দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দীর্ঘ আইনি যুদ্ধ শেষ হয়েছে শুক্রবার কাকভোরে। ২০১২ সালে দিল্লিতে মেডিক্যাল পড়ুয়া তরুণীকে গণধর্ষণের পর পৈশাচিক কায়দায় তাঁকে খুনের অভিযোগে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে অক্ষয় ঠাকুর, মুকেশ সিং, বিনয় শর্মা এবং পবন গুপ্তকে। তিহাড় জেলের বাইরে উল্লাসে মেতেছিল সাধারণ মানুষ। আর ঠিক তখনই উত্তর চব্বিশ পরগনার কামদুনির সাধারণ প্রশ্ন তুলে দিলেন, আমাদের মেয়েটা বিচার পাবে কবে? আর কতদিন চলবে টালবাহানা?
২০১৩ সালের ৭ জুন। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের কাছে কামদুনিতে ওই গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। । বিএ দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে অপহরণ করে একটি পরিত্যক্ত কারখানার মধ্যে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণের পর তাকে নৃশংস ভাবে খুনের ঘটনা ঘটে। তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে।
প্রথমে মামলার বিচারপর্ব শুরু হয় বারাসত আদালতে। পরে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সেই মামলা কলকাতা নগর-দায়রা আদালতে স্থানান্তরিত করা হয়। ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি অভিযুক্ত মোট আটজনের মধ্যে ছ’জনকে দোষী সাব্যস্ত করে কলকাতার নগর-দায়রা আদালত। তাদের মধ্যে আনসার আলি, সইফুল আলি এবং আমিনুর ইসলামকে ফাঁসির সাজা শোনান বিচারক।
গোপাল নস্কর, ভোলা নস্কর এবং আমিন আলিকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় আদালত। শেখ আমিন ও রফিকুল গাজিকে বেকসুর খালাসের নির্দেশ দেওয়া হয়। এদের মধ্যে গোপাল নস্কর আলিপুর সংশোধনাগারে থাকাকালীন মারা গিয়েছে।
৩১ জানুয়ারি ফাঁসির সাজা ঘোষণার পরেই দোষী সাব্যস্তরা প্রত্যেকেই চলে যায় কলকাতা হাইকোর্টে। তারপর থেকে মামলা চলছে তো চলছেই। ওই মামলার দায়িত্বে রয়েছে রাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি।নির্যাতিতা তরুণীর এক দাদার অভিযোগ, “মামলার শুনানি থাকলেও আদালতে আসেন না সিআইডির আইনজীবী। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। একটার পর একটা তারিখ পিছিয়ে যাচ্ছে শুনানির।” তিনি আরও বলেন, “গত ১১ মার্চও মামলার শুনানি ছিল। কিন্তু সিআইডির বদল হওয়ায় আদালতে হাজির হননি কোনও কৌসুঁলি। স্থগিত হয়ে যায় শুনানি।”
কামদুনির ওই ঘটনার পর সেখানে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে ঘিরেও বেনজির বিক্ষোভের ছবি ধরা পড়েছিল সেই সময়ে। সেই বিক্ষোভের অন্যতম মুখ ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরাগভাজন হওয়া কামদুনির গৃহবধূ মৌসুমী কয়াল এদিন বলেন, “রাজ্যসরকারের অপদার্থতার জন্যই এতদিন ধরে আদালতে মামলা ঝুলে রয়েছে। সরকারের যদি দোষীদের শাস্তি দেওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা থাকত, তাহলে এতদিন সময় লাগত না।”
নির্ভয়ার দোষীদের ফাঁসির পর কামদুনিজুড়ে তাই একটাই প্রশ্ন, আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে?