দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ তর্ক-বিতর্ক চলছেই। করোনার ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে গেছে বলে অনেকদিন ধরেই দাবি করছে রাশিয়া। যদিও এই ভ্যাকসিনকে এখনই মান্যতা দিতে রাজি নয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। মঙ্গলবার আরও এক ধাপ এগিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা করে দিলেন, বিশ্বে প্রথম করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে এলেন তাঁরাই। এই ভ্যাকসিন মানুষের শরীরে সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। তাঁর মেয়েকেও এই টিকা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুতিন।
ভিডিও কনফারেন্সে ভ্যাকসিন তৈরির খবর প্রকাশ্যে এনেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। পুতিন বলেছেন, “আজ সকালেই ভ্যাকসিনের রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেছে। রাশিয়াই প্রথম কোভিড ভ্যাকসিন বিশ্বের বাজারে নিয়ে আসতে চলেছে।”
রাশিয়ায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করছে গ্যামেলিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট। এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হয় ১৮ জুন। ৩৮ জন স্বেচ্ছাসেবককে টিকা দেওয়া হয়। প্রথম পর্যায়ের ট্রায়ালের পরে রাশিয়া জানায় এই ভ্যাকসিন মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারছে। দু’দফায় টিকার ট্রায়াল হয়। দুটি দলে ভাগ করে ভিন্ন ডোজে টিকা দেওয়া হয় প্রাপ্তবয়স্ক স্বেচ্ছাসেবকদের।
তার পরে সরকারি হাসপাতালেই তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানায়, প্রথম দলের সকলের শরীরেই ভাইরাসের মোকাবিলায় প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় হয়েছে। কারও শরীরে টিকার কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এই দলের স্বেচ্ছাসেবকদের ১৫ জুলাই হাসপাতালে থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দলকে ডিসচার্জ করা হয় ২০ জুলাই।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে ঘোষণা করা হয়, টিকার ট্রায়াল সফল হয়েছে। মানুষের শরীরে এই ভ্যাকসিন নিরাপদ ও কার্যকরী। এরপরেই টিকার উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে নানা মহলে। এত কম সময়ের ট্রায়ালে টিকা কীভাবে কার্যকরী বলে ঘোষণা করছে রাশিয়া, সেই নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও।
গ্যামেলিয়া ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টারের ডিরেক্টর আলেকজান্ডার গিন্টসবার্গ বলেছেন, অ্যাডেনোভাইরাসের স্ট্রেন থেকে ভেক্টর ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে। এই টিকা মানুষের শরীরে ঢুকলে কোনও খারাপ প্রভাব ফেলবে না। কারণ দুর্বল ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরির ক্ষমতা নেই। বরং শরীরের বি-কোষ ও টি-কোষকে সক্রিয় করে অ্যান্টিবডি তৈরির প্রক্রিয়াকে জোরদার করবে। ইমিউন সিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।
গ্যামেলিয়ার ডিরেক্টর বলেছেন, প্রথম পর্যায়ের ট্রায়াল শেষ হওয়ার পরে এখনও অবধি ভ্যাকসিনের ‘অ্যাডভার্স সাইট এফেক্টস‘ দেখা যায়নি। কারণ এই ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে যে ‘ভাইরাল পার্টিকল’ দিয়ে সেগুলোকে আগে ল্যাবরেটরিতে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়। তাই এই পার্টিকল শরীরে ঢুকে ভাইরাসের অনুকরণ করবে মাত্র, সংক্রমণ ছড়াতে পারবে না।
সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভ্যাকসিনের কয়েক লক্ষ ডোজ তৈরি হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিখাইল মুরাশকো। আগামী বছরের মধ্যে আরও নানা ডোজে ভ্যাকসিনের ভায়াল চলে আসবে বাজারে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে বলে জানা গিয়েছে।