দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার একমাত্র পাঁচটারা হোটেলে সাংবাদিক সম্মেলন করলেনন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
পদ্মের ত্রিপুরায় থাবা বসাল তৃণমূল কংগ্রেস! তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর প্রথমবার ত্রিপুরায় পা দিয়ে নির্বাচনী যুদ্ধের রীতিমতো দামামা বাজিয়ে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সাংবাদিক বৈঠকে এদিন অভিষেক বললেন, ‘ সবে শুরু ,লড়াই অনেকদূর যাবে। ত্রিপুরার মাটিতে যখন তৃণমূল পা রেখেছে, আগামী দেড় বছরের মধ্যে এই রাজ্যে উন্নয়নের সরকার প্রতিষ্ঠা করব’। মাসে ৩-৪ বার ত্রিপুরা আসবেন বলে জানিয়েছেন অভিষেক।
এদিন ত্রিপুরা বিজেপি-কে নিশানা করে অভিষেক বলেছেন, ‘দেশের মধ্যে অন্যতম প্রসিদ্ধ তীর্থক্ষেত্র ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির। মায়ের পুজো যাতে দিতে না পারি আমায় আটকানো হয়েছে। গাড়িতে রড, লাঠি মারা হয়েছে। কারও হাতে, কোমড়ে, পিঠে চোট লেগেছে। ১০০ মিটার ছাড়া ছাড়া রাস্তা ব্লক করা হয়েছে। কী ভাবে আমায় আটকানো যায়, সেই চেষ্টা চালানো হয়েছে। মায়ের দর্শন করেছি আমি। এভাবে আটকানো যাবে না। বামেরা পারেনি। বিজেপি-তো শিশু। আমরা লোহার মতো। যত তাতাবেন, তত শক্তিশালী হব। আগামী দিনে ত্রিপুরায় উন্নয়নের সরকার তৈরির জেদ আরও বাড়বে। ধমকালে, চমকালে আমরা থামব না। ত্রিপুরায় পথচলা শুরু হল’।
উল্লেখ্য, সোমবার ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে যাওয়ার পথে বিক্ষোভের মুখে পড়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়ি । গাড়িতে লাঠি মারা হয়। বিজেপি-র বিরুদ্ধে গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল কর্মীরা। অভিষেকের গাড়ির কাচ ভেঙে গিয়েছে বলে অভিযোগ। তিনি নিজেও টুইট করেছেন সেই ছবি। মন্দির চত্বরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অভিষেক বলেন, ‘ত্রিপুরার মানুষ বিচার করবেন।’
ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের কাছে চড়িলাং এলাকায় প্রথমে আটকানো হয় অভিষেকের কনভয়। রাস্তায় পোস্টার হাতে বসে পড়ে স্কুলপড়ুয়ারা। ওঠে ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গো ব্যক’ স্লোগান। দেখানো হয় কালো পতাকাও। অভিষেক নিজে গাড়ি থেকে নেমে কথা বলেন পড়ুয়াদের সঙ্গে। তারপর তাঁর রাস্তা ছেড়ে দেওয়া হয়।
এদিনের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংবাদিক সম্মেলনের লাইভ হাইলাইটস :
ত্রিপুরায় আসার পর ‘অতিথি দেব ভব’-র নামে যে কাণ্ড ঘটানো হয়েছে তা আপনারা দেখেছেন।
যে বিজেপি নিজেদের হিন্দু ধর্মের ধারক ও বাহক বলে তারাই আজ আমাকে মায়ের মন্দিরে যেতে বাধা দিয়েছে। কিন্তু মায়ের দর্শন তো আটকানো যাবে না।
সিপিএম পারেনি। বিজেপি তো নিপাট শিশু।
আর আমরা সিপিএম নই যে ধমকালে চমকালে ভয় পেয়ে যাব। আমাদের যত তাতাবে তত আমাদের সংগঠনের শ্রীবৃদ্ধি হবে।
যে ভাবে মানুষ আশীর্বাদ করেছেন আজ, তা অভূতপূর্ব।
যারা গণতন্ত্রের বড় বড় কথা বলে তাদের রাজত্বে গণতন্ত্রের কী হাল দেখা যাচ্ছে। আমি সাংসদ। আমার উপর এই হামলা যদি হয় তাহলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা বোঝা যাচ্ছে।
আজকে তো সবে শুরু। লড়াই অনেক দিন চলবে। আজকের তারিখটা লিখে রাখুন। দেড় বছর পর ত্রিপুরায় তৃণমূলের সরকার হবে। পারলে বিপ্লববাবুরা আটকে নেবেন।
বাংলার উন্নয়ন মডেল হবে ত্রিপুরায়। বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুয়ারে সরকার নিয়ে গিয়েছেন। আর ত্রিপুরায় বিজেপি সরকার দুয়ারে গুণ্ডাবাহিনী।
সিপিএমের ২৫ বছর আর বিজেপির সাড়ে তিন বছর—২৮ বছর ত্রিপুরা পিছিয়ে গিয়েছে।
আমি বিপ্লববাবুকে দোষ দিই না। ওঁকে বলির পাঁঠা করা হয়েছে। উনি দিল্লির তল্পিবাহক। দিল্লি থেকে যে বোতাম টিপবে সেই চ্যানেলই চলবে।
বাংলা আর ত্রিপুরার মানুষ ধমকানি চমকানিতে ভয় পান না।
যারা সিপিএমকে সরিয়ে অনেক আশা নিয়ে বিজেপিকে এনেছিল, তাঁরা বুঝতে পারছেন, বিজেপিকে ভোট দেওয়া আর খাল কেটে কুমির আনা এক।
আমি এখানে সরকার ভাঙতে আসিনি। দিল্লির নেতারা বাংলায় পা রেখেছিল দল ভাঙাতে। আমরা পা রেখেছি ত্রিপুরার হৃত গৌরব ফিরিয়ে দিতে।
যদি তৃণমূলের কোনও অস্তিত্ব না থাকে তাহলে আমার উপরে হামলার কারণ কী? ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর বিবেক বোধ থাকলে ইস্তফা দেওয়া উচিত।
১৫ দিনের মধ্যে ফের আসব। রাজ্য কমিটির পদাধিকারীদের নাম ঘোষণা করব। এই বছর ডিসেম্বরের মধ্যে ত্রিপুরার ৩৩২৪টি বুথে সংগঠন গড়ব।
বিপ্লববাবুকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছি, পারলে আটকে নেবেন।
যে ত্রিপুরায় এত শিক্ষিতের হার সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী আজকে হাসির খোরাক। বলছেন, মহাভারতের সময়ে ইন্টারনেট ছিল।
বিজেপি ভোটের আগে বলেছিল, মিসডকল দিলে চাকরি হবে। কোথায় গেল সেই প্রতিশ্রুতি? ক্ষমতা থাকলে সাংবাদিক বৈঠক করে জবাব দিন।
কেন ত্রিপুরায় বেকারত্ব বাড়ছে? কেন নারী সুরক্ষা তলানিতে? কেন আইনশৃঙ্খলার এই দশা?
ভোটের আগে বলেছিল ডবল ইঞ্জিন সরকার হবে। কী পেয়েছেন ত্রিপুরার মানুষ? ডবল ভাঁওতার সরকার।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলায় এসে বলতেন ২০০টি আসন জিতবেন। গোটা দেশ দেখে নিয়েছে কী ভাবে তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপিকে ল্যাজেগোবরে করে হারিয়েছে।
ত্রিপুরায় ৬০টি আসন। বিজেপি পারলে পায়ের তলার মাটিটা সামলে রাখুক। মুখ্যমন্ত্রীকে বলব, ভাল প্রিন্টিং প্রেস দেখে রাখুন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্যাডটা ছাপিয়ে রাখুন।
যে বা যারা ভাববে আমি আজকে মিটিং করে চলে যাব তারা ভুল ভাবছে। বিজেপির দিল্লির নেতারা যত বার আসবে আমি তাঁর পাঁচ গুণ বেশি বার আসব।
মানুষ যে ভাবে আশীর্বাদ করেছে তাতে বিজেপি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
১৫ দিন পর আবার আসব। যত ইচ্ছে বাঁশ, লাঠি মজুত করে রাখুন।
ত্রিপুরায় কেউ ভাল নেই। সকলে অত্যাচারিত, বঞ্চিত লাঞ্ছিত।
সরকারে আসার পর লেনিনের, কার্ল মার্ক্সের মূর্তি ভেঙেছিল। বাংলায় ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসার পর কটা মূর্তি ভাঙা হয়েছিল? কটা সিপিএমের পার্টি অফিস ভাঙা হয়েছিল?
ত্রিপুরার পঞ্চায়েতে কী হয়েছিল? কত শতাংশ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল?
আজকে বিজেপির বিদায় ঘণ্টা বেজে গিয়েছে। বিজেপির খেলা শেষ। ত্রিপুরার মা-মাটি-মানুষের খেলা শুরু।
আমি রাস্তায় কোথাও দেখলাম না সিপিএমের একটা পতাকা আছে। আসলে বিরোধী নেই বলে ত্রিপুরায় বিজেপি এত অত্যাচার করছে।
কেন ত্রিপুরার মানুষকে বাংলায় চিকিৎসা করাতে যেতে হয়? কী করছে ডবল ইঞ্জিন সরকার?
ত্রিপুরায় অচ্ছে দিন এসেছে? বিপ্লব দেব, নরেন্দ্র মোদীদের অচ্ছে দিন এসেছে। সাধারণ মানুষের নয়।
গ্যাসের দাম, পেট্রল-ডিজেলের দাম, সরষের তেলের দাম, রান্নার গ্যাসের দাম কত?
আজ থেকে ত্রিপুরার লড়াই শুরু হল। লক্ষ্য ২০২৩, লক্ষ্য এবার ত্রিপুরা।