দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বাংলায় দ্বিতীয় মোদী মন্ত্রিসভায় দুজন কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের সদস্য ছিলেন। সেই দুই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এবং দেবশ্রী চৌধুরীকে মন্ত্রিত্ব হারাতে হয়েছে। তার বদলে বাংলা থেকে নতুন চার জনকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটে। আলিপুরদুয়ারের জন বার্লা, কোচবিহারের নিশীথ প্রামাণিক, বনগাঁর শান্তনু ঠাকুর এবং বাঁকুড়ার সুভাষ সরকার।
প্রতিমন্ত্রী করা হলেও বাংলার চার সাংসদকেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হল৷ চার জনের মধ্যে সবথেকে গুরুত্ব পেয়েছেন নীশীথ প্রামাণিক৷ তাঁকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়েছে৷ এর পাশাপাশি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে৷
বাঁকুড়ার সাংসদ সুভাষ সরকারকে শিক্ষা মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে৷
বন্দর, জাহাজ ও জলপথ মন্ত্রকের গুরুত্বপূর্ম দায়িত্ব পেয়েছেন বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর৷ আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বার্লাকে সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে৷
বাংলায় ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন সফল না হলেও এ রাজ্যকে যে এখনও যথেষ্ট গুরুত্বই দিচ্ছেন মোদি- শাহরা, তা চার মন্ত্রীর দফতর বণ্টনের মধ্যেই স্পষ্ট৷ পূর্ণমন্ত্রী না করায় চার সাংসদকে কতটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়, তা নিয়ে রাজ্য বিজেপি-র অন্দরেও সংশয় ছিল৷
মোদি মন্ত্রিসভায় এতদিন বাংলা থেকে দুই প্রতিমন্ত্রী ছিলেন বাবুল সুপ্রিয় ও দেবশ্রী চৌধুরী৷ বাবুল ছিলেন বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী৷ আর দেবশ্রী ছিলেন নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে৷ সেই তুলনায় নতুন চার মন্ত্রীকেই যে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হল তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে নীশীথ ছাড়াও আরও দু’ জন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন৷ তা সত্ত্বেও তাঁর এই দায়িত্ব যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ৷ বিশেষত বাংলা থেকে নির্বাচিত সাংসদকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী করা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেও মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷
১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালে দমদম থেকে জিতেছিলেন বিজেপির তপন সিকদার। বাজপেয়ী সরকারের টেলিকমের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছিল বর্ষীয়ান বিজেপি নেতাকে। তারপর তাঁর দৌত্য মাইলফলক হয়ে রয়েছে।
অনেকে বলেন, প্রতিমন্ত্রীদের বিশেষ কাজ বা গুরুত্ব কোনওটাই থাকে না। এসব আসলে নাম কা ওয়াস্তে। আবার অনেকে এও বলেন, প্রতিমন্ত্রী হলেও ছাপ ফেলা যায়। যদি তিনি নিজেকে সেই উচ্চতায় তুলে ধরতে পারেন। তাছাড়া মূল মন্ত্রকের দায়িত্বে কে থাকছেন তার উপরেও অনেকটা নির্ভর করে।
সেই সময় টেলিকম মন্ত্রী ছিলেন প্রমোদ মহাজন। প্রয়াত প্রমোদের সঙ্গে তপন সিকদারের সখ্যও ছিল। বাজপেয়ী জমানার প্রতিমন্ত্রী তপন সিকদার জোর দিয়েছিলেন বাংলার টেলিফোন এক্সচেঞ্জগুলির সংস্কারে এবং পরিকাঠামো উন্নয়নে। প্রতি শনি-রবিবার তাঁর রুটিন ছিল সেসবের উদ্বোধন।
তপন সিকদার সেই সময়ে বলেছিলেন, শিগগির এমন একটা সময় আসছে যেদিন ভারতে রিক্সাচালক, অটো চালকের হাতে মোবাইল থাকবে। অনেকে সেসময় এ নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করেছিলেন বটে। কিন্তু এখন তা বাস্তব।
একথা ঠিক যে তপন সিকদার ছিলেন রাজনৈতিক ভাবে উচ্চমার্গের। অন্যদিকে প্রমোদ মহাজনও ছিলেন উত্তর আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির। ফলে তাঁদের তালমিল হয়েছিল। পর্যবেক্ষকদের মতে, শুধু মোবাইল সংযোগ নয়, ল্যান্ড লাইন যোগাযোগেও বড় অগ্রগতি ঘটেছিল।
অনেকের মতে, বাবুল এবং দেবশ্রী কেউই নিজেদের সেই উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারেননি। সে কারণেই তাঁদের ছেঁটে ফেলা হয়েছে। এখন প্রশ্ন এই চারজন কি পারবেন? অনেক সমীকরণ মেপে তাঁদের মন্ত্রিসভায় নেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের ধারনা এর মধ্যে ভারসাম্যের রাজনীতি রয়েছে। একে তো এই দুই সাংসদ রাজবংশী ও মতুয়া সম্প্রদায়ের। তার উপর দু’জন উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের সাংসদ।
শুধু উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ নয়। পশ্চিমাঞ্চলের প্রতিনিধি হিসাবে সুভাষ সরকারকেও মোদী জায়গা দিলেন ক্যাবিনেটে। এখন দেখার তাঁদের কাজ কর্ম কেমন হয়।