দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বুধবার সকালে জাতীয় নির্বাচন কমিশনে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতারা। বিজেপি দাবি জানিয়েছে, বাংলায় আইন-শৃঙ্খলার যা অবস্থা, তাতে গোটা রাজ্যটাকেই ‘সুপার সেনসিটিভ’ বলে ঘোষণা করুক কমিশন। বিকেলে এ নিয়ে বিজেপি-র বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন তৃণমূলনেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভোটের আগে চড়ছে পারদ।
উত্তপ্ত জাতীয় থেকে রাজ্য রাজনীতি। বুধবার সকালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ দাবি করেছিলেন, বাংলার সব বুথ অতি স্পর্শকাতর। সেই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে নজর দিতে আবেদন করবে বিজেপি। পাশাপাশি, রবিশংকর বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যমের নাকি একটুও স্বাধীনতা নেই। আর বিকেলেই পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন করে তাঁর বক্তব্যের জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাঁর বক্তব্যে প্রথম থেকেই কেন্দ্রের সমালোচনা করলেন মমতা। পরিস্কার জানিয়ে দিলেন, বিজেপির পেশিশক্তির আস্ফালন তিনি বা তাঁর দল মানবে না। তিনি বলেন, ‘এ রাজ্যে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান একসঙ্গে পালিত হয়। আমরা গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় বিশ্বাসী। আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। সবকিছুর একটা সীমা আছে, পেশিশক্তি আমাদের দেখাবেন না। ওরা ভাবছে আমাকে আটকাবে, কিন্তু কিছুতেই আটকাতে পারবে না।’
এরপরই কেন্দ্রকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আইন–শৃঙ্খলা বজায় রাখা রাজ্যের দায়িত্ব। বাংলায় কোথাও কোনও অশান্তি নেই। তাহলে কেন বাংলাকে নিয়ে অতিস্পর্শকাতর বিজেপি? অতিস্পর্শকাতর বুথের তালিকা তৈরি হল কীভাবে?
সমস্ত বুথকে অতিস্পর্শকাতর দাবি করার কারণই বা কী?’ এরপর তুলে আনেন ত্রিপুরার প্রসঙ্গও। বলেন, ‘এটা আসলে বাংলাকে অপমান করার চেষ্টা। ত্রিপুরার ক্ষেত্রে এসব কথা মনে ছিল না। সেখানে তো ৯৯ শতাংশ আসনে কোনও প্রতিদ্বন্দীতাই হয়নি। আর এদিকে, ভোটে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছিল তৃণমূল কর্মীদেরই।’
এরসঙ্গেই তিনি যোগ করেন, ‘ওদের একটা রাজনৈতিক দল বলেই মনে করি না। আসলে মোদি–অমিত শাহের বিরুদ্ধে লড়াই করছি বলে এভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে। দেশ একটা গণতন্ত্র আছে। মোদিবাবু, আপনারা বিশ্রাম করুন। এরা যদি ক্ষমতায় আসে দেশের সংবিধানই পাল্টে দেবে। গোরক্ষার নামে কত মানুষ মরেছে? আসলে বিজেপির নেতা–মন্ত্রীরা মানসিক রোগগ্রস্থ হয়ে গিয়েছে।
এখন আবার সংবাদমাধ্যমের জন্যও অবজার্ভার নিয়োগ করতে বলছে। এরপর তো নির্বাচন কমিশনকে ভোট দিয়ে আসতে বলবে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করতে চাইছে। চোরের মায়ের বড় গলা। বাংলাকে এভাবে অপমান করার জবাব পাবে। বাংলার মানুষ ভোটবাক্সেই এর জবাব দেবে। তৃণমূল সাত দফায় সাতে সাত পাবে।’
এ দিন কালীঘাটে ৪২জন প্রার্থীকে নিয়ে বৈঠক করেন দিদি। তারপর সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা বলেন, “বিজেপি গিয়ে বলছে সব বুথকে সুপার সেনসিটিভ ঘোষণা করতে হবে। কেন? বাংলায় কী হয়েছে? গোটা দেশে সুপার ইমারজেন্সি চলছে। বাংলাকে সুপার সেনসিটিভ করতে বলে বিজেপি বাংলার মানুষকে অপমান করছে।” এঁর পরেই কাগজ দেখিয়ে মমতা বলেন, “ত্রিপুরায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৯৮ শতাংশ আসনে বিজেপি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে।
কই তা নিয়ে তো কোনও কথা বলছেন না!” বিজেপি নেতারা কমিশনে গিয়ে বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসার কথা তুলে ধরেছিলেন। এ দিন সকালে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “বাংলায় পঞ্চায়েত ভোটে কী হয়েছে গোটা দেশ দেখেছে। ১০০ জন মানুষ খুন, ব্যালট পেপারে আগুন, গণতন্ত্রে এঁর থেকে খারাপ আর কিছু হতে পারে না।” পাল্টা মমতা এ দিন বিকেলে বলেন, “২০১৩ সালে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০১৪ সালে ১৩ জন। যাঁদের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের মধ্যে ৯৯ শতাংশ তৃণমূলকর্মী।