দেশের সময় এয়েবডেস্কঃ পুলওয়ামা জঙ্গি হামলার বদলা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন আগেই৷ সেই সংকল্প নিয়ে শেষবেলায় তখন
সন্ধে নেমেছে সবে রাজধানীতে। পালাম বিমানবন্দরের ভিতরে, বাইরে মানুষের ভিড়। হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রী থেকে চোখে জল নিয়ে শহিদদের শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হয়েছেন সাধারণ মানুষ। সি-১৩০জে এয়ারক্রাফ্ট থেকে একের পর এক নেমে আসছে কফিন। ভারী হয়ে উঠছে চারপাশের বাতাস।
শুক্রবার সন্ধেয় পুলওয়ামা থেকে দিল্লিতে উড়িয়ে আনা হয় ৪০ জন জওয়ানের দেহ। শ্রদ্ধা জানাতে বিমানবন্দরে আগে থেকেই হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন থেকে কংগ্রেস সভাভতি রাহুল গান্ধী, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল-সহ একাধিক নেতা মন্ত্রীরা।
পালামা বিমানবন্দরে শহিদ জওয়ানদের শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ এদিন সাদা কুর্তা-পায়জামা ও কালো চাদর জড়িয়ে পালামা বিমানবন্দরে আসেন৷ শহিদ বেদিতে ফুলের মালা দেন৷ সারি সারি সাজানো জওয়ানদের কফিনে হাতজোড় করে ঘোরেন তিনি৷ সবশেষে নতজানু হয়ে শ্রদ্ধার্ঘ জানান মোদী৷
এদিন বিকালে শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকে বায়ুসেনার বিশেষ বিমানে ৪০ জনেরও বেশি শহিদ জওয়ানদের কফিন নিয়ে আসা হয় দিল্লির পালামা বিমানবন্দরে৷ সেখানে জওয়ানদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজন করা হয়৷ একে একে উপস্থিত হন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজ্যবর্ধন সিং রাঠোর, প্রতিরক্ষামন্ত্র নির্মলা সীতারমন, তিন বাহিনীর সেনাপ্রধান প্রমুখরা৷
বৃহস্পতিবারের হামলার নিন্দায় সোচ্চার হয়েছে গোটা দেশ৷ পাশাপাশি নিহত সেনাদের পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে রাজ্য সরকার৷ এদিন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং তাঁর রাজ্যের শহিদ চার জওয়ানের পরিবারকে ১২ লক্ষ টাকা ও সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক৷ পুলওয়ামার শহিদ পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেছেন৷
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ৩টে নাগাদ জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়কে অন্তত ৩৫০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক ঠাসা একটি স্করপিও সেনা কনভয়ের দু’টি বাসে ধাক্কা মারে। প্রবল বিস্ফোরণের পরে একটি বাসে আগু ধরে যায়। বিস্ফোরণের পর আধাসেনাকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ও গুলি চালায় জঙ্গিরা। ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় অন্তত ৪৪ জন জওয়ানের দেহ। ঘটনার দায় নেয় পাকিস্তানি মদতে পুষ্ট জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ। ঘটনার পরই নিন্দার ঝড় ওঠে দেশ জুড়ে। সেনা মৃত্যুর প্রতিবাদে কঠোর
প্রত্যাঘাত নেওয়া হবে বলে আগাম জানিয়ে দেয় সাউথ ব্লক। এ দিনই মন্ত্রিসভার নিরপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকের পর সোজা ঝাঁসিতে চলে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তার পর সেখানেই খোলা মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি জানান, “পুলওয়ামার ঘটনা নিয়ে দেশের ১৩০ কোটি মানুষের মনে আক্রোশ তৈরি হয়েছে। আমি অনুধাবন করতে পারছি। চিন্তা নেই। কবে, কোথায়, কীভাবে প্রত্যাঘাত হবে তার অনুমতি দিয়ে দিয়েছি সেনা বাহিনীকে।”
এ দিন সকালে নিহত সিআরপিএফ জওয়ানদের গান স্যালুট দেওয়া হয় বদগামে। সেখানে শহিদ সেনাদের কফিন কাঁধে বইতে দেখা যায় রাজনাথকে। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের ডিজি দিলবার সিং-ও কাঁধ দেন রাজনাথের সঙ্গে। শোকের ছায়া দেশ
জুড়ে৷পাশা পাশি শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এ রাজ্যের জেলায় জেলায় পথে নামলেন হাজার হাজার মানুষ, করলেন মোমবাতি জ্বেলে মৌন মিছিল৷ সীমান্ত শহর বনগাঁ, বাগদায় এদিন বিকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত রাজপথে পায়ে পা মিলিয়ে প্রতিবাদ করলেন গর্জে উঠলেন জঙ্গি কার্য কলাপের বিরুদ্ধে।