দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ একুশের ভোটের আগে গেরুয়া শিবির যে তৃণমূল ভাঙানোর চেষ্টা করতে পারে সেই গুঞ্জন অনেকদিন ধরে রয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। ঠিক যে ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের উন্নয়ন দেখে গত পাঁচ বছরে কংগ্রেস ও সিপিএমের কিছু বিধায়ক, কাউন্সিলর, পঞ্চায়েত সদস্য অনুপ্রাণিত হয়েছিল, তেমন ভাবেই অনেকে নাকি মোদী সরকারের উন্নয়ন দেখে মুগ্ধ!
এ সব নিয়ে নানান মুখ ও ব্যক্তিকে ঘিরে জল্পনাও রয়েছে বিস্তর। তবে এ বার বড় দাবি করে বসলেন ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং।
শনিবার অর্জুন সংবাদমাধ্যমের সামনে অর্জুন বলেন, “তৃণমূলের পাঁচ জন সাংসদ বিজেপিতে আসতে চলেছেন।” তাঁর কথায়, “ক্যামেরা সরিয়ে নিলেই দেখবেন সবার আগে দাঁড়িয়ে রয়েছেন সৌগতদা।” অর্থাৎ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়।
সৌগত রায় এক সময়ে কংগ্রেসে ছিলেন। পরে তৃণমূলে যোগ দেন, কেন্দ্রে প্রতিমন্ত্রীও হন। ইদানীং শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দৌত্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর উপর ভরসা করছেন বলে খবর। তা ছাড়া বিজেপিকে রাজনৈতিক মোকাবিলায় প্রবীণ ও তর্কবাগীশ সৌগতবাবুকে এগিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অর্জুনের কথা শুনে সৌগতবাবু অবশ্য রাগেননি। এক প্রকার অভিব্যক্তি ছাড়াই বলেছেন, “রাজনীতি ছেড়ে দেব, মরে যাব, তাও বিজেপিতে যাব না।” আশুতোষ কলেজের পদার্থবিদ্যার প্রাক্তন অধ্যাপক সৌগতবাবু আরও বলেন, “অমিত মালব্যরা এসব শিখিয়ে যাচ্ছেন আর অর্জুন এসব আজগুবি কথা বলছেন।”
রাজনীতির একটি সূত্রের মতে, এটা ঠিক সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সৌগত রায়ের উপর বিজেপির নজর রয়েছে। গেরুয়া শিবিরের আগ্রহ রয়েছে, এঁদের যদি বিজেপিতে সামিল করানো যায়। কিন্তু এও ঠিক, সুব্রত মুখোপাধ্যায়-সৌগত রায়রা বরাবর কংগ্রেস ঘরানার রাজনীতি করেছেন। বিজেপি সাম্প্রদায়িক দল বলে সমালোচনা করেছেন। ফলে রাজনীতির সায়াহ্নে পৌঁছে তাঁরা কোনও ভাবেই মতাদর্শ বদলাবেন না মত তাঁদের ঘনিষ্ঠদের।
তা হলে প্রশ্ন, অর্জুন বেছে বেছে সৌগত রায়ের নামটাই বললেন কেন?
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, হতে পারে অর্জুনরা ঘেঁটে দিতে চাইছেন। তৃণমূলের নিচুতলার মধ্যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস তৈরি করার চেষ্টা করছেন। রাজনীতিতে এমনটা আকছার হয়। এই যেমন কিছুদিন আগে খবর চাউর হয়েছিল যে মুকুল রায় ফের তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন। অনেকেই বাস্তব-অবাস্তব জ্ঞান না করে সে সব প্রায় বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন।
এ বার দ্বিতীয় প্রশ্ন, তা হল তৃণমূলের কোনও সাংসদের যদি বিজেপিতে যেতেই হয়, তা হলে এখনই কেন যাবেন! কারণ, এখন কোনও সাংসদ দল ছাড়লে তাঁর সাংসদ পদও চলে যাবে। সদ্য গত বছর লোকসভায় জিতেছেন। পাঁচ বছর মেয়াদ রয়েছে। ফলে এক্ষুণি কেন!
জবাবে গেরুয়া শিবিরের এক নেতা পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলেছেন, এই যে বাংলায় কত এম বিধায়ক খাতায়কলমে কংগ্রেস ও সিপিএমে থেকেও তৃণমূলের ঝাণ্ডা নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছেন, তেমনই করবেন। তাঁদের বিধায়ক পদ যেমন যায়নি, তেমনই ওঁদেরও সাংসদ পদ যাবে না।