বাংলার শীতও কি চুরি হল! পশ্চিমি ঝঞ্ঝায় নজর হাওয়া অফিসের

0
890

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শীত রয়েছে কিন্তু ঠান্ডার কড়া পাক থেকে বঞ্চিত কলকাতা সহ উত্তর ২৪ পরগনা!

শীতকাতুরেরা মনে মনে বেশ খুশিই হয়ত, কিন্তু শীতবিলাসীদেরকে মোটেই সন্তুষ্ট করতে পারল না বছর শেষের ঠান্ডা। পরিসংখ্যানও তাই বলছে। কলকাতার গত মাসের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গড় দাঁড়িয়েছে ১৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। কাঁটায় কাঁটায় স্বাভাবিক। অথচ, ভালো শীতের জন্য তাপমাত্রার গড় স্বাভাবিকের কম হওয়া জরুরি।

এমন আভাস অবশ্য মরসুমের শুরুতেই দিয়েছিলেন আবহবিদরা। মৌসম ভবন বলেছিল, শীতের তিন মাস মিলিয়ে রাতের তাপমাত্রার গড় স্বাভাবিকের বেশি থাকার সম্ভাবনা দক্ষিণবঙ্গে। ঠিক তারই প্রতিফলন ডিসেম্বরে। জানুয়ারির শুরুতেও ছবিটা ঝকঝকে নয়। প্রথম দিন তিনেক ঠান্ডা থাকবে, তার পরই গায়েব হবে সাময়িক ভাবে। রাতের তাপমাত্রা পৌঁছে যেতে পারে ১৭ ডিগ্রিতেও।

গত দশ বছরের মধ্যে ডিসেম্বরের কলকাতায় সবচেয়ে বেশি ঠান্ডা পড়েছিল ২০১২ সালে। পারদ নামে ১০ ডিগ্রিতে। তার পর আর সেই পারাপতন দেখা যায়নি। এ বারও থমকে গেল ১১.২ ডিগ্রিতে। অথচ, দেশের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে জাঁকিয়ে শীত চলছে অক্টোবর-নভেম্বর থেকেই। বৃহস্পতিবার দিল্লির তাপমাত্রা নেমেছে ৩.৩ ডিগ্রিতে, শূন্যের নীচে রাজস্থানের চুরুর তাপমাত্রা।

যত অপ্রাপ্তি পুবের তল্লাটেই। এদিন রাঁচির তাপমাত্রা ছিল ৯.৮ ডিগ্রি, স্বাভাবিকের চেয়ে এক ডিগ্রি বেশি। উত্তর শহরতলির দমদমে তাপমাত্রা ছিল ১৩.৮ ডিগ্রি, আলিপুরে ১২.৮ ডিগ্রি। আজ, বছরের প্রথম দিনও কলকাতার পারদ ১২ ডিগ্রির আশপাশে থাকার সম্ভাবনা। হিমেল বাতাস কাঁপুনি ধরাবে, এমন আশা নেই।

দিল্লি তো পাচ্ছে, তাহলে বাংলা কেন পাবে না ? আবহবিদদের করা ময়নাতদন্তে উঠে আসছে বেশ কয়েকটি কারণ। রয়েছে ‘চুরি’র গন্ধও। যেমন, বৃহস্পতিবারের পর্যবেক্ষণ, পাকিস্তান ও লাগোয়া উত্তর ভারতের হিমেল হাওয়ার একটা বড় অংশ পুবের পথে না-এসে সোজা চলে যাচ্ছে আরব সাগরের দিকে। পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনা আসছে বিহার-ঝাড়খণ্ড হয়ে বাংলার পথে। তা ছাড়া, অবস্থানের জন্য পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাবে দফায় দফায় বৃষ্টি পেয়েছে দিল্লি। কলকাতা বা দক্ষিণবঙ্গে তা হয়নি। বৃষ্টির পর আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলেই হুল ফোটায় কনকনে বাতাস। সে সুযোগ পায়নি বাংলা। আর রাতের তাপমাত্রার সঙ্গে দিনের তাপমাত্রাও যদি পাল্লা দিয়ে নামে, তবেই শীতের অনুভূতি জোরদার হয়। দিনভর টের পাওয়া যায়। গত তিন দিন ধরেই কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রয়েছে ২৫ ডিগ্রির উপরে। অনুভূতিতেও তাই ঘাটতি।

বাংলার এই বঞ্চনার পিছনে প্রশান্ত মহাসাগরীয় লা নিনার হাত দেখছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। লা নিনার অর্থ সাগরের জলতলের তাপমাত্রা নির্দিষ্ট সীমার নীচে নেমে যাওয়া। এর ফলে দুনিয়া জুড়েই বায়ুপ্রবাহের বাঁধা-ধরা ছকে বদল আসে। মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞানের অধ্যাপকদের কথায় , ‘লা নিনার প্রভাবে উত্তর-পশ্চিম ভারতে প্রবল ঠান্ডা পড়ে। কিন্তু এই ঠান্ডার রেশ পূর্ব ভারতে তেমন যায় না। বরং, দক্ষিণ ভারতেও বেশি ঠান্ডা পড়তে দেখা গিয়েছে।’ যার অন্যতম কারণ, মধ্য ভারত থেকে হিমেল হাওয়ার প্রবাহ দু’ভাগ হয়ে যাওয়া। এ বারও লা নিনাই দায়ী? মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জনিয়েছেন, ‘উত্তর ভারতের হিমেল বাতাসের একটা অংশ যে আরব সাগরে সরে যাচ্ছে, তা দেখাই যাচ্ছে। কিন্তু লা নিনার সময় প্রতি বছরই এমন হয় কি না, তা গবেষণা করে দেখতে হবে।’ তিনি অবশ্য বলছেন, ‘ডিসেম্বরের শুরুর দিকে ঠান্ডা পড়েনি। কিন্তু এই ভাগাভাগির পরও ১৯ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত আলিপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচে রয়েছে। এটাকেই বড় প্রাপ্তি ধরে নিতে হবে।’

জানুয়ারির শুরুতে দেবেপশ্চিমি ঝঞ্ঝার সম্ভাবনা। রবিবার থেকেই শীতের সাময়িক বিরতির জোর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

Previous articleফোটো ফাইট-Photo fight-Top12+ Photographs From Desher Samay Photo contest-2020:
Next articleমেষের বেকার যুবক যুবতীর অস্থায়ী কর্মযোগ,সিংহের অফিসে উন্নতির যোগ :রাশিফল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here