জ্যোতিপ্রকাশ ঘোষ: টানা লকডাউনের জেরে দূষণের মাত্রা বেশ খানিকটা কমেছিল গত কয়েক মাসে। এই আবহে উত্তর২৪পরগনার সীমান্ত লাগোয়া গ্রামগুলিতে বেশ কিছু দিন ধরেই পরিযায়ী পাখিরা আসতে শুরু করেছিল। দুর্গাপুজোর পর থেকেই প্রচুর পরিমাণে পাখি আসছে।শীতের অতিথিরা এ বার একটু তাড়াতাড়িই আসতে শুরু করেছে। তাদের ঘিরে স্থানীয় মানুষের উৎসাহও প্রচুর।
ইতিমধ্যেই উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার গাইঘাটা ব্লকের ঝাউডাঙা বাজার প্বার্শস্থ রামনগর পঞ্চায়েতের পিপলি গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ম্যানগ্রোভের জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে পাখির ঝাঁক।
লালসা’র স্বীকারে আজ অবলুপ্তির পথে গাইঘাটা ব্লকের রামনগর পঞ্চায়েতের পিপলি গ্রামের “পরিযায়ী পাখি”র ঝাঁক:
গাইঘাটা ব্লকের ঝাউডাঙা বাজার প্বার্শস্থ রামনগর পঞ্চায়েতের পিপলি গ্রামে বিলুপ্ত হওয়ার পথে এই সমস্ত “পরিযায়ী পাখি”র ঝাঁক। চোরাশিকারিদের হাতে শয়ে শয়ে পাখির মৃত্যু হচ্ছে প্রতিদিন। পাখি প্রেমীরা জানিয়েছেন প্রশাসনের সহায়তায় এখানে গড়ে উঠতে পারত সুন্দর একটি “পাখিরালয়”। খড়ের মাঠের ব্রিজ পার হয়ে পিপলি গ্রামে ঢোকার মুখে “খড়ের মাঠ” বি.এস.এফ ক্যাম্প। ক্যাম্পের প্বার্শবর্তী জলাভূমিকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু গাছে বাসা বেধেছে এই পরিযায়ী পাখির ঝাঁক। সন্ধ্যা হলেই এই পরিযায়ী পাখিদের কোলাহলে সরগরম হয়ে ওঠে পিপলি গ্রাম।
লকডাউন পরবর্তীকালে এই “পাখিরালয়”টিকে কেন্দ্র করে এলাকায় কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা বাড়ত! “পরিযায়ী পাখি”দের জন্য “পরিযায়ী শ্রমিক”এর পরিবর্তে নিজ এলাকাতেই কাজ করার সুযোগ পেতেন স্থানীয় বেকার যুব সম্প্রদায়। একইসাথে পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন মুকুটে একটি নতুন পালক হিসাবে স্থানও পেতে পারে রামনগর পঞ্চায়েতের “পিপলি” গ্রামের নাম।
অথচ, মনুষত্বকে বিসর্জন দিয়ে কিছু কিছু স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে সামান্য কিছু অর্থের লালসার স্বীকার হতে হচ্ছে এই পরিযায়ী পাখিদের। বিকাল হলেই জলাভূমির ধারে ছুটে যাচ্ছে কিছু “মাংস লোভী” মানুষ। এদের নরম সুস্বাদু মাংসের লোভে ইট বা গুলতি দিয়ে নির্বিচারে মারা হচ্ছে নিরীহ পাখিদের। তারপর পেয়াঁজ, আদা ,রসুন দিয়ে বেশ ঝাল ঝাল করে কষিয়ে নিয়ে চলছে ‘ভুরিভোজ’। অভিযোগ স্থানীয় বাজারে বিক্রিও হচ্ছে এই সমস্ত পাখির মাংস৷হাবড়া, বনগাঁ থেকে অনেকেই কিনছেন এই সমস্ত পাখি ও তার মাংস।
স্থানীয় বাসিন্দা সুধীর বিশ্বাস বলেন চোখে দেখা যায়না কিভাবে প্রতিদিন এতো পাখির নির্মম মৃত্যু,প্রশাসনের তরফ থেকে যদি এখনই কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে এই পরিযায়ী পাখির ঝাঁকটি।
বনগাঁ মহকুমার বিভিন্ন জলাভূমিতে, বাওরেও আসতে শুরু করেছে পরিযায়ী পাখিরা। বাগদার আমডোব, কুড়ুলিয়া, খড়ের মাঠ, বনগাঁর প্রতাপনগর, নতুনগ্রাম বাওর, গাইঘাটার ডুমা, বেড়ির বাওর পাখিদের প্রিয় বিচরণক্ষেত্র। এ বছর বাতাসে হিমেল ছোঁওয়া লাগতেই দেশি পাখির পাশাপাশি মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় দেখা মিলতে শুরু করেছে পরিযায়ীদের।
স্বভাবতই উৎফুল্ল এলাকার পক্ষীপ্রেমী ও ওয়াইল্ড লাইফ আলোকচিত্রীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, বিভিন্ন জাতের হেরন, স্টর্ক, নানা প্রজাতির ওয়াগটেইল, ব্রোঞ্জ উইংড জ্যাকানারদের দেখা মিলছে এবছর।
ল্যাপউইং ও স্যান্ডপাইপারদেরও আনাগোনা শুরু হয়েছে। আর একটু ঠান্ডা পড়লে কটন পিগমি গুজ, অরেঞ্জ হেডেড পোচার্ডদের দেখা মিলতে পারে বলে আশা। যদিও প্রতি বছরের মতো লেসার হুইসলিং ডাক এ বছর প্রথম শোনা গেল শুক্রবার ৷
বনগাঁর এসডিপিও অশেষবিক্রম দস্তিদার নিজেই একজন ওয়াইল্ড লাইফ ফোটোগ্রাফার। তিনি জানিয়েছেন,গাইঘাটার পিপলী গ্রামের পরিযায়ী পাখিদের কথা জানতে পারলাম ‘দেশের সময়’এর প্রতিনিধির কাছ থেকে। ‘‘এ বছর বহু এলাকার জলাভূমিগুলিতে ইতিমধ্যেই পরিযায়ী পাখিরা আসতে শুরু করেছে। এখনও পর্যন্ত অন্যান্য জায়গায় তেমন ভাবে পাখিশিকারিদের দেখা না পাওয়া যায়নি,তবে গাইঘাটার পিপলী এলাকাতেও প্রশাসন নজরদারি চালাবে। চোরাশিকার কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।