দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন নিয়ে রাজ্য-কেন্দ্র সংঘাত তুঙ্গে।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগ না দেওয়া নিয়ে এবার মমতাকে দুষলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী৷
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে শুভেন্দু বলেন, ‘অনুতাপের সঙ্গে দেখলাম মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব যেভাবে প্রধানমন্ত্রী, ভারত সরকারকে অপমান করেছেন, সেই নিন্দার ভাষা নেই। আজ সাংবাদিক বৈঠক করে অনেক অসত্য কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ওঁকে স্মরণ করাতে চাই, তিনি অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি সংবিধান নাই মানতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সংবিধানকে রক্ষা করা।
প্রধানমন্ত্রীকে এর আগেও অপমান করেছেন। কোভিড নিয়ে বৈঠকে যোগ দেননি। মুখ্যসচিবকে দিল্লিতে তলব করা নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর পা ধারার কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর পা ধরতে হবে না। সংবিধান মেনে চলুন’। শুভেন্দু বলেন, ‘উনি পশ্চিমবঙ্গকে একটা দেশ ভাবছেন, আর সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী তিনি। এই ভাবনা পাল্টাতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ একটা রাজ্য। উনি সস্তার রাজনীতি করছেন’।
মমতাকে টার্গেট করে শুভেন্দু আরও বলেন, ‘বিরোধী দলনেতাকে অপমান করছেন। নন্দীগ্রামে আমার কাছে হেরেছেন। আপনার দু:খ, যন্ত্রণা আছে। একজন নির্বাচিত বিধায়ককে অপমান করার অধিকার আপনার নেই। আমি যেমন বিরোধী দলনেতা হিসেবে আপনাকে সম্মান জানাব, আপনিও তেমন সংবিধান মেনে চলুন। আপনি ভালো কাজ করলে সহযোগিতা করব’।
অন্যদিকে, নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বলেন, ‘কেন্দ্র সরকারের প্রতিহিংসা পরায়ণ মনোভাব। পিএমও থেকে আমাকে অপমান করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে একাধিক টুইট করা হয়। আমার ও মুখ্যসচিবের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতেই টুইট করা হয়’। অন্যদিকে, মুখ্যসচিবকে বদলির নির্দেশ নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেন মমতা। মোদীর উদ্দেশে মমতা এও বললেন, ‘আপনার পা ধরতেও রাজি’।
মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্রের তলব প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমার প্রতি আমার যদি রাগ থাকে, যদি আপনার পা ধরতে হয়, তাহলে বাংলার মানুষের জন্য তাই করতে রাজি। এই নোংরা খেলা বন্ধ করুন। রাজ্যের সঙ্গে বিনা আলোচনায় কীভাবে বদলি? আলাপনের দোষটা কোথায়? দয়া করে মুখ্যসচিবের চিঠি প্রত্যাহার করুন। মুখ্যসচিবকে দিল্লি তলবের নির্দেশ প্রত্যাহার করুন। মুখ্যসচিবকে কাজ করতে দিন। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় একজন বাঙালি বলে এত রাগ কেন? বাংলার উপর এত রাগ কেন?’
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাকা রিভিউ মিটিংয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘অনুপস্থিত’ থাকায় শুক্রবার অসৌজন্যের অভিযোগ করেছিল কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ সহ একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী টুইট করে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার শর্ত লঙ্ঘন করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এতে ক্ষতি হচ্ছে বাংলারই।
আঠারো ঘণ্টা পর শনিবার তার সবিস্তার জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বলেছেন, এ কথা সর্বৈব অসত্য। বাংলায় ভোটে হেরে যাওয়াটা ওরা হজম করতে পারেনি। তাই পরিকল্পনা মাফিক প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে মিথ্যা কথা ছড়িয়ে আমাকে অপদস্ত করা হচ্ছে।
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় জানিয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীর জন্য আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিলেন। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ব্যাপার তো উল্টো। আমি ও মুখ্য সচিব প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য বলতে গেলে প্রায় রাস্তায় ২০ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলাম। এক সময়ে আমার সিকিউরিটি ডিরেক্টর বিবেক সহায়কে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, প্রধানমন্ত্রী এক ঘণ্টার আগে দেখা করতে পারবেন না।
প্রধানমন্ত্রীর ডাকা রিভিউ মিটিংয়ে কেন তিনি থাকেননি তাও ব্যাখ্যা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমার সুন্দরবন সফর ও দিঘায় প্রশাসনিক বৈঠক আগে থেকে স্থির ছিল। পরে গত পরশু সন্ধ্যায় খবর পাই প্রধানমন্ত্রী আসছেন। প্রথমে বলেছিল, পিএম-সিএম বৈঠক হবে। তার পর রিভাইজ লিস্ট পাঠায়। তাতে দেখি রাজ্যপাল, কেন্দ্রের মন্ত্রী বিরোধী দলনেতা সবাই রয়েছে। এটা পিএম-সিএম মিটিং নয়। অতোগুলো বিজেপি নেতার সঙ্গে আমি একা মিটিং করব কেন?
মুখ্যমন্ত্রী এও প্রশ্ন তোলেন এর আগে প্রধানমন্ত্রী যখন বাংলায় সফরে এসেছিলেন, তখন কেন তা হলে বিরোধী দলনেতাকে ডাকা হয়নি? গত সপ্তাহে গুজরাতে ঘূর্ণিঝড়ের পর সেখানে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কেন তখন গুজরাতে বিরোধী দলনেতাকে ডাকা হয়নি? মমতার কথায়, আসলে সব জায়গায় এক নিয়ম আর বাংলার জন্য মার্শাল আইন। বাংলাকে অপমান করাই ওদের উদ্দেশ্য।
বিজেপি তথা কেন্দ্র তাঁর আচরণ, সৌজন্যের অভাব নিয়ে যে অভিযোগ করেছেন এদিন ঠাণ্ডা গলায় তারও উত্তর দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, সাংবিধানিক ব্যবস্থা যে সৌজন্যের দাবি রাখে তাতে কোনও ত্রুটি আমি রাখেনি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর অন্তত তিন বার তাঁকে বলেছি, স্যার মে আই লিভ নাও..। আসল কথা হল, ওরা যেন তেন প্রকারে আমাকে অপদস্ত করতে চায়। কিন্তু তা সইব কেন? প্রধানমন্ত্রী যদি বলেন ওনার পা দুটো ধরলে বাংলাকে সাহায্য করবেন, তাতেও আমি রাজি আছি। কিন্তু বাংলাকে অপমান করা, আমার অফিসারদের অপমান করা, প্রতিহিংসার রাজনীতি করা এ সব কখনও বরদাস্ত করব না।