পুণের সেরামের কোভিশিল্ড টিকা তৈরির কারখানায় আগুন, ঘটনাস্থলে দমকলের ১০টি ইঞ্জিন ,কী অবস্থা ভ্যাকসিন কারখানার, জানুন…

0
726

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আগুন লাগল পুণের সেরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন তৈরির কারখানায়। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে চারপাশ। পাশাপাশি আট থেকে ন’টি বিল্ডিং আছে সেরামের ওয়ার্কশপের। একটিতে ছড়িয়ে পড়েছে আগুন। ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে দমকলের ৯-১০টি ইঞ্জিন। ওয়ার্কশপে স্টোর করে রাখা টিকার ভায়াল নষ্ট হয়নি বলেই এখনও অবধি জানা গিয়েছে।


বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টে নাগাদ সেরামের টার্মিনাল-১ গেটের কাছে আগুন লেগে যায়। সূত্রের খবর, দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আগুন। গলগল করে কালো ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে আসে দমকল। দেশজুড়ে কয়েক লক্ষ টিকার ডোজ সরবরাব করেছে সেরাম। ধাপে ধাপে টিকার ভায়াল পুণে থেকে এসে পৌঁছচ্ছে বিভিন্ন রাজ্যে। এর মধ্যেই সেরামের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের খবর সামনে আসতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। যদিও কোম্পানির তরফে বলা হয়েছে, টিকা তৈরি হয় যে ইউনিটে সেটা অক্ষতই আছে। টিকার স্টোরেজের জায়গাতেও কোনও ক্ষতি হয়নি।

ভারতে শুধু নয় বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন নির্মাতা সংস্থা পুণের সেরাম ইনস্টিটিউট। মঞ্জরি কমপ্লেক্স এলাকায় সেরামের আট থেকে ন’টি ওয়ার্কশপ আছে। সবকটাই বহুতল বিল্ডিং। প্রায় ১০০ একর জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে আছে বিল্ডিংগুলি।  তার কোথাও টিকা নিয়ে গবেষণা হয়, কোথাও টিকার উৎপাদন হয়, আবার ভ্যাকসিন স্টোর করে রাখার আলাদা ইউনিটও আছে। করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক শুধু নয়, অন্যান্য রোগেরও টিকা বানায় ভ্যাকসিন। প্রতিদিনই বিপুল উৎপাদন হয় ইউনিটগুলোতে।

সেরামের কারখানায় আগুন লাগার যে ভিডিওগুলি সামনে এসেছে, তাতে দেখা গিয়েছে একটি বিল্ডিংয়ের ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। আগুন ছড়িয়ে পড়েছে কয়েকটি তলায়। দমকল সূত্রের খবর, আগুন লাগার সময় বিল্ডিংয়ের ভেতরে চারজন লোক ছিলেন। তিনজনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। আর একজনের খোঁজ চলছে। ধোঁয়া এতটাই বেশি, যে উদ্ধারকাজে দেরি হচ্ছে।

আগুন লাগার প্রকৃত কারণ এখনও জানা যায়নি। দমকলকর্মীদের অনুমান, মঞ্জরি কমপ্লেক্স এলাকায় সম্প্রতি কিছু নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। সেখান থেকে আগুন লেগে থাকতে পারে।ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও অ্যাস্ট্রজেনেকার সঙ্গে চুক্তি করে তাদের চ্যাডক্স টিকা ভারতেই তৈরি করেছে সেরাম। দেশে তৈরি এই টিকার নাম কোভিশিল্ড। পুণের ফার্মেই টিকার উৎপাদন হচ্ছে। সেরামের কর্ণধার আদর পুণাওয়ালা জানিয়েছে, মার্চের মধ্যেই কোভিশিল্ড টিকার তিন থেকে চার কোটি ডোজ বিতরণ করা হবে দেশের সবকটি রাজ্যে। এখনই প্রায় ৬০ লক্ষ ডোজ বন্টন করা হয়েছে। বছর শেষের আগেই প্রায় ১০০ কোটি টিকার ডোজ তৈরির বৃহত্তর পরিকল্পনা আছে সেরামের। প্রতিবেশী দেশগুলিতেও কোভিশিল্ড টিকার ডোজ পাঠানো হবে। সে প্রস্তুতিও চলছে। কাজেই এখন প্রতিদিন টিকার বিপুল উৎপাদন হচ্ছে। এমন সময় আগুন লাগার ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। যদিও টিকার উৎপাদনে কোনও প্রভাব পড়বে না বলেই আশ্বস্ত করেছে সেরাম ইনস্টিটিউট।

অপরদিকে, বুধবারই কলকাতায় এসে পৌঁছেছে করোনার টিকা কোভিশিল্ডের ৬৯,৯০০টি ভায়াল (৬.৯৯ লাখ ডোজ)। কিন্তু প্রথম দফার ৬৮,৯০০ ভায়াল নিয়ে টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু করে রাজ্যে কিছুতেই গতি আসছে না টিকা দানে। শনিবার প্রথম দিন ১৫,৭০৭ জনকে টিকা দেওয়ার (টিকাকরণের হার ৭৬%) পর লক্ষ্য ছিল, হার বাড়ানো। কিন্তু সোমবার দ্বিতীয় দিনে (১৪,১১০ /৬৮.১৬%) ও মঙ্গলবার তৃতীয় দিনে (১৩,৬৯৩/৬৮.৪৭%) উত্তরোত্তর কমেছে টিকাকরণ। কো-উইন বিভ্রাট যার বড় কারণ।

পরিস্থিতি শুধরোতে মঙ্গলবার গুচ্ছ সিদ্ধান্তও নিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। তার অন্যতম হল, লক্ষ্য ১০০ জনকে টিকা দেওয়ার হলে তালিকা তৈরি করতে হবে ২০০ জনের। টিকাকরণের আগের দিন দুপুরের মধ্যে সেই সব নাম চূড়ান্ত করে আপলোড করতে হবে কো-উইন পোর্টালে। প্রতি সপ্তাহে কোন চার দিন টিকাকরণ হবে, তা ওই অ্যাপে তুলে ফেলতে হবে আগের সপ্তাহের শেষ দু’দিনে। অফলাইনে কিছু হবে না। স্থানীয় স্তরে নেতা-মন্ত্রী, বিশিষ্টদের অপরিকল্পিত ভাবে টিকাকরণ রুখতে এবং পুরো কর্মসূচিতে গতি আনতেই এমন সিদ্ধান্ত।

স্বাস্থ্যভবনের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, কলকাতা-সহ সারা রাজ্যেই সরকারি ও বেসরকারি টিকাকরণ কেন্দ্রের সংখ্যা টিকাকরণ কর্মসূচির চতুর্থ দিন, শুক্রবার থেকে উত্তরোত্তর বাড়ানো হবে। কলকাতা পুরসভার আরবান হেলথ ক্লিনিকগুলিতেও চারটির বদলে বাড়ছে আরও পাঁচটি কেন্দ্র। এমন অবস্থায় আরও বেশি সংখ্যায় বিরূপ নজির প্রকাশ্যে আসতে বাধ্য। কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘তিন রকম প্রতিক্রিয়া হতে পারে— মাইনর, সিভিয়ার ও সিরিয়াস। মাইনর হলো, অত্যন্ত মামুলি সমস্যা যা বিনা চিকিৎসায় এমনিতেই সেরে যায়। সিভিয়ারের ক্ষেত্রে সামান্য চিকিৎসা দরকার পড়ে। আর সিরিয়াস হল যেখানে টিকা প্রাপককে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় এবং প্রাণসংশয়ের আশঙ্কা থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রথম দু’টি নজর এড়িয়ে যায়। অথচ সেগুলি থেকেও বিপত্তি হতে পারে। সে জন্যই নিরন্তর নজরদারি দরকার। প্রতিটি ঘটনা রিপোর্ট হওয়া জরুরি।’ তিনি জানান, এ বার থেকে প্রতি বুধবার এই কমিটি বৈঠকে বসবে গত সপ্তাহের সব কেস পর্যালোচনা করতে।’

Previous articleকবে করোনা টিকা নেবেন প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীরা জেনে নিন
Next articleনির্বাচনের কাজে নিয়োগ করা যাবে না সিভিকভলান্টিয়ার ও গ্রিন পুলিশদেরকে, জানিয়েছে কমিশন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here