অন্বেষা সেন: বাঙালির বারো মাসে পার্বণ, যার অন্যতম বিশ্বকর্মা পুজো ৷ আর বিশ্বকর্মা পুজো মানেই বলতে গেলে দুর্গাপুজোর ফাইনাল কাউন্টডাউন শুরু। বিশ্বকর্মা পুজোর আরও এক বিশেষত্ব হল ঘুড়ি ওড়ানো। বাংলার বিভিন্ন জায়গাতেই এই দিন আকাশ ছেয়ে থাকে পেটকাটি, চাঁদিয়াল, মুখপোড়া, চাপরাশ, ময়ূরপঙ্খীতে। আকাশে চলে ঘুড়ির লড়াই, আর কাটতে পারলেই সমস্বরে ভোকাট্টা ধ্বনি। বলতে গেলে এই দিনটা ঘুড়িপ্রেমীদের কাছে একটা বিশেষ উৎসব।
এবার অনেকেরই মনে হতে পারে ঘুড়ি তো বছরের যে কোনও সময় ওড়ানো যায়, তাহলে এই দিনেই কেন? বা এই দিনে ঘুড়ি ওড়ানোর বিশেষত্বটাই বা কী? এর উত্তর পেতে গেলে জানতে হবে পৌরাণিক গল্প। আসলে বিশ্বকর্মা হলেন দেবলোকের কারিগর, বা সহজ কথায় বলতে গেলে দেবতাদের ইঞ্জিনিয়ার। স্বর্গে দেবতাদের যে কোনওরকম কারিগরী সহায়তার দরকার পড়লেই, মুশকিল আসান একমাত্র বিশ্বকর্মা। তা এই বিশ্বকর্মাই একবার দেবতাদের জন্য উড়ন্ত রথ তৈরি করেছিলেন। শোনা যায়, সেই ঘটনাকে স্মরণ করেই ঘুড়ি ওড়ানো হয় বিশ্বকর্মা পুজোর দিন।
তবে বঙ্গদেশে অবশ্য ঘুড়ি ওড়ানোর প্রচলন শুরু হয় ১৮৫০ সাল নাগাদ। সাধারণ মানুষ খুব একটা ঘুড়ি ওড়াতেন না। বরং সেই সময় ঘুড়ি ওড়ানোর রেওয়াজ সীমাবদ্ধ ছিল ধনী ও বিত্তশালী মানুষজনেদের মধ্যেই। এই প্রসঙ্গে বর্ধমান রাজবাড়ির কথা উল্লেখ করতেই হয়। কথিত আছে, রাজা মহাতাবচাঁদ নাকি নিজেই ঘুড়ি ওড়াতেন। আর এই বর্ধমানের রাজাদের হাত ধরেই নাকি সেখানে ঘুড়ি উৎসব জনপ্রিয়তা লাভ করে। এও শোনা যায়, সেই সময় অর্থবান লোকেরা কেউ কেউ নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তি প্রদর্শনের জন্য নাকি ঘুড়িতে টাকা বেঁধেও ওড়াতেন।
পরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য সাধারণ মানুষের মধ্যেও ঘুড়ি ওড়ানোর প্রচলন দেখা দেয়, যা আজও জারি রয়েছে। যদিও ব্যস্ততা আর আধুনিকতার যুগে হয়তো অনেকেই এখন আর বিশ্বকর্মা পুজোয় ঘুড়ি ওড়ানোর ফুরসৎ পান না। তবে ভোকাট্টা শব্দে আজও মনটা ঠিক উড়ে যায় ওই দূর আকাশে ঘুড়ির কাছে।