পুলিশকে আক্রমণ থেকে পথ অবরোধ, বাম ছাত্র-যুবদের আন্দোলনে দিনভর মুখরিত কলকাতা সহ জেলা

0
497

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ মৌলালিতে ছাত্র-যুবদের বিরুদ্ধে পুলিশের উপর হামলার অভিযোগ। ঘটনার জেরে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। রক্তাক্ত হন তালতলা থানার এএসআই। প্রাণ বাঁচাতে এক রেস্তোরাঁয় আশ্রয় নিতে হয় তাঁকে।

নবান্ন অভিযানে আহত বাম যুব নেতার মৃত্যু ঘিরে রবিবার সকাল থেকেই উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। তারই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এদিন মৌলালিতে ভিওয়াইএফআই – এসএফআই -এর জমায়েত কর্মসূচিতে ধুন্ধুমার বাধে। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন বাম যুব কর্মীদের একাংশ। কর্তব্যরত অবস্থায় তালতলা থানার এসআই -কে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ ওঠে। মাথার পিছন থেকে তাঁকে আঘাত করতে দেখা যায় এক বাম ছাত্রকে। টেনে ছিঁড়ে দেওয়া হয় তাঁর উর্দি। রক্তাক্ত অবস্থায় কর্তব্যরত ওই পুলিশ কর্মী প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নেন এক রেস্তোরাঁয়। এসএফআই রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্যকে উত্তেজনক কর্মী-সমর্থকদের সামাল দিতে দেখা যায়। দীর্ঘক্ষণ ওই রেস্তোরাঁর ভেতরেই আটকে থাকেন ওই পুলিশ কর্মী। বাইরে স্লোগান তুলতে থাকেন বাম ছাত্ররা।

যদিও সৃজন ভট্টাচার্যের দাবি, ‘আমাদের জন্যই পুলিশ আজ রক্ষা পেয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ মানুষ খুন করতে পারেন। লজ্জা নেই তাঁদের। এতবড় ঘটনার পর কটাক্ষ করতে এসেছিলেন। উত্তেজিত বাম ছাত্রদের প্ররোচনা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।’ ঘটনায় চরম উত্তেজনা ছড়ায় মৌলালি চত্বরে। এরপরই এজেসি বোস রোড অবরোধ করেন বাম ছাত্র যুব নেতা-কর্মীরা ।

মৌলালির পাশাপাশি বিকেলে ফের উত্তেজনা তৈরি হয় মহম্মদ আলি পার্ক সংলগ্ন পুলিশ মর্গে। মইদুল ইসলাম মিদ্যার ময়নাতদন্তে গড়িমসির অভিযোগে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বাম যাত্র-যুবরা। পুলিশ মন্ত্রী পদত্যাগের দাবিও ওঠে বিক্ষোভ থেকে। কর্মী-সমর্থকদের শান্ত করতে আসরে নামতে দেখা যায় সিপিআইএম নেতা মহম্মদ সেলিমকে। তিনি বলেন, ‘আপনারা শান্ত হন। আপনাদের মানসিক অবস্থা আমরা বুঝতে পারছি। কিন্তু, কোনওরকম প্ররোচনায় পা দেওয়া অনুচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘উর্দি পড়ে পুলিশ শৃঙ্খলা দেখাতে পারেনি, আমরা উর্দি ছাড়াও যথেষ্ঠ শৃঙ্খলাবদ্ধ।’

এদিকে, ৩১ বছরের মইদুল ইসলাম মিদ্যার মৃত্যুর ঘটনায় রহস্যমৃত্যুর মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে লালবাজার। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ১৩ ফেব্রুয়ারি রাত ২টোয় দক্ষিণ কলকাতার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টের সময় হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট দেওয়া হয় শেক্সপিয়ার সরণী থানায়। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।

এদিকে, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, হাঁটুতে গুরুতর চোট ছিল মইদুলের। যদিও অভ্যন্তরীণ কোনও চোটের কথা জানানো হয়নি। ভিসেরা পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হচ্ছে। তারপরেই চূড়ান্ত রিপোর্ট দেবে ময়নাতদন্তকারী দল। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাম সর্মথকেরা। সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘ময়নাতদন্ত হতে কেন এত দেরি হল তা সকলেই বুঝে গিয়েছেন।’ ডিওয়াইএফআই নেত্রী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘পরিকল্পনামাফিক রাষ্ট্রীয় হত্যার শিকার হয়েছেন আমাদের কমরেড। এর জবাব দিতেই হবে।’ ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল করে বিক্ষোভকারীরা এদিন সন্ধ্যায় লালবাজারের দিকে অগ্রসর হন। কিন্তু, সেখানে বাধা পেলে সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউতে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন তাঁরা। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ওই এলাকা। দুর্ভোগের শিকার হন অফিস ফেরত যাত্রীরা।

অন্য দিকে, সোমবার দুপুর থেকে বিকেল, জেলায় জেলায় একাধিক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের কলোনি মোড়ে রাস্তা অবরোধ করা হয়। এদিন সন্ধ্যায় বনগাঁর বাটা মোড়ে যশোররোড অবরোধ করা হয়।পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে রেল অবরোধ করেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। আসানসোলেও রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ দেখান তাঁরা।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বিষয়ে বলেন, ‘‘যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। আমি খবর পেয়েই সকালে সুজন চক্রবর্তীকে ফোন করেছিলাম। প্রয়াতের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রয়েছে। যদি ওই যুবকের পরিবারের লোকেরা চান, তা হলে সরকার আর্থিক সাহয্যের সঙ্গে একজনকে চাকরিও দিতে প্রস্তুত।’’

এদিন ময়নাতদন্তের পর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় ডিওয়াইএফআই দফতরে। সেখানে মইদুল ইসলাম মিদ্যাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। তারপর দেহ রওনা দেয় বাঁকুড়ার উদ্দেশে।

Previous articleমইদুলের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ মমতার, পরিজনকে সরকারি চাকরির প্রস্তাব,ফুঁসে উঠলেন শুভেন্দু বললেন সংগঠিত ভাবে পিটিয়ে মারা হয়েছে বাম যুবকর্মীকে
Next articleসরস্বতী পুজোয় বৃশ্চিকের অর্থলাভ, প্রেমে কার উন্নতি?পড়ুন রাশিফল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here