দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ রবিবার ঘুরতে যাওয়ার নির্মল আনন্দ এমন ত্রাসে পরিণত হবে তা কে জানত! বিকেল চারটে থেকে যে আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা, মৃত্যুর হাতছানি, চরম উদ্বেগের সাক্ষী হতে হয়েছে, তার নির্মমতা, ভয়াবহতা যেন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে ত্রিকূটের রোপওয়েতে আটকে পড়া যাত্রীদের ।
বায়ুসেনা উদ্ধার করার পরেও যাত্রীরা যেন এখনও সেই আতঙ্কের প্রহর কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তাঁদের চোখে মুখে এখনও ভয়, কষ্ট। মৃত্যুকে খুব সামনে থেকে চাক্ষুষ করে এলেন তাঁরা। এই আতঙ্ক হয়তো বহুদিন পর্যন্ত থেকে যাবে মনের ভিতর।
না ছিল সাথে পর্যাপ্ত খাবার, না পানীয় জল। যাত্রীরা জানিয়েছেন,পরিস্থিতির জেরে নিরুপায় হয়ে তাঁরা বোতলে প্রস্রাব করে সেটাই খেতে বাধ্য হন! বাঁচার আশা একরকম ছেড়েই দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু ঈশ্বরের মতোই এসে হাজির হয় উদ্ধারকারী দল।
ঘটনাস্থলে থাকা এক ভদ্রমহিলা তো বায়ুসানেকা কৃতজ্ঞতা জানাতে গিয়ে কেঁদেই ফেললেন। চোখের সামনে কীভাবে একজন যাত্রীকে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়তে দেখেছেন তাঁরা, বলতে গিয়ে ভেঙে পড়েন রীতিমতো । আটকে পড়া ট্যুরিস্টরা যেন আশা-ভরসা সমস্ত কিছু ছেড়ে দিয়ে কেবল মৃত্যুর অপেক্ষা করছিলেন। একসময় অন্ধকার নেমে আসে।
উদ্ধার হওয়া এক যাত্রী জানান, যখন রোপওয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে তাঁরা জরুরি নম্বরে ফোন করেন, তখন তাঁদের আশ্বস্ত করা হয়। কিন্তু সময় ক্রমেই পেরোতে থাকে। সমস্ত যাত্রীরা পুজো-প্রার্থনাও করতে শুরু করেন। এদিকে রাত বাড়ছে, সঙ্গে বাড়ছে ভয়।
তবে যাত্রীদের বক্তব্য, এমন কঠিন অবস্থাতেও তাঁরা কর্তৃপক্ষের সাহায্য ও সহযোগিতা পেয়েছেন। পেয়েছেন উদ্ধারকারীদেরও। তবে তাঁরা কেউই দড়ি ধরে নামার মতো দক্ষ ছিলেন না, অসম্ভব একটা ব্যাপার ছিল অনেকের কাছেই। কিন্তু উপায় ছিল না কিছুই।
রবিবার বিকেলে ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের ত্রিকূট পাহাড়ে রোপওয়ের দুটি কেবেল কারের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। ঘটনায় দু’জন ব্যক্তি মারা যান। বায়ুসেনার উদ্ধারকাজ চলার সময়ে আরও দু’জন কপ্টার থেকে ছিটকে পড়ে মারা গেছেন।
দেশের অন্যতম দীর্ঘ রোপওয়ে ত্রিকূটের এই রোপওয়ে। এটি সর্বোচ্চ ৪৪ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ওপর দিকে ওঠে। বাবা বৈদ্যনাথের মন্দির থেকে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই রোপওয়ের বেস। এই রোপওয়েটির ২৫টি কেবিন আছে, প্রতিটিতে চার জন করে বসার ব্যবস্থা রয়েছে।