বিচারপতির সাবধান বাণী অনুধাবনের প্রয়োজন

0
1009

সম্পাদকীয়ঃ———–সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের মাননীয়া বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে তীব্র কটাক্ষ করে বলেছেন গায়ের জোরে ক্ষমতার চেয়ার আঁকড়ে থাকা যায় না।নির্লজ্জের মত চেয়ার ধরে না রেখে তা ছেড়ে দেওয়াই উচিত।সংখ্যা গরিষ্টতা না থাকলে ক্ষমতার চেয়ারে কারোর বসে থাকার অধিকার থাকে না।

বিচারপতির এই তিরস্কার আসলে কিন্তু এরাজ্যের শাসক দলের প্রতি একধরনের সাবধানবাণী।এই সাবধানবাণীকে অনুধাবনের প্রয়োজন আছে বলেই আমরা মনে করি।তৃণমূল ঘনিষ্ট আইনজীবীরা মনে করতেই পারেন,যে বিচারপতি আসলে রাজনৈতিক বক্তব্য রাখছেন,কারণ আইনজীবীরা রাজনৈতিক দলের আনুগত্য নিয়েই নিজেদের পসার জমান, আমরা সবাই তা জানি।

বিচারপতির যে কোন বক্তব্যকে রাজনীতির অনুষঙ্গে ভাবাটা তাঁদের হয়তো অভ্যাসের মধ্যেই পড়ে কিন্তু এ রাজ্যের সাধারণ মানুষ বোধহয় বিচারপতির বক্তব্যে সত্যের অনুরণনই শুনতে পেয়েছেন।সেই জন্য পথে ঘাটে,বাসে-ট্রেনে সর্বত্রই সাধারণ মানুষ তাঁদের আলোচনায় বার বার বলেছেন একেবারে ঠিক কথা বলেছেন বিচারপতি।

এইসব সাধারণ মানুষ এ রাজ্যের কোন না কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক হয়তো,এমনকী কেউ হয়তো বা শাসক দলেরও সমর্থক হতে পারেন,কিন্তু তাঁরা মনে করেছেন যে বিচারপতি আসলে তাঁদের কথাই বলেছেন।এ রাজ্যে রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার চেয়ারে বসার জন্য সবকিছু করতে পারে,তা মানুষ তাদের প্রতিদিনকার অভিজ্ঞতায় বার বার দেখেছেন।

দেখেছেন একদলের টিকিটে ভোটে জিতে কীভাবে দল পাল্টে কেউ কেউ ক্ষমতার দিকে ধেয়ে গেছেন।মানুষ যাকে ভোট দিয়েছে,একদলের প্রর্থী হিসেবে,ভোটে জিতে সে যখন অন্য দলে চলে যায়,মানুষ প্রতারিত হয়।সাধারণ মানুষের ক্ষমতা কম তাই তাঁরা প্রতারিত হয়েও চুপ থাকতে বাধ্য হন।

কিন্তু তাদের মনের মধ্যে ক্ষোভ জমা হতে থাকে।সেই ক্ষোভকে তারা প্রকাশ করতে পারেন না,রাজনৈতিক দাদা বা দিদিদের ভয়ে।বিচারপতি সপাটে সেই কথাটা বলে দেওয়াতে মানুষ খুশি।লোভী,ক্ষমতার আকাঙ্খায় লালায়িত রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে বিচারপতির তিরস্খার মানুষকে তাই উল্লসিত করেছে।যারা মনে করছেন বিচারপতি রাজনীতি করছেন,আমরা তাদের মনে করিযে দিতে চাইবো,বিচারপতি কিন্তু গণতন্ত্রের গোড়ার কথাটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন।

বলেছেন এ ভাবে ক্ষমতার চেয়ার ধরে রাখাকে গণতন্ত্র বলে না,বলেছেন মানুষ আপনাদের পাঠিয়েছে মানুষের পরিষেবা দিতে,আর অপনারা তা না করে ক্ষমতা ধরে রাখতে দড়ি টানাটানি করে যাচ্ছেন।এমনটা হলে মানুষ একদিন আপনাদের বয়কট করবে।

খুব দরকারি কথাটাই বলেছেন বিচারপতি মহাশয়া,মানুষ যদি নেতাদের বয়কট করতে শুরু করে তবে কিন্তু ভেঙে পড়বে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সমূহ।তাই বিচারপতি সাবধান করলেন।এটাকে রাজনীতি করা না ভেবে বিচারপতির তিরস্কারকে মেনে নিয়ে নেতারা আত্মশুদ্ধি করতে প্রয়াসি হবার চেেষ্টা করলেই ভাল করবেন।

মনে রাখতে হবে বিচারবিভাগ হল আমাদের ব্যবস্থার অভিভাবক।অভিভাবকেরই দায়িত্ব পরিবারের ছোটদের ভুল শুধরে দেওয়া।বিচারপতি সেই চেষ্টাই করেছেন।রাজনীতির তরজায় বিষয়টাকে অনুধাবনের চেষ্টা না করলে ক্ষমতার অভিমুখ ধরে চলা রাজনীতিকরা কিন্তু তাঁদেরই বিপদ ডেকে আনবেন।মানুষ এই কুর্সি দখলের রাজনীতি বয়কট করলে একসময় কিন্তু ব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়বে,তখন না থাকবে বাঁশ,না বাজবে বাঁশি।অতএব সাধু সাবধান!

Previous article২১জুলাই আগের জোশ হারিয়েছে,মানছেন তৃণমূলের নেতারাও
Next articleআকাশ থেকে পড়ল প্রকাণ্ড পাথর, উল্কা নাকি?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here