পলাশ বনের কথা:শাশ্বতী চ্যাটার্জি
প্রায় তিরিশ বছর আগে আমরা চার বন্ধু পুরুলিয়ার কপিঝুড়িতে যাই বসন্তের টানে।প্রথম কাল-বৈশাখিকে সাক্ষী রেখে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে যখন আমরা কপিঝুড়িতে আমাদেই নির্ধারিত ঘরে গিয়ে পৌঁছাই, তখন পশ্চিমের সূর্য শেষ আবীর ছড়িয়ে দিয়ে টুপ করে ডুব মেরেছে।ঘরের দাওয়ায় সিঞ্চি নামে একজন বছর কুড়ির সাঁওতালি মেয়ে বসে প্রায় ঝিমাচ্ছে।আমাদের শব্দ পেয়ে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে বলে -
- কত দেরি হলো গো বাবুরা।তাড়াতাড়ি ঘর দেখে নাও।ওদিকে বাথরুম।সব জল ভরে রেখেছি।খাবার জল ঘরে কলসিতে আছে।এবার তাড়াতাড়ি বলো রাতে কি খাবে।আমাকে তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরতে হবে গো।
সম্রাট বেশ ভারী গলায় বলে – তুমি সিঞ্চি?
সম্রাট আমাদের মধ্যে সবচেয়ে সুদর্শন।কালো, লম্বা,এক মাথা চুল।নীল চোখ।নীল জিন্সের সঙ্গে কালো টি-শার্ট – ভীষণ সুদর্শন। - হ্যাঁ,জানি গো জানি।বাদল বাবু বলেছে।(বাদল বাবু ওই বাড়ির মালিক)কাল ফোন করে বাবাকে বলেছে যে আপনারা চারজন তিন/চার দিন এখানে থাকবেন।আপনাদের যা দরকার আমাকে বলবেন।এখন বলুন, রাতের জন্য কী বানাবো?
সম্রাট যেন এই সুযোগটারই অপেক্ষা করছিল।ও বলে - কি বানাতে পারবে গো সিঞ্চি সুন্দরী?
- আমি কালো বলে এমন ব্যঙ্গ করার কী দরকার!কী খাবেন বলুন?
সম্রাট – আজ কী খাওয়াতে পারবে বলো?বন মোরগের ঝোল হবে? - না আজ সন্ধ্যা হয়ে গেছে।আলু ঝিঙে কুমড়ো আর পোস্ত আছে।রুটির সঙ্গে কী বানাবো বলুন?
- তাহলে আলু পোস্তই হোক।তবে কাল কিন্তু বন মোরগ চাই।
সকালে উঠে সম্রাটের কোনো খোঁজ নেই। চায়ের জন্য সিঞ্চিকে ডাকতেই ও জানায় ওই লম্বা বাবু তার বাবাকে নিয়ে গেছে বন মোরগ আনতে।আমরা চা খেয়ে বাইরে বেরিয়ে মুগ্ধ হয়ে দেখি পুরো প্রকৃতিটাই চারি দিকে লাল হয়ে আছে।শুধু পলাশ আর শিমুল।পরে মনে পড়েছে,ওই গ্রামটার নাম পলাশ গ্রাম।
সম্রাট ফিরে আসতেই লুচি আলুর দম দিয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে আমরা গেলাম তিন কিলোমিটার দূরে একটা পাহাড়ি ঝরনা দেখতে।শরীর খারাপের দোহাই দিয়ে, সম্রাট থেকে গেলো ঘরে।সিঞ্চির বাবা আমাদের পথ-পরিদর্শক হয়ে গেলো আমাদের সাথে।সেই অপরূপ ঝরনাতে আমরা স্নান সেরে ঘরে ফিরলাম প্রায় দু’টোর সময়।সম্রাট বেশ মেজাজে আছে।
বিকেলে একটু তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পশ্চিমের একটা টিলায় উঠে দেখলাম অপরূপ রক্তিম সূর্যাস্ত।মহুয়ার গন্ধে একটা মাদকতা আছে।তাতে আমরা ভারাক্রান্ত।ঘরে ফিরে সিঞ্চির হাতে বানানো ভেজ পকোরার সাথে চা খেতে খেতে দেখি সম্রাট কোথায় যেন বেরিয়ে গেল।ঘন্টা খানিক পরে দু’তিন বোতল মহুয়া নিয়ে এসে উপস্থিত।তিন চার দিন ওই পলাশ গ্রামে দিব্যি কাটিয়ে দিলাম সিঞ্চির হাতের রান্না আর সম্রাটের সংগ্রহ করা মহুয়া দিয়ে।মহুয়ার একটা উগ্র গন্ধ আছে ঠিকি, কিন্তু সেটা মানিয়ে নিতে পারলে স্বর্গীয় অনুভূতি।
আমরা কিন্তু মাঝে মাঝেই সম্রাটকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না।জিজ্ঞেস করলেই হেসে কথাটা উড়িয়ে দেয়।সিঞ্চির বাবার সাথে সম্রাটের বেশ সম্পর্ক হয়ে গেছে। সিঞ্চির বাবাই এই বাড়ির কেয়ারটেকার।কিন্তু ও সারাদিন নেশায় থাকে বলে এখন সিঞ্চিই দেখাশুনা করে।
গাড়ি বলা আছে।চার দিনের দিন বেলা ১২ টার মধ্যে গাড়ি চলে আসবে।আমরা শেষ দিন ধারে কাছে একটু হাঁটা হাঁটি করছি।সম্রাট আমাদের প্রায় ধমকের সুরেই বলে দিল, আমরা যেন বেলা ১১ টার আগে ঘরে না ফিরি।আমরা সাবধান করলে ও বলে – নো চিন্তা।সব ঠিক আছে।
যখন অজস্র পলাশ শিমুলের লাল পথ পেরিয়ে আমরা বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ ঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি ঠিক তখনই খোলা খোঁপায় শিমুলের ছোটো মালা লাগানো আর গলায় পলাশের একটা সুন্দর মালা পরা সিঞ্চি আমাদের ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে আসে।গলার মালাটা ছিঁড়ে গেছে।আমরা যাওয়ার মুহূর্তে সিঞ্চি এক দৌড়ে ছুটে বেরিয়ে হাসতে হাসতে চলে যায় পলাশ বনের দিকে।সিঞ্চির মুখে এক রাশ আনন্দ। - মহুয়ার একটা বোতল হাতে নিয়ে সম্রাট হাসতে হাসতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।সিঞ্চির বাবা আমাদের খাবার পরিবেশন করে।দরজায় এসে গাড়ি দাঁড়ানোর শব্দ পেলাম।আমরা ব্যাগ হাতে গাড়ির দিকে এগিয়ে যাই।ড্রাইভারের পাশে সম্রাট বসবে।ও এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।একটা মহুয়া গাছের আড়াল থেকে সিঞ্চি ধীরে ধীরে আমাদের কাছে আসে।ওর বাবাও এসে উপস্থিত।সম্রাট একটা পাঁচ শো টাকার নোট ওর বাবার হাতে ধরিয়ে দিলে ওর বাবা গান করতে করতে চলে যায়।সিঞ্চি বলে
- আবার কবে আসবেন আপনারা?
ও সম্রাটের দিকে তাকাচ্ছে না।চোখে লজ্জার আভা।সম্রাট ওর মুখটা দু’হাতে তুলে ধরে বলে – - আমাকে তো আসতেই হবে।আমি যে আমার বসন্তকে রেখে গেলাম তোমার কাছে।
গাড়ি চলতে শুরু করে পাহাড়ের ঢাল ধরে নিচের দিকে।
পুরুলিয়ার কপিঝুড়ি গ্রামে সাঁওতালি কালো মেয়ে সিঞ্চিকে আর ওর গর্ভে বসন্তকে রেখে সদলবলে কলকাতায় ফিরে আসে সম্রাট।পরের দিন অফিসে পৌঁছালেই ওদের এম ডি ওকে ডেকে পাঠিয়ে বলেন,- সম্রাট,পুরুলিয়া কেমন ঘুরলে?
- একদম ঠিক ঠাক স্যার।
- খুব ভালো।
বলেই তিনি ড্রয়ার থেকে একটা বড়ো খাম বের করে সম্রাটের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলেন,- একটা দারুন খবর আছে।কম্পানি তোমাকে প্রমোশন দিয়ে প্রজেক্ট ম্যানেজার করেছে।
খামটা খুলতে খুলতে সম্রাট হাসি মুখে বলে, - থ্যাংক ইউ স্যার।
খাম খুলে চোখ বুলিয়ে বিস্মিত হয়ে বলে,- স্যার,আমাকে তো ব্যাঙ্গালোরে ট্রান্সফার করা হয়েছে।আমি এখন বাড়ি ছেড়ে ব্যাঙ্গালোরে যাবো কী করে?
- না গেলে এই ডেভালপারের পোস্টে আর এই পয়সায় কলকাতায় পড়ে থাকো।কম্পানি সে ক্ষেত্রে মিস্টার রায়কে প্রমোশন দিয়ে পাঠাবে।
- না স্যার আমি তা বলছি না।আসলে – –
- ঠিক করে বল তো পুরুলিয়ার গিয়ে কার মুখ দেখেছিলে?তার ভাগ্যেই হয়তো তোমার এই বিশাল প্রমোশন।স্যালারি ডবলের বেশি হয়ে যাবে।
- স্যার সে তো খুবই ভালো খবর।আসলে – –
- কোনো কথা নয়।সোজা চেয়ারে যাও।ফোনে বাবা মায়ের সাথে কথা বলো।তারপর কাল আমাকে জানাও।তোমাকে কিন্তু সামনের সোমবার ওখানে জয়েন করতে হবে।কাল জানালে আমি শনিবারের ফ্লাইটের টিকিটের ব্যবস্থা করে দেব।
- ও কে স্যার।বাড়িতে কথা বলে দেখি।
- ঠিক আছে।
টেবিলে ফিরে এসেই সম্রাট ওর বাবাকে অফিসে একটা ফোন করে জানতে চায় যে বেলা চারটে নাগাদ বাবা কফি হাউসে আসতে পারবে কিনা!অত্যন্ত জরুরি দরকার।
ঠিক চারটেতে বাবা এসে কফি হাউসে সম্রাটের মুখোমুখি বসে। বলে,- কি ব্যাপার!এতো জরুরি তলব।
- দুটো কথা আছে।একটা খুব আনন্দের খবর আগে বলি।আমার প্রমোশন হয়েছে।প্রজেক্ট ম্যানেজার।তবে আপাতত ব্যাঙ্গালোরে পোস্টিং।
- এটা তো দারুন খবর।খবরটা মা কে জানিয়েছ?
- এখনো বলি নি। বলবো নিশ্চই।
- আরেকটা কথা কী?যার জন্য আমাকে এখানে ডেকে আনলে?
- বলছি বাবা।এই কথাটা তোমাকেই বলতে পারি,কিন্তু মাকে বলতে পারবো না।
- মনে হচ্ছে রহস্য জমে গেছে।
- ওসব রসিকতা ছাড়।
সম্রাট সিঞ্চির সমস্ত ঘটনাটা বাবাকে বলে।ও জানায় যে সিঞ্চি আদিবাসী হলে কি হবে,ও হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করেছে।পরে অবশ্য আর কলেজে পড়া হয় নি।এমন কি শেষের দিনের ঘটনাটাও সম্রাট বাবাকে জানায়।
বাবা কিছু সময় চুপ থেকে কফির কাপে চামচ নাড়াতে থাকে।শেষে বলে,- দেখ, আমি চাই সিঞ্চির যেন কোনো অমর্যাদা না হয়।বাকি ব্যাপারটা তোমার।শুধু এ টুকু বলি,সিঞ্চির অমর্যাদা হলে তোমার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক থাকবে বা।
- বাবা আমিও তো তাই চাই।কিন্তু মা!
- ওটা তুমি বুঝে নাও।
- না বাবা,তাহলে তোমাকে আমি এখানে আসতে বলবো কেন? তুমি কিছু একটা করো।
- আমি! তুমি তো তোমার মাকে জানো।এই খবরে সে কি ভাবে রিয়াক্ট করবে।ঠিক আছে আগে বাড়ি চলো,পরে দেখা যাবে। বেশ রাত করে সম্রাট বাড়ি ফেরে। এগারোটা নাগাদ সবাই খাবার টেবিলে বসে।মায়ের মুখ খুব গম্ভীর।সম্রাট বুঝতে পারছে না যে কিভাবে শুরু করবে!এমন সময় মা বলে,
- আমি তোর পুরুলিয়া ভ্রমণের খবর শুনেছি।একটা কথা স্পষ্ট করে বলি, ঝোকের মাথায় যে ভুল করেছিস,তার প্রায়শ্চিত্ত তোকে নিজেকেই করতে হবে।কিন্তু কোনো কারণেই ওই সাঁওতালি মেয়েকে আমি ঘরে আনতে পারবো না।
বাবা সঙ্গে সঙ্গে বলে,- আমি কিন্তু কোনো মেয়ের উপর অন্যায় সহ্য করতে পারবো না।
- তুমি বাইরে নারীবাদী হও আমার আপত্তি নেই।কিন্তু পরিবারকে সেই আদর্শবাদ থেকে মুক্তি দাও।
- সত্যি করে বল তো অঞ্জলি,যদি এই বোধটা না থাকতো,তাহলে আমাদের এই সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলেরা শুধুই গ্রামে গিয়ে বেলেল্লাপনা করে আসবে?আমাদের ছেলেরা শুধুই লাম্পট্য করবে?তা কিছুতেই হতে পারে না। তুমি একজন নারী হয়ে অপর নারীর এই ক্ষতি হতে দিও না।
- আমার পক্ষে এটা মেনে নেওয়া সম্ভব না।
- তবু সত্যের জন্য, একজন নারীর অধিকার রক্ষার জন্য, এটা তোমাকে মানতেই হবে।
- তুমি এই নিয়ে এতো লাফাচ্ছ কেন।ব্যাপারটা তো তোমার ছেলের।
- দেখো,জীবনে এমন কিছু ভুল থাকে যা সংশোধনের অন্য কোনো পথ থাকে না।এতো দিন আমরা আমাদের ছেলের স্বভাব-চরিত্র,কর্ম-জীবন নিয়ে অহংকার করতাম।আমি বিশ্বাস করি ওর ভালো যেমন আমাদের জন্য ,তেমনি ওর খারাপের জন্যও আমরাই দায়ী।
- সেই খারাপের প্রায়শ্চিত্ত ও যেভাবেই করুক কিন্তু কোনো সাঁওতালি মেয়েকে আমি আনতে পারবো না।
- অঞ্জলি,তুমি সিঞ্চির জায়গায় নিজেকে একবার দাঁড় করিয়ে দেখো।বুঝতে পারবে এইসব নারীর যন্ত্রনা।
- তুমি আমার সঙ্গে ওই সাঁওতালি মেয়ের তুলনা করছ?
- তুলনা করছি না।শুধু দুজন নারীকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি।তোমার নিজের বা তোমার বোনের যদি এমন হতো।আর ছেলেটা যদি প্রত্যাখ্যান করতো।তাহলে তোমার বাবা মায়ের কাছ থেকে যে অভিশাপ সেই ছেলেটি পেত, তুমিকি তোমার ছেলেকেও সেই সরল আদিবাসী মানুষগুলোর অভিশাপের মুখোমুখি দাঁড় করাবে?আমি বাবা হয়ে তা করতে পারবো না
সে কথা আমিও স্বীকার করি।একজন মেয়েকে এভাবে ত্যাগ করা মহা পাপ।কিন্তু কি করে আমি মেনে নি,তাই ভাবছি। - ছেলের অপরাধকে ক্ষমা করে সিঞ্চিকে ঘরে নিয়ে আসো।ওকে মেনে নাও।আমি জানি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষেরা বড়ো ভালো হয়।আমাদের শহুরে সভ্যতা থেকে অনেক দূরে থাকে বলে ওরা সৎ,সরল আর পরিবারের মানুষকে ভালোবাসতে পারে।
- আমি জানি না।তোমরা যা খুশি করো।
- এই তো আমার আদরের ভালো মা।
বলেই সম্রাট মাকে জড়িয়ে ধরে।আনন্দে ওর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।সম্রাটকে দেখে ওর মাও আনন্দে কাঁদতে থাকে। - আমাকে আর ভালো মা হতে হবে না।নিজে একটা সরল গ্রাম্য মেয়ের জীবন নিয়ে খেলা করেছিস ,তখন খেয়াল ছিল না।তুই নিজে কেমন পুরুষ, যে নিজের সংযম রক্ষা করতে পারিস না।
- মা এটা আমার ক্ষমাহীন অপরাধ।জানো সিঞ্চি বার বার করে নিষেধ করেছে।কিন্তু আমার ওই মহুয়ার নেশা!! ওটার জন্যই হয়তো এটা হয়ে গেছে।বিশ্বাস করো আমি অনেক অপরাধবোধে ভুগছি মা।
খুব গম্ভীর মুখে মা বলে, - তুই কবে ব্যাঙ্গালোরে যাচ্ছিস?
- স্যার তো বলেছেন, শনিবারের ফ্লাইটে টিকিট কাটবেন।
- এর মধ্যে তো আর পুরুলিয়া যেতে পারবি না।
- না তা সম্ভব না।
- ঠিক আছে।ব্যাঙ্গালোরে জয়েন করে অন্তত মাস খানিকের মধ্যে দু’চার দিনেই ছুটি নিয়ে কলকাতায় আসতে হবে।তা কি পারবি?
- এখনই তা বলতে পারছি না।তবে স্যারের সঙ্গে কথা বলে দেখবো।কিন্তু কেন এই কথা বলছ?
- আমি আর তোর বাবা ওই কপিঝুড়ি গ্রামের ওই বাড়িতে এক দিনের জন্য বেড়াতে যাবো।সেই ব্যবস্থা তুই আগের থেকেই করে রাখবি।
সম্রাট চেয়ার থেকে উঠে মাকে আবার জড়িয়ে ধরে বলে,- এই না হলে আমার মা।
- তোর এঠো হাত।এখন ছাড়।শুধু তোর বাবার কথায় আমি রাজি হয়েছি।তবে তোকে বলবো ছিঃ! এমন কাজ তুই করতে পারলি।মেয়েটা তোদের রান্না করে দিত।সব দেখাশোনা করতো।
- জানো মা সিঞ্চি হায়ার সেকেন্ডারি পাশ।ওই অজ গ্রামে থেকে ১০ কিলোমিটার সাইকেল করে স্কুলে গিয়ে পাশ করেছে।সেটাকে ছোটো করে দেখো না।
- ওরে বাবা,এখনই সিঞ্চির পক্ষ নেওয়া শুরু করেছিস।
সম্রাটের বাবা বলে, - অনেক রাত হয়েছে।এবার শুয়ে পারো।কাল অফিস যেতে হবে।
ইতিমধ্যে কয়েকবার সম্রাট সিঞ্চির সাথে ফোনে কথা বলেছে।ওকে সাহস দিয়েছে।২৫ দিন ব্যাঙ্গালোরে কাটিয়ে দমদম বিমান বন্দরে নেমে ওরা সোজা চলে যায় পুরুলিয়ার কপিঝুড়ি গ্রামে।
সিঞ্চির বাবা ওদের সাদরে ঘরে নিয়ে যায়।দক্ষিণ খোলা ঘরে মিষ্টি বাতাসে এক রাশ মহুয়ার গন্ধ ঢুকছে ঘরে।ঘরের কোনায় কয়েকটা কাচের গ্লাসে অনেক পলাশ আর শিমুল সাজানো রয়েছে।ঠিক তখনই একটা লাল শাড়ি পরে একটা ট্রেতে চা আর বিস্কিট নিয়ে মাথা নিচু করে সিঞ্চি এসে উপস্থিত হয়। ও চায়ের ট্রে টেবিলে রেখে সম্রাটের বাবা ও মা কে প্রণাম করে।সম্রাটের মা ওর মাথায় আদরের আশীর্বাদী হাত রাখে।