ছড়িয়ে পড়ে মারধরের ছবি এবং ভিডিও। মারমুখী বেশ কয়েক জনকে দেখা গিয়েছে ভাঙা উইকেট ইত্যাদি হাতে। হাসপাতালে ঢুকে মারতে চাওয়ার ভিডিও-ও প্রকাশ্যে এসেছে।
প্রশ্ন উঠেছে, বিশ্বভারতীর মতো ক্যাম্পাসের কড়া নিরাপত্তা ভেঙে অত রাতে অত জন বহিরাগত দুষ্কৃতী ঢুকল কী করে ভিতরে? ছাত্রদের একাংশের অভিযোগ, ভিসি বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সম্মতি ও প্রশ্রয়েই সবটা হয়েছে। কারণ তিনি নিজেই অতরাতে গাড়ি করে ক্যাম্পাসে এসে ঢোকেন এবং সঙ্গে করে এবিভিপির ওই সদস্যদের নিয়ে আসেন। বিদ্যাভবন বয়েজ হস্টেলের সামনে চলে হাঙ্গামা। এবিভিপির ছাত্রনেতা অচিন্ত্য বাগদি ও সাবির আলির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন পড়ুয়ারা। যদিও এবিভিপি অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পাশাপাশি দাবি উঠেছে ভিসির পদত্যাগেরও।
আহত পড়ুয়া ফাল্গুনী পান অভিযোগ করেন, “বুধবার রাতে হঠাৎই ক্যাম্পাসে ঢোকে ভিসির গাড়ি। সেই গাড়ির সঙ্গেই ছিল একাধিক বাইক, যাতে ছিল এবিভিপির সদস্যরা। রাত ১১টা নাগাদ বিদ্যাভবনের ছাত্রাবাসে বাঁশ, রড নিয়ে চড়াও হয়ে মারধর করতে থাকে আমাদের। হুমকি দেয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কেন প্রতিবাদ কর্মসূচি করছি আমরা। আমাদের হাসপাতালে আনা হলে সেখানেও ঢুকে এসে মারে।”
https://www.facebook.com/mumtendu/videos/10157009553442648/
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরেই নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দফায় দফায় বিক্ষোভ, মিছিল করছিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। এই অবস্থায় দিন কয়েক আগেই সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত বিশ্বভারতীতে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে একটি আলোচনা সভায় যোগ দিতে গেলে তাঁকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। ঘেরাও করে বিক্ষোভও দেখান ছাত্রছাত্রীরা। তার পরেও স্বপনবাবু ওই আলোচনায় অংশগ্রহণ করলে কালো পতাকা দেখানো হয় তাঁকে। সেই ঘটনারই ‘জবাব’ দিতে এই আক্রমণ বলে মনে করছেন অনেকে।
রবিঠাকুরের হাতে গড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনটা ঘটতে দেখে নিন্দায় সরব হয়েছেন প্রাক্তন পড়ুয়ারাও। শান্তি ও সংহতির জন্যই এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে চেনেন অনেকে। সেখানে এভাবে ছাত্রছাত্রীদের মার খাওয়ার ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না বলেই মনে করছে শিক্ষামহল। দাবি উঠেছে, অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করে শাস্তি দিতে হবে। পড়ুয়ারাও জানিয়েছেন, এর শেষ দেখে ছাড়বেন তাঁরা।