দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশজুড়ে বেলাগাম সংক্রমণ। দেশের অন্যান্য প্রান্তের মতো করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতি পশ্চিমবঙ্গেও। এই রাজ্যেও হু হু করে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। ভাইরাসের হানায় উদ্বেগ বাড়ছে ভোটের বাংলায় রাজনৈতিক সমাবেশ ঘিরে। এই প্রেক্ষিতে বামেদের পথে কার্যত হাঁটলেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। দেশ জুড়ে বাড়তে থাকা করোনা আতঙ্কের মাঝেই কোভিড বিধি শিকেয় তুলে চলছে বাংলার ভোট উৎসব। পশ্চিমবঙ্গের আট দফা নির্বাচন সম্পন্ন হতে এখনও বাকি ১১ দিন। এবার করোনা আবহে ভোটের মাঝে দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত নিলেন রাহুল গান্ধী।
রবিবার টুইটারে সোনিয়া-পুত্র লিখেছেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে, পশ্চিমবঙ্গে সমস্ত সভা বাতিল করছি।সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের বলব, এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাজনৈতিক সভা করা নিয়ে আপনারা ভেবে দেখুন।’
পশ্চিমবঙ্গে আগামী দিনে যত প্রচার অভিযান করার কথা ছিল, তার সবকটিই বাতিল করেছেন জাতীয় কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধী। করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতার কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলার নির্বাচনী প্রচার বাতিল করার কথা জানিয়েছেন রাহুল। ভোট উত্তাপের মাঝে কংগ্রেস নেতার এহেন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই।
রবিবার নিজের ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে রাহুল গান্ধী লেখেন, “করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমি পশ্চিমবঙ্গে আমার সমস্ত নির্বাচনী জনসভা বাতিল করছি।” অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকেও এ বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করে সিদ্ধান্তে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশাল জনসভার আয়োজন করার ফল কী হতে পারে, তা ভেবে দেখা উচিত। আমি সমস্ত রাজনৈতিক নেতা নেত্রীকে এ বিষয়ে গভীর ভাবে ভাবতে বলব।”
বঙ্গ ভোটে এবার বামেদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে কংগ্রেস। আর সংযুক্ত মোর্চার শরিক বামফ্রন্ট আগেই করোনা আবহে ভোট প্রচার নিয়ে দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল। আলিমুদ্দিনের তরফে বলা হয়েছিল করোনার ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফের কথা মাথায় রেখে বাংলায় ভোটের প্রচারে আর কোনও বড়সড় জমায়েত করবে না তাঁদের দল।
যদিও পশ্চিমবঙ্গে এযাবৎ যে পাঁচ দফা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে, তাতে করোনা বিধি বিশেষ মেনে চলা হয়নি। ভোট প্রচারে জমায়েত করেছে সব রাজনৈতিক দলই। নির্বাচন কমিশনের তরফে প্রচারের সময়সীমা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতি দফা নির্বাচনের ৭২ ঘণ্টা আগেই প্রচার শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
এদিকে দেশের অন্যান্য প্রান্তের মতো বাংলাতেও রেকর্ড হারে বাড়ছে করোনা। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ৪১ হাজার ৪৭ জন।
In view of the Covid situation, I am suspending all my public rallies in West Bengal.
— Rahul Gandhi (@RahulGandhi) April 18, 2021
I would advise all political leaders to think deeply about the consequences of holding large public rallies under the current circumstances.
উল্লেখ্য, লাগামহীন সংক্রমণে রাশ টানতে ইতিমধ্যেই বড় জমায়েত বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিআইএম। বুধবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানান সিপিআইএম-এর পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম । আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সাংবাদিক বৈঠকে সেলিম জানান, ‘চার দফায় ভোট হয়েছে রাজ্যে। পঞ্চম দফার প্রচারও একেবারেই শেষ লগ্নে। এদিকে রাজ্যে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। এই পরিস্থিতিতে আগামী তিন দফার নির্বাচনী প্রচারে কোনও বড় ভিড় না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। এছাড়াও প্রচারে গিয়ে করোনা সম্পর্কিত স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে দেওয়া হবে বিশেষ নজর।’
প্রসঙ্গত, একুশের নির্বাচনী প্রচারে বাংলায় সেভাবে দেখাই যায়নি রাহুলক। বরং কেরালার ভোটপ্রচারে ‘অতি সক্রিয়’ ভূমিকায় দেখা গিয়েছে তাঁকে। সম্প্রতি নির্বাচনের আবহে উত্তরবঙ্গে প্রচারে আসেন কংগ্রেস সাংসদ। বাংলার মতো হেভিওয়েট ভোটে বুড়িছোঁয়া করেই প্রচার সেরেছেন রাহুল, এমনটাই মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের। বরং উনিশের লোকসভা নির্বাচনের সময় বঙ্গে ভোটপ্রচারে অনেকটাই সক্রিয়ভাবে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। এবার রাহুলের এহেন ভোটপ্রচার নিয়ে তাই প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। শেষমেশ, করোনা পরিস্থিতিতে যেভাবে সব সভা বাতিল করে দিলেন রাহুল, তাও উল্লেখযোগ্য বলে মনে করা হচ্ছে।