দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনা সংক্রমণ এড়াতে শহরতলির লোকাল ট্রেন পরিষেবা পুনরায় চালু করার জন্য দু’টি হাতিয়ারের কথা ভাবছে রেল। ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং স্মার্টফোনে টিকিট ক্রয়। সব কিছু ঠিক থাকলে পুজোর কয়েক সপ্তাহ আগেই লোকাল ট্রেন পরিষেবা শুরু হতে পারে বলে রেল সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে।
মেট্রো চালুর পর রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করেই চালু হবে লোকাল ট্রেন। যাত্রীদের চাহিদা থাকলেও, দূরপাল্লার ট্রেনের ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকারের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। শুক্রবার ভার্চুয়াল সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা জানান দক্ষিণ–পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার সঞ্জয়কুমার মহান্তি। তিনি জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট অফিসারদের সঙ্গে শিগ্গিরই বৈঠকে বসবেন পূর্ব ও দক্ষিণ–পূর্ব রেলের প্রতিনিধিরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই তাঁরা চালু করতে চান লোকাল ট্রেন। তাঁর আশা, দুর্গাপুজোর আগেই শহরতলিতে ট্রেন পরিষেবা চালু করা যাবে।
যাত্রীদের প্রত্যাশাপূরণই তাঁদের লক্ষ্য। শুক্রবার সাফ জানালেন দক্ষিণ–পূর্ব রেলের জিএম। তবে এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই পা ফেলতে চান তিনি। জানালেন, রাজ্য সরকারের চিঠি পাওয়ার পর থেকেই সংশ্লিষ্ট অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তবে মেট্রো চালুর পর পূর্ব রেল আর রাজ্য সরকারের সঙ্গে বৈঠক করে পুরো বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন।
বৈঠক শিগ্গিরই হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। মহান্তি জানান, ধীরে ধীরে রেল পরিষেবা স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে। দুর্গাপুজোর আগেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। ইতিমধ্যেই দক্ষিণ–পূর্ব রেল একটি রাজধানী এক্সপ্রেস–সহ ১৪ জোড়া স্পেশ্যাল ট্রেন চালাতে শুরু করেছে। তঁার আশা, যাত্রীদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে আরও ট্রেন চালু হবে। তবে এ ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকারের ছাড়পত্রকে বাড়তি গুরুত্ব দেন তিনি। যৌথ পরিকল্পনা করেই ভিড় নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দিচ্ছে রেল।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তাঁর ইঙ্গিত, মেট্রোর মতো রেলের টিকিট–ব্যবস্থায় কোনও পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা কম। তবে যাত্রীদের বর্তমান পরিস্থিতিতে ভিড় এড়াতে ডিজিটাল টিকিট কাটার পরামর্শ দেন তিনি। জিএম জানান, কম যাত্রীর কারণে কোনও স্টেশন বন্ধ করার পরিকল্পনা দক্ষিণ–পূর্ব রেলের নেই। দক্ষিণ–পূর্ব রেলের তরফে এদিন সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয় পণ্য পরিবহণে।
ভারতের রেল–মানচিত্রে অবশ্য তাঁরা ‘লোডিং রেল’ নামেই পরিচিত। মহান্তি জানান, লকডাউনের প্রথম দিকে পণ্য পরিবহণ সাঙ্ঘাতিক ভাবে হ্রাস পায়। তবে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে প্রথম দশ দিনে গত বছরের তুলনায় পণ্য পরিবহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। লকডাউনের মধ্যে দক্ষিণ–পূর্ব রেল নিজেদের পরিকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। গতিও বেড়েছে ট্রেনের। বাংলাদেশেও পণ্য রপ্তানিতেও গুরুত্ব দেন তিনি। ভার্চুয়াল সাংবাদিক সম্মেলনটি পরিচালনা করেন দক্ষিণ–পূর্ব রেলের সিপিআরও সঞ্জয় ঘোষ।
অতিমারির আবহে প্ল্যাটফর্ম এবং ট্রেনের কামরায় ভিড় নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি টিকিট কাউন্টারে ভিড় সামলানোর বিষয়টিও ভাবাচ্ছে রেলকে। কাউন্টারগুলিতে ভিড় ঠেকাতে না-পারলে যাত্রীদের পাশাপাশি রেলকর্মীদের মধ্যেও দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা। তাই অসংরক্ষিত শ্রেণির টিকিট কাটার জন্য রেলের নিজস্ব অ্যাপ ‘ইউটিএস অন মোবাইল’ (আন-রিজার্ভড টিকিটস অন মোবাইল) ব্যবহারের উপরে জোর দেওয়া হতে পারে। ওই অ্যাপের ব্যবহার আগের তুলনায় বাড়লেও এখনও অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কাটতে ইচ্ছুক যাত্রীর সংখ্যা খুবই কম। এই অবস্থায় ওই অ্যাপের প্রয়োগ বাড়লে যাত্রীদের কাউন্টারে দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করার প্রয়োজন হবে না। বেশি সংখ্যায় টিকিট কাউন্টার খোলা রাখার জন্য রেলের উপরে চাপ কমবে। কমবে সংক্রমণের আশঙ্কাও।
তবে এই ব্যবস্থাকে এখনই চূড়ান্ত বলতে চাইছেন না রেলকর্তারা। কলকাতা মেট্রো ছাড়াও মুম্বই, বেঙ্গালুরুর মতো যে-সব শহরে এখন লোকাল ট্রেন চলছে, সেখানকার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চাইছেন তাঁরা। রেলের স্টেশনগুলি মেট্রোর মতো চার দিক ঘেরা এবং সুরক্ষিত নয়। ট্রেন-পিছু যাত্রীও অনেক বেশি।
সর্বত্র যে রক্ষী মোতায়েন করা সম্ভব নয়, রেলকর্তারাও তা মেনে নিচ্ছেন। ফলে মেট্রোর ভিড় নিয়ন্ত্রণের প্রযুক্তি কতটা অনুসরণ করা যাবে, সেই বিষয়ে সংশয় আছে। তবু করোনার মধ্যে পরিষেবা চালু করার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি রেলকে ভাবাচ্ছে।
লকডাউনের জেরে পণ্য পরিবহণে একটানা মন্দা চলার পরে অগস্ট থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে বলে জানান দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার মহান্তি।