দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ বৃহস্পতিবার সকালে কৃষকদের আন্দোলনের পক্ষে সওয়াল করে রাষ্ট্রপতি ভবনের উদ্দেশে অভিযান করেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন লোকসভায় কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীও। এদিন সেই অভিযানের ফাঁকেই দুজনের কথা হল বাংলায় একুশের নির্বাচনের জোট নিয়ে।
জানা গিয়েছে, ওই অভিযানের শেষে অধীর চৌধুরীর সঙ্গে কথোপকথনে বাংলার ভোটের প্রসঙ্গ তোলেন রাহুল। অধীরবাবু বলেন, সবই তো হল। কিন্তু বামেদের সঙ্গে জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও হয়নি। সর্বভারতীয় কংগ্রেস তথা এআইসিসি-র তরফে সবুজ সংকেত না দিলে তো এক তরফা ভাবে আমি ঘোষণা করতে পারি না। শুনে রাহুল বলেন, এটা তো ভুল হয়েছে। আমি দেখছি।
দুজনের এই কথাবার্তার কিছুক্ষণ পরই দুপুরে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের ফোন আসে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির কাছে। তাঁকে বলা হয়, আজই বামেদের সঙ্গে জোটের কথা ঘোষণা করে দিন। তাই করেন অধীরবাবু। প্রথমে টুইট করে তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে আগামী ভোটের জন্য আজ কংগ্রেস হাইকমান্ড আনুষ্ঠানিক ভাবে বাম দলগুলির সঙ্গে জোটে সম্মতি দিয়েছে।” এ বার বাংলায় বিধানসভা ভোটে বাম-কংগ্রেস জোটে সিলমোহর দিল কংগ্রেস হাইকমান্ড। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এই খবর জানিয়েছেন। হাত শিবির সূত্রে খবর, সনিয়া গাঁধী সবুজ সঙ্কেত দেওয়ায় এ বার আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা শুরু করবে দল। অন্য দিকে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের প্রশ্নে অক্টোবরেই সায় দিয়েছিল সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি।
অন্য দিকে সিপিএমের পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘তৃণমূল-বিজেপি দুই শাসকদল বাংলার সর্বনাশ করছে এটা সবাই বুঝছে। বাংলার স্বার্থেই এই দুই শক্তিকে পরাস্ত করতে হবে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সিপিএম এবং বামপন্থীরা এ বিষয়ে মনস্থির করেছে। এআইসিসির সিদ্ধান্ত রাজ্যে বিজেপি ও তৃণমূল-বিরোধী আন্দোলনকে শক্তিশালী করবে।’’
পাঁচ বছর আগে ২০১৬ সালেও বিধানসভা ভোটে বাম-কংগ্রেস জোট হয়েছিল। সেই নীতিগত সিদ্ধান্তে পৌঁছোতে দুই শিবিরকেই অভ্যন্তরীণ অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়। কারণ, দীর্ঘ চার দশক ধরে পরস্পরের সঙ্গে লড়াই করা দুই দলের জোট বাঁধতে গেলে মানসিক বাধা দূর করা সব থেকে বড় বিষয় ছিল।
তবে সেবার নামে জোট হলেও, অনেকের মতে কিছু বামনেতার কাজকর্মে তা পূর্ণতা পায়নি। যেমন, শুরুতে কংগ্রেসের সঙ্গে একই মঞ্চে বক্তৃতা দিতে রাজি ছিলেন না কেউ। সিঙ্গুরের সভায় অধীর চৌধুরী যখন বক্তৃতা দিচ্ছেন, তখন দূরে চায়ের দোকানে বসে অপেক্ষা করছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি। অধীর নেমে গেলে তার পর তিনি মঞ্চে উঠবেন। আবার বিমান বসুর মতো নেতারা বলেছিলেন, জোট হয়েছে না ঘোঁট! শেষে যখন বামেরা বাস্তবতা বুঝতে পারে, তখন পার্ক সার্কার্স ময়দানে রাহুল গান্ধী, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যৌথ সভা করেছিলেন। তবে অনেকের মতে, ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
ভুলে ভরা সেই জোট অবশ্য শেষমেশ ৩৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। জিতেছিল ৭৭ টি আসনে। তার পর তাঁদের অনেকেই হাত কামড়াতে কামড়াতে বলেছিলেন, ইশ জোটটা যদি আরও ভাল করে হত!