চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণাবর্ত, নিম্নচাপের ধাক্কায় ভাসতে পারে দক্ষিণবঙ্গ

0
712

দেশের সময় ওযেবডেস্কঃ বাংলায় ঘূর্ণাবর্ত এখনই পিছু ছাড়ছে না। উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ফের ঘূর্ণাবর্তের পরিমণ্ডল তৈরি হয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, এই ঘূর্ণাবর্ত শক্তি বাড়িয়ে নিম্নচাপের চেহারা নেবে। এর অভিমুখ হবে বাংলার উপকূলের দিকে। স্থলভাগ অতিক্রম করার সময় নিম্নচাপের জেরে তুমুল বৃষ্টি হবে দক্ষিণের জেলাগুলিতে। ২৮ ও ২৯ তারিখ অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি হয়েছে গাঙ্গেয় বঙ্গে।

ঘূর্ণিঝড় গুলাব রবিবার সন্ধ্যায় আছড়ে পড়েছে ওড়িশা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূল অঞ্চলে। সতর্কতা হিসাবে দিঘার হোটেলগুলি পর্যটকশূন্য করার নির্দেশ দিয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু যতটা ভাবা হয়েছিল গুলাবের ততটা প্রভাব পড়েনি এ রাজ্যের উপকূলে। রবিবার বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হলেও সোমবার সকাল থেকে পরিষ্কারই রয়েছে দিঘার আকাশ। তবে মঙ্গলবার থেকে নিম্নচাপ আছড়ে পড়তে পারে বাংলায় এবং তার জেরে বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতেও দিঘা ছেড়ে যেতে পর্যটকদের একাংশ যেমন রাজি নন, তেমনই হোটেল ব্যবসায়ীদের একাংশও প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে হতাশ।

দিঘাকে পর্যটকশূন্য করার জন্য রবিবার দিনভর প্রচার করেছে প্রশাসন। কিন্তু তার পরেও তা জানা ছিল না অনেকেরই। অনেকে পর্যটকই রবিবার দিঘায় এসে প্রশাসনের নির্দেশিকা জেনে হতাশ হয়েছেন। অনেকে প্রশাসনের নির্দেশিকা শুনেও দিঘা ছাড়তে রাজি হননি। কেউ কেউ আবার প্রশাসনের ঘোষণা শুনেই দিঘা ছেড়ে বাড়ির পথে পা বাড়িয়েছেন। কেউ আবার ভাড়া নিয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিতর্কেও জড়িয়েছেন। সব মিলিয়ে সোমবারও চরম উৎকণ্ঠায় দিঘায় থেকে যাওয়া পর্যটকরা।

জেলা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দিঘার হোটেল ব্যবসায়ীরাও। এক দিকে করোনা অতিমারিতে প্রায় দেড় বছর হোটেল ব্যবসা বন্ধ ছিল। এর মধ্যে পুজোর মুখে আচমকা পর্যটকদের জন্য হোটেলের দরজা বন্ধের নির্দেশ জারি হয়েছে। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না করে জেলা প্রশাসন এ রকম সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ক্ষোভ দানা বেঁধেছে ব্যবসায়ী মহলের অন্দরে। যাঁরা ইতিমধ্যেই বুকিং করে এসেছিলেন এবং যাঁরা অগ্রিম বুকিং করেছেন তাঁদের কী হবে তা নিয়েই প্রশ্ন ঘুরছে হোটেল মালিকদের মধ্যে। কিন্তু প্রশাসনের বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না। বিষয়টি নিয়ে রবিবার রাত পর্যন্ত কোনও লিখিত নির্দেশও আসেনি বলে জানিয়েছেন হোটেল মালিকরা।


এই নিষেধাজ্ঞা জারির কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেই সমুদ্রস্নানে নেমে যাতে কোনও রকম দুর্ঘটনা না ঘটে তার জন্যই পর্যটকদের দিঘা ছেড়ে চলে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা শাসক দফতরসূত্রে ৷ তবে নির্দেশে হতাশার সুর ধরা পড়েছে দিঘা-শংকরপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশানের সদস্যদের গলাতেও, তাঁদের কথায়‘‘করোনা আবহে গত দেড় বছর ধরেই হোটেল ব্যবসা কার্যত বন্ধ। তার উপর সদ্য হোটেল মালিকদের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে কর্মীদের এক মাসের বেতন পুজোর বোনাস হিসেবে দেওয়া হবে। দিঘায় যে হারে ভিড় বাড়ছিল এই ঘোষণায় তা এক ধাক্কায় থমকে যাবে। আগাম বুকিং করা পর্যটকদের টাকা ফেরানো নিয়েও সমস্যা হতে পারে। সব মিলিয়ে লোকসানের বোঝা বাড়বে। তবে প্রশাসন নির্দেশ দিলে তা মানতে তাঁরা বাধ্য বলে জানিয়েছেন নিউ দিঘার এক হোটেল ব্যাবসায়ী অরুপ বিশ্বাস। তিনি বলেছেন, ‘‘রবিবার মহকুমা প্রশাসনের তরফে হোটেলগুলি খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার এই মর্মে লিখিত নির্দেশও পেয়েছেন ৷

এদিকে মধ্যপূর্ব ও সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে তৈরি হচ্ছে ঘূর্ণাবর্ত। মায়ানমারের ওপর অবস্থান করবে। তারপর শক্তি বাড়িয়ে নিম্নচাপে বদলে যাবে। মঙ্গলবার এই নিম্ন ক্রমশ এগিয়ে যাবে বাংলার উপকূলের দিকে। সেটি বাংলার উপকূল এলাকায় পৌঁছবে। তার প্রভাবে মঙ্গল ও বুধবার কলকাতা, দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম-সহ দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।

২৭ তারিখ–পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় অতি ভারী বৃষ্টির (৭-১১ সেন্টিমিটার) সম্ভাবনা আছে। হলুদ সতর্কতা জারি হয়েছে উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে।

২৮ তারিখ–ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির (৭-২০ সেন্টিমিটার) পূর্বাভাস পূর্ব মেদিনীপুরের দুই জায়গায়, পশ্চিম মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। জারি হয়েছে কমলা সতর্কতা।

২৯ তারিখ–নিম্নচাপের প্রভাবে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, ঝাড়গ্রাম, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামে অতি ভারী বৃষ্টির  (৭-১১ সেন্টিমিটার) সম্ভাবনা। হলুদ সতর্কতা জারি হয়েছে উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে।

মঙ্গলবার ঘূর্ণাবর্ত নিম্নচাপের চেহারা নিলে তুমুল বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া বইবে উপকূলের জেলাগুলিতে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরে ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে।

হাওয়া অফিস সতর্ক করছে, প্রবল বৃষ্টিতে ভাসতে পারে উপকূলের জেলাগুলি। কলকাতার নীচু এলাকাগুলো ফের জলমগ্ন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

Previous articleছবি তোলার শখ! ক্যামেরা হাতে বেড়িয়ে পড়ুন বনগাঁর পটুয়া পাড়ায়
Next articleহিমাচলে ট্রেকিং এ গিয়ে মৃত্যু উত্তর চব্বিশ পরগনার দুই বাঙালি পর্যটকের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here