দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শুভেন্দু অধিকারীকে দলে টেনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর আরও চড়ালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মেদিনীপুরের কলেজ মাঠে এদিন অমিত শাহ বলেন, ‘শুভেন্দুর নেতৃত্বে আজ সব দলের ভালো লোকেরা বিজেপিতে এলেন। মমতা দি যখন কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল করলেন, তখন দলবদল ছিল না ওটা? আজ শুভেন্দু এলেন, সেটা দলবদল মনে হচ্ছে? নির্বাচন আসতে আসতে তৃণমূলে মমতা দি একাই পড়ে থাকবেন।’
অমিত শাহ আরও বলেন, ‘বাংলার যুব সম্প্রদায়কে বলছি, কী দোষ আপনাদের? কৃষকদের কী দোষ? নরেন্দ্র মোদী যে টাকা পাঠাচ্ছেন, তার কোনও সুবিধা পাচ্ছে না এই বাংলার মানুষ। মমতা দি যতদিন থাকবেন, এটাই চলবে। তৃণমূলকে উৎখাত না করলে এটা পাবেন না।’ এদিন আরও একবার ২০০-র বেশি আসনে জেতার দাবি করেন শাহ। বলেন, ‘বিজেপি লোকসভা ভোটেই বুঝিয়ে দিয়েছে বাংলায় তাঁরা কোথায় আছে। আর বিধানসভা ভোটে আগাম বলে রাখছি, ২০০-র বেশি আসন পাব। বাংলার মানুষ মমতা দিদিকে আর চায় না।’
নাড্ডার কনভয়ে হামলার প্রসঙ্গ তুলে অমিত শাহ বলেন, ‘বিজেপি কর্মীদের মেরে, কনভয়ে হামলা করে বিজেপিকে রোখা যাবে না। বরং আরও বেশি করে বিজেপি আপনাকে প্রত্যাঘাত করবে। গোটা বাংলা আজ একজোট হচ্ছে আপনাকে সরাতে। বাংলায় পরিবর্তন করবেই বিজেপি। বাংলায় সব মানুষের জন্য কাজ করবে মোদীজির নেতৃত্বে থাকা সরকার।
অমিত শাহ বাংলার জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা বামেদের বহু বছর ক্ষমতায় রেখেছিলেন, কংগ্রেসকেও দিয়েছেন। তৃণমূলকেও দশ বছর দিয়েছেন। এবার একবার বিজেপিকে সুযোগ দিন। সোনার বাংলা গড়ে দেবে বিজেপি।’ সেইসঙ্গেই এদিন গোটা মেদিনীপুর মাঠে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি ওঠে অমিত শাহের বক্তব্যের শেষে।
এদিন বিজেপিতে যোগ দিয়েই সুর চড়িয়েছেন শুভেন্দু অধিকারীও। বলেন, ‘অমিত শাহ আমার বড় দাদা। মুকুল রায় বলেছিলেন, আত্মসম্মান থাকলে তৃণমূলে থাকিস না। অনেকে আমাকে বিশ্বাসঘাতক বলছে। নেতাগিরি করব না। বিজেপি পতাকা লাগাতে বললে লাগাব, দেওয়াল লিখতে বললেন লিখব।’ একইসঙ্গে ‘ভাইপো’ প্রসঙ্গ তুলে তিনি স্লোগান তোলেন, ‘একসময় বলেছি বিজেপি হটাও। আজ বলছি, তোলাবাজ ভাইপো হটাও।’
অপেক্ষার অবসান। জল্পনা মতোই শেষ পর্যন্ত অমিত শাহের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। এদিন মেদিনীপুরের মাঠে অমিত শাহের সঙ্গেই মঞ্চে ওঠেন তিনি। হাতে হাত দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে সভার সকলের উদ্দেশে ঐক্যের বার্তা দেন তাঁরা। মঞ্চেও শুভেন্দু বসেন অমিত শাহের পাশের আসনেই। আর বক্তৃতা দিতে উঠেই অমিত শাহকে ‘আমার দাদা’ বলে সম্ভাষণ করে বলেন, ‘দেশের গর্ব অমিত শাহ। তাঁর হাত ধরে এলাম বিজেপিতে। আমি সিঁড়ি দিয়ে উঠেছি। আমাকে বিশ্বাসঘাতক বলছে আজকে। আমি ক্ষমতার জন্য বিজেপিতে আসিনি। আমাকে পতাকা লাগাতে বললেও আমি তাই করব।’
তৃণমূল নেত্রীকে কটাক্ষ করে শুভেন্দু বলেন, ‘তৃণমূল এবার দ্বিতীয় হবে। বিজেপি হবে প্রথম। যেখানে সম্মান, আদর্শ নেই, সেখানে থাকিনি। আমার মা আমার নিজের জন্মদাত্রী। অন্য কেউ নয়। আর ভারত মাতা আমার মা। অন্য কাউকে মা বলতে পারব না। কেন্দ্রের কর্মসূচিগুলিকে নাম পালটে দেওয়া হয়, এখানে চালু করা হয় না। দেশে আর রাজ্য একই সরকার থাকা উচিৎ। তাহলেই বাংলা বাঁচবে। নরেন্দ্র মোদীর হাতে বাংলাকে তুলে দিতেই হবে।’
এদিন বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে তৃণমূল কর্মীদের উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখেছেন শুভেন্দু। তাতে তিনি লেখেন, ‘‘গত ১০ বছরে কোনও পরিবর্তন হয়নি। নীচুতলার কর্মীরা একটু একটু করে দল তৈরি করেছেন। যাঁরা পার্টি তৈরি করেছেন, তাঁরা গুরুত্ব পাননি । ব্যক্তিগত স্বার্থ দলে প্রাধান্য পেয়েছে। রাজ্যের মানুষকে ঠিক করতে হবে, তাঁরা কী করবেন।’ এদিন শুভেন্দুর সঙ্গেই বিজেপিতে যোগ দেন তৃণমূল সাংসদ সুনীল মণ্ডল, প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ দশরথ তিরকে, উত্তর কাঁথির বিধায়ক বনশ্রী মাইতি, হলদিয়ার বিধায়ক তপশ্রী মণ্ডল, ব্যারাকপুরের তৃণমূল বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত, কালনার বিধায়ক বিশ্বজিত কুণ্ডু, বিধায়ক সৈকত পাঁজা, গাজোলের বিধায়ক দীপালি বিশ্বাস, তৃণমূল জমানার প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরী এবং কংগ্রেস নেতা সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এছাড়াও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৬ নেতাও এদিন যোগ দেন বিজেপিতে।
তৃণমূল অবশ্য নিশ্চিত, বিজেপির ‘বহিরাগত’ নেতারা হাজার চেষ্টা করলেও কোনও দিন বাঙালির মন জয় করতে পারবে না। দলের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে বলেন, ‘একটা হোর্ডিং-এ দেখলাম, রবীন্দ্রনাথের ছবির উপরে বিজেপি নেতার ছবি! এই অপমান বাঙালি সহ্য করবে না।’
বাঙালির মন জয়ের চেষ্টার বাইরে আজ মেদিনীপুরে অমিত শাহের জনসভা শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক ভাবে কতটা ‘নাটকীয়’ হয়, সে দিকেও নজর ছিল সবার। কারণ, এই সভায় শুভেন্দু অধিকারী-সহ অন্য দলের আরও বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি বিজেপিতে নাম লেখালেন।