বাংলার দাবি মানার ইঙ্গিত নেই, আরও ধার নেওয়ার সুযোগ কেন্দ্র দিল ঠিকই, তবে তাতে অনেক শর্ত অনেক ঝক্কি

0
1538

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কোভিড সংক্রমণের কারণে রাজ্যগুলির রাজস্ব আদায় যে মুখ থুবড়ে পড়েছে তা রবিবার স্বীকার করে নিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কিন্তু সেই সহানুভূতি দেখিয়েও যে দাওয়াইয়ের কথা ঘোষণা করলেন তিনি তাতে স্পষ্ট, কেন্দ্রের ভরসায় হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। নিজের ব্যবস্থা নিজেকেই অনেকটা করে নিতে হবে রাজ্যকে। কেন্দ্র আরও ঋণ নেওয়ার সুযোগ দেবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে তুলনায় বেশি অগ্রিমও মিলবে। কিন্তু তার অনেক শর্ত, অনেক ঝক্কি।

পশ্চিমবঙ্গের কথাই ধরা যাক। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে রাজ্যের পাওনা ও দাবি মিলিয়ে বড় সড় হিসাব দিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, প্রকল্প খাতে বকেয়া টাকা, জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওনা দ্রুত যেন মেটানো হয়। রাজ্যের উপর যে ঋণের বোঝা রয়েছে, তার সুদের উপর অন্তত এক বছরের মোরাটোরিয়াম তথা স্থগিতাদেশ দিতে হবে। সেই সঙ্গে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে রেপো রেটে টাকা ধার নেওয়ার সুযোগ রাজ্যকে দিতে হবে। রাজ্যগুলির এফআরবিএম (ফিসকাল রেসপনসিবিলিটি ও বাজেট ম্যানেজমেন্ট) লিমিট বাড়াতে দিতে হবে। অর্থাৎ মোদ্দা কথা রাজস্ব ঘাটতির সীমা ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করতে দিতে হবে।

রবিবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠকে এ ব্যাপারে প্রশ্নের জবাবে নির্মলা সীতারামন বলেন, “রাজ্যগুলি তাদের এফআরবিএম ‘ম্যানেজ করবে’ সেটা তাদের ব্যাপারে। কেন্দ্র তা কী করে বলবে”। অর্থাৎ স্পষ্ট কথায় কেন্দ্রের দায় নেই।

তা হলে কেন্দ্রের দায় কী?

রবিবার নতুন ঘোষণার মধ্যে নির্মলা জানিয়েছেন, পরিযায়ী শ্রমিকরা বাড়ি ফেরার পর তাদের কাজের সুযোগ দিতে হবে। রাজ্যগুলি একশ দিনের কাজ প্রকল্পে তাঁদের কাজের সুযোগ দিতে পারেন। সেই কারণে একশ দিনের কাজ প্রকল্পে বাজেটে প্রস্তাবিত ৬১ হাজার কোটি টাকার পরিবর্তে এই অর্থবর্ষে ১ লক্ষ ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে।

অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বলছেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের একশ দিনের প্রকল্পে কাজ দেবেন। তাঁদের মজুরি ও আনুষঙ্গিক খরচ পাওয়া যাবে কেন্দ্র থেকে। এমনিতেই একশ দিনের কাজ প্রকল্পে সব রাজ্যগুলির মধ্যে সব থেকে বেশি টাকা কেন্দ্র থেকে পায় পশ্চিমবঙ্গ। সেই রেকর্ড রাজ্যের রয়েছে।

দ্বিতীয়ত, নির্মলা জানিয়েছেন, রাজ্যের মোট উৎপাদনের (স্টেট জিডিপি) সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ পর্যন্ত রাজ্য সরকারগুলি এখন ধার নিতে পারে। তা বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। তবে এমনি এমনি অতিরিক্ত ২ শতাংশ ঋণ পাবে না রাজ্যগুলি। তিন শতাংশের উপর আরও ০.৫ শতাংশ ঋণ পাবে শর্তহীন ভাবে। কিন্তু তার পর আরও ১ শতাংশ ঋণ নেওয়ার জন্য চারটি সংস্কার প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে হবে।

সেগুলি হল- এক দেশ এক রেশন কার্ড স্কিম, ব্যবসা ও লগ্নির পথ প্রশস্ত করতে প্রয়োজনীয়আর্থিক সংস্কার, পুরসভাগুলির আয় বাড়িয়ে স্বনির্ভর করা এবং বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের সংস্কার। এই চারটি সংস্কার কর্মসূচির মধ্যে যে কোনও তিনটি বাস্তবায়িত করতে পারলে তবে রাজ্যের জিডিপি-র আরও ০.৫ শতাংশ ধার হিসাবে নিতে পারবে কোনও রাজ্য।

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, এ ছাড়া রাজ্যগুলিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে অগ্রিম দেয় তার পরিমাণ ৬০ শতাংশ বাড়াতে রাজি হয়েছে। বর্তমানের ১৪ দিনের পরিবর্তে ২১ দিনের জন্য ওভারড্রাফ্টের সুবিধা পাওয়া যাবে।

সন্দেহ নেই, নির্মলার এই কথা থেকে পশ্চিমবঙ্গ খুব বেশি সুরাহার ইঙ্গিত পায়নি। এ ব্যাপারে রাজ্যের শাসক দল ও নবান্ন যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাবে তা এক প্রকার অনিবার্য বলেই ধরে নেওয়া যায়। তা ছাড়া খুব বেশি সংস্কারের পথে হাঁটা অতীতে বাম সরকারের মতো চলতি তৃণমূল সরকারেরও নেই। বরং অনেকেই বলেন, বর্তমান সরকার বামপন্থীদের তুলনাতেও অতিশয় বামপন্থী।

পর্যবেক্ষকদের মতে, অতিরিক্ত ঋণ নেওয়ার জন্য কেন্দ্র যে সব শর্ত চাপিয়েছে তার দুটি দিক রয়েছে। অতিরিক্ত ধার নেওয়ার সুযোগ পেয়ে রাজ্যগুলি যেন খয়রাতি শুরু না করে। অর্থাৎ মেলা, খেলা, উৎসব পার্বনের জন্য অবিবেচকের মতো স্রেফ রাজনৈতিক কারণে খরচ না করে। বা পপুলিস্ট পদক্ষেপের মতো নগদ অনুদান দেওয়ার পথে না হাঁটে। বরং অর্থনৈতিক সংস্কারের পথে হাঁটলে, রাজ্যকে বৃদ্ধির পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তবেই ঋণ পাওয়া যাবে।

পর্যবেক্ষকদের আরও মত হল, কেন্দ্রের আরও একটি কৌশল রয়েছে এর নেপথ্যে। কেন্দ্র যে ধরনের বেসরকারিকরণের পথে হাঁটতে চাইছে তাতে রাজনৈতিক বাধা আসা অবশ্যম্ভাবী। বিশেষ করে কৃষি বিপণন আইনের সংস্কার, শ্রম আইন সংস্কারের মতো বিষয় রাজ্যের অধীনে রয়েছে। কেন্দ্র এখন রাজ্যের সঙ্গে সে সব বিষয়ে দরকষাকষি করতে চাইছে। সংস্কারে অনুমতি দিলে তবেই আর্থিক সাহায্য পাওয়া যাবে। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের সমালোচনা অচিরে শুরু হবে বলেও পর্যবেক্ষকদের অনেকের মত।

রইল বাকি জিএসটি বাবদ ক্ষতিপূরণের টাকা মেটানো। সেই টাকা রাজ্যগুলি কবে পাবে তা নিয়ে এদিন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তার উত্তরে নির্মলা বলেন, “এটা ঠিক যে জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ত্রৈমাসিকের টাকা রাজ্যগুলি এখনও পায়নি”। কিন্তু এটুকু বলেই চুপ করে যান নির্মলা। সেই টাকা কেন্দ্র কবে দেবে তা তিনি স্পষ্ট করে জানাননি।

তবে তিনি বলেছেন, অর্থ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী রাজ্যগুলিকে বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী যে ৪৬,০৩৮ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল তা এপ্রিলেই দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া রাজ্য সরকারগুলির রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে ১২৩৯০ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা খাতে রাজ্যগুলিকে আরও ১১,০৯২ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্র। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক কোভিড মোকাবিলায় রাজ্যগুলিকে ৪১১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।

Previous articleবন্ধুর কোলে ঢলে পড়েছেন ক্লান্ত পরিযায়ী শ্রমিক , ভাইরাল ছবিতে স্তব্ধ গোটা দেশ
Next article৩১ মে পর্যন্ত লকডাউনের মেয়াদ বাড়াল কেন্দ্র

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here