দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সোমবার নবান্নে আয়োজিত সাংবাদিক বৈঠকে ফের বিজেপিকে একহাত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, বিজেপি একটা মিথ্যুক দল, বিজেপি আদতে চিটিংবাজ। শুধু তাই নয়, রবীন্দ্রনাথ নিয়ে বা জাতীয় সংগীত নিয়ে বিজেপি কোনও রকম কথা বললেও তা মেনে নেওয়া হবে না বলেই জানান তিনি।
এদিন বৈঠকে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, বিজেপি যে গোটা দেশে মেরুকরণের রাজনীতি করছে, তখন অমিত শাহ এ রাজ্যে এসে রবীন্দ্রনাথের একাত্মবাদের কথা বলছেন। এটা তিনি কীভাবে দেখছেন? মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একাত্মবাদ, বহুত্ববাদ, জাতীয়তাবাদ– এসব নিয়ে যা যা বলছেন অমিত শাহ্, তা জানতে গবেষণা করতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে। তাঁর কথায়, “রবীন্দ্রনাথ নাকি জোড়াসাঁকোয় জন্মাননি– এসব বলছে। সাংবাদিকদের এগুলো প্রচার করা উচিত।”
এর পরে তিনি বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ইজ রবীন্দ্রনাথ। বাংলা তথা ভারতবর্ষ এবং সারা পৃথিবী রবীন্দ্রনাথ ও অন্য মনীষীদের সেলাম করে। কারণ তাঁদের আন্তর্জাতিক চেতনা বিশ্ব বাংলার স্বপ্ন দেখায়। ওদের পড়াশোনা করতে বলুন। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে অবমাননা মানব না। জাতীয় সংগীত নিয়ে যদি কেউ প্রশ্ন তোলেন, রক্ত দেওয়ার জন্য তৈরি থাকুন, তবু গান বদলাতে দেব না।”
অমিত শাহ এ রাজ্যকে ‘সোনার বাংলা’ করার কথা বলে গেছেন, সে প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আজ বলেন, “উনি জানেন তো, সোনা কাকে বলে রুপো কাকে বলে তামা কাকে বলে? উনি নিশ্চয় জানেন দাঙ্গা কাকে বলে? উনি গতকাল কিছু কথা পুরো মিথ্যে বলে গেছেন। গারবেজ অফ লাই। অমিত শাহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। ওঁকে শোভা পায় না, দলীয় কর্মীদের কথামতো বলে দেওয়া। আমি কাল জবাব দেব, প্রমাণ-সহ।”
এর পরে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাগরিকত্ব আইন নিয়ে করা মন্তব্যের উপর। এর উত্তরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বিজেপি একটি চিটিংবাজ দল। ওরা যাই বলুক, যাই করুক, সেটাই মিথ্যের স্তূপ। আমি বলে দিয়েছি, এদেশের প্রতিটি মানুষ এদেশের নাগরিক। ১৯৭১ সালের আগে যাঁরা এসেছেন সকলেই নাগরিক। মতুয়ারাও নাগরিক। আমার বাংলার প্রতিটি মানুষ এ দেশের নাগরিক। ওঁরা মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারেন না।”
এছাড়াও কেন্দ্রের প্রকল্পগুলি রাজ্যে প্রয়োগ না করার যে অভিযোগ তুলেছেন অমিত শাহ, সে প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড এবং কৃষকদের জন্য যে সুবিধা রয়েছে, তা সকলের জন্য অনেক বেশি কার্যকর। কেন্দ্রের প্রকল্পগুলি নিলে তা সকলে সমানভাবে পাবে না। ওরা নানা কাজ রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে করছে। কেন্দ্রের স্কিম রাজ্যেরই প্রয়োগ করার কথা। আমরা দেব না বলিনি। আমরা টাকাটা পাঠাতে বলেছিলাম, কাজ করতাম। কিন্তু ওরা সেটা করবে না। আমি কৃষিমন্ত্রীকে একাধিক চিঠি লিখেছি।”
শেষ পাঠানো চিঠির খানিকটা অংশ পড়েও শোনান তিনি। প্রশ্ন করেন, “এর বেশি কী বলা যায়! কৃষির কাজ রাজ্য করে, স্বাস্থ্যের কাজও তাই। সব করব আমরা, আর আমাদের চামড়া গোটাবে তোমরা, তা তো হয় না! টক আমড়াও কখনও খেতে হবে।”
তৃণমূল থেকে একগুচ্ছ নেতাকে গেরুয়া শিবিরে টেনে শনিবার বঙ্গ সফর শুরু করেছিলেন অমিত শাহ। রবিবার বোলপুরে জাঁকজমকে ভরা রোড শোয়ের পর তিনি সফর শেষ করেছেন তৃণমূল সরকারকে নানা দিক থেকে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করে। দুর্নীতি, পরিবারতন্ত্র, আইন-শৃঙ্খলার অবনতির মতো বিষয়গুলি বোলপুরে সাংবাদিক বৈঠকে তো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তুলেছেনই, পাশাপাশি উন্নয়নের মাপকাঠিতেও বাম এবং পরবর্তীকালে তৃণমূল জমানায় বাংলা কত পিছিয়ে পড়েছে, তা রীতিমতো তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। তৃণমূল অবশ্য জবাব দিতে কালবিলম্ব করেননি। শাহের পাল্টা হিসেবে রীতিমতো ‘ফ্যাক্ট চেক’ প্রকাশ করে রাজ্যের উন্নয়ন সংক্রান্ত অমিতের যাবতীয় তথ্যকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে রাজ্যের শাসকদল। আর সোমবার অমিত শাহের উদ্দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, এই মিথ্যাচারের জবাব তিনি শীঘ্রই দেবেন।
এদিন সিএএ নিয়েও সুর চড়িয়েছেন তিনি। গেরুয়া শিবিরকে আক্রমণ শানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিজেপি একটি চিটিংবাজ পার্টি। ইংরেজিতে যাকে বলে চিটার। রাজনীতির জন্য বিজেপির নেতারা যা খুশি করতে পারেন। তারা যা খুশি বলতে পারে। তারা সমস্ত মিথ্যে বলতে পারে। যখন থেকে তারা আইন পাশ করেছে, আমরা তখন থেকে এর প্রতিবাদ করছি। আমি প্রথম থেকে বলে আসছি ভারতীয় নাগরিকরা এ দেশেরই নাগরিক। আমরা সব রিফিউজি কলোনিগুলোকে অনুমোদন দিয়েছি। বাংলার সমস্ত মানুষই অনুমোদিত বাসিন্দা। আমরা এনপিআর-এর বিরুদ্ধে, আমরা এনআরসি-র বিরুদ্ধে। তারা অবশ্যই থাকবে। আমরা লড়াইয়ে থাকব।’