ঘূর্ণিঝড় ইয়াস:জেলায় জেলায় পৌঁছে গেল ত্রিপল, শুকনো খাবার, ওষুধ, উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দারা এই নম্বরগুলি সেভ করুন,নেতৃত্বে রাত জাগছেন মমতা

0
1405

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আবহাওয়া শনিবার জানিয়েছিল, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি হয়ে গিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেই নিম্নচাপ আরও ঘনীভূত হয়েছে।

রবিবার বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ সেটির অবস্থান ছিল বঙ্গোপসাগরে পোর্টব্লেয়ারের উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে মাত্র ৫৯০ কিলোমিটার দূরে। এখন তা ক্রমশই উপকূলবর্তী পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার দিকে এগোবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে উপগ্রহ চিত্রে দেখা যাচ্ছে, নিম্নচাপ ঘনীভূত হলেও এখনও ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়নি। আবহাওয়া দফতরের মতে, তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে সোমবার।

সোমবার থেকে মঙ্গলবারের মধ্যে তা ক্রমশই শক্তি বাড়াবে এবং অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নেবে বলে আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা করছেন। আবহাওয়া দফতর এদিন এও জানিয়েছে যে, ২৪ মে অর্থাৎ সোমবার থেকেই উপকূলবর্তী পশ্চিমবঙ্গে জলোচ্ছ্বাস শুরু হয়ে যাবে। তা দেখা যাবে ওড়িশা উপকূলেও। তাই মৎস্যজীবীদের ফিরে আসতে বলা হয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকার মানুষকেও সতর্ক করতে বলা হয়েছে প্রশাসনকে।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতি রুখতে প্রশাসনিক প্রস্তুতি খতিয়ে দেখার জন্য রবিবার উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৈঠকে ঠিক কী কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা জানিয়ে ইংরেজির পাশাপাশি ওড়িয়া ও বাংলায় ট্যুইট করেছেন তিনি। যেখানে তিনি লিখেছেন, ‘সকলের নিরাপত্তা ও কল্যাণ কামনা করি।’

প্রধানমন্ত্রী আরও লিখেছেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ফলে সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতি পর্যালোচনা করা হয়েছে। প্রভাবিত এলাকার বাসিন্দাদের সাহায্য করার জন্য কি কি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা জানানো হয়েছে। নিরাপদ জায়গায় মানুষকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে যাওয়া, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা যাতে বিঘ্নিত না হয় তা নিশ্চিত করার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকার কোভিডে সংক্রমিতদের চিকিৎসায় যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’

ইয়াস-যুদ্ধে জোড়া ফলা নবান্ন ও উপান্ন। দুর্যোগের দু’দিন সেখানে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ের জন্য উপান্নর পাশাপাশি কন্ট্রোল রুম হচ্ছে নবান্নেও। উপান্ন-য় যে কন্ট্রোল রুম তৈরি হচ্ছে তাতে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। মঙ্গল ও বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ওই কন্ট্রোল রুমে থেকে যাবতীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করবেন বলে জানা গিয়েছে নবান্ন সূত্রে।

রাজ্যের সচিবালয় নবান্নের কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম থেকে যাবতীয় প্রস্তুতির ওপর সার্বিক ভাবে নজর রাখা হচ্ছে। আমপানের সময় যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে কাজ করেছিল প্রশাসন। এ বারও সে ভাবে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। রবিবার তাই প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা ব্যস্ত ছিলেন মঙ্গল ও বুধবারের ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলার প্রস্তুতিতে। গত সপ্তাহেই নবান্নের শীর্ষ কর্তাদের এ বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজে প্রতি মুহূর্তের খবর রাখছেন। তিনি নিজেই সবকিছু নজর রাখবেন। আমরা তাঁর নির্দেশেই কাজে গতি বাড়িয়েছি। শুধু বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরই নয়, একাধিক দফতরের সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি জেলাস্তরে বিপর্যয় মোকাবিলার নির্দেশ দিয়েছেন।’’

সাগরের বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রে বসেই রবিবার এক ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নেন। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা দক্ষিণ ২৪ পরগনায় থাকা সুন্দরবন এলাকার মানুষের জীবন জীবিকা রক্ষার কাজ করছি। আশাকরি এই বিপর্যয় থেকে আমরা সুন্দরবনবাসীকে রক্ষা করতে পারব।’’

ঘূর্ণিঝড়ের আগাম আভাস পেয়ে যাওয়া প্রশাসন এ বার অনেক আগে থেকেই আটঁঘাট বাঁধতে শুরু করেছিল। তাই মনে করা হচ্ছে, সোমবারেই বিপর্যয় মোকাবিলা সংক্রান্ত প্রস্তুতিও চূড়ান্ত হয়ে যাবে। সূত্রের খবর, সোমবার নবান্নে এসে দুর্যোগ মোকাবিলার যাবতীয় প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে পরামর্শও দিতে পারেন তিনি। তাই প্রস্তুতি এখনই চূড়ান্ত বলতে নারাজ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।

ঘূর্ণিঝড়ের নাম ‘ইয়াস’ কেন?
এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে (yaas) ইয়াস। বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একেকটি দেশ আগাম স্থির করে রাখে। যেমন ইয়াস নামটি দিয়েছে ওমান।

ইয়াস একটি পার্সি শব্দ। এর মানে হল জুঁই ফুল। তবে নাম যেমন সুমধুর, কাজে তেমন হওয়া সম্ভাবনা মোটেই নেই। বরং অতি তীব্র এই ঘূর্ণিঝড়ের জন্য সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে সরকারের। বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা দুই রাজ্যই নেমে পড়েছে। সেই সঙ্গে নেমে পড়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও।

আমফানের বর্ষপূর্তিতেই ফের চোখ রাঙাচ্ছে আরেক ঘূর্ণিঝড় ইয়াস গতবছরের বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আগে থেকেই তৎপর প্রশাসন। রাজ্যবাসীকে সুরক্ষিত রাখতে  হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে প্রশাসন। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় প্রস্তুতি নিচ্ছে নবান্ন। ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের যাবতীয় ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আশঙ্কা মতো ঝড় আছড়ে পড়লে কী করবেন? কোথায় সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করবেন?

উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দাদের জন্য সমস্ত তথ্য রইল …

৯০৭৩৯৩৬৮২৩, ৯০৭৩৯৪০০৩৯, ৯০৭৩৯৪০০৫৮, ৭৪৯৬০১৫১৪৬, ০৩৩-২৫৮৪-০২৮০, ০৩৩২৫৮৪-৬২৮৭ নম্বরগুলিতে যোগাযোগ করলেই মিলবে সাহায্য

ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের আগে প্রস্তুতি :

যেসব নদীবাঁধ কমজোরি, সেইসব এলাকায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলেছ বাঁধ মেরামতির কাজ। গতবছর মে মাসের প্রবল ঘূর্ণিঝড় আমফানের তান্ডব হাড়োয়া, মিনাখাঁ, সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। নদী বাঁধ ভেঙে ঘটেছিল বিপত্তি। সেই ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তার জন্য মিনাখাঁ আটপুকুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উচিলদহ এলাকায় বিদ্যাধরী নদী বাধের দুর্বল অংশগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই দুর্বল অংশগুলিতে নদীবাঁধ মেরামতির কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই প্রচুর আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। ঝড়ের পর গাছ পড়ে যাতে রাস্তা আটকে না যায় তার জন্য দ্রুত গাছ কাটার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি ঝড়ের পর যাতে টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বিদ্যুৎ সচল রাখা যায় তার জন্যও এই দুই দফতরের অফিসারদের আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আছড়ে পড়ার আগেই বিপর্যয় মোকাবিলায় তৎপর সমস্ত দফতর। বিদ্যুৎ থেকে খাবার-পানীয় জল সমস্ত কিছুরই বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি। যেকোনও বিপদে পড়লে সাহায্যের জন্য তৈরি বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা। হেল্পলাইন নম্বর ০৩৩২৪৪৮-৮০৫১, ০৩৩২৪৪৮-৮০৫২।

জেলায় জেলায় পৌঁছে গেল ত্রিপল, শুকনো খাবার ওষুধ। এ ছাড়াও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীও জেলাশাসকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে দিলেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ খান।

রবিবার দিনভর দফায় দফায় বৈঠক করেছেন তিনি। পরে জাভেদ বলেন, ‘‘প্রতি মুহূর্তের খবর নেওয়া হচ্ছে। আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে জেলাশাসকদের কাছে ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। ত্রিপল, শুকনো খাবার ও পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় কিট দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই জেলাশাসকদের অর্থও পাঠানো হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের পক্ষ থেকে।’’

দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভল্যান্টিয়ারদেরও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘‘বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের পক্ষ থেকে বেশকিছু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভল্যান্টিয়ার রাখা হয় সবসময়। প্রয়োজন হলেই তাঁদের নামানো হয়। সেই ভল্যান্টিয়ারদেরই এ বারের দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি সামাল দিতে ময়দানে নামানো হবে। তাঁদের মূলত পাঠানো হয়েছে, গ্রামীণ এলাকাগুলিতেই।’’

বিপর্যয় মোকবিলা দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, রাজ্যে আসন্ন বিপর্যয়ের মোকাবিলায় বাহিনীর আরও ৫টি দল কাজ করছে। রাজ্যে বর্তমানে যে ২২টি দল কাজ করছে তার মধ্যে কলকাতায় মোতায়েন ১০টি দল। যাঁরা কলকাতা পুরসভার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করছেন তাঁরা। হাওড়ায় মোতায়েন ১টি দল। বিপর্যয় মোকবিলা দফতর সূত্রের খবর, পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে অতিরিক্ত বাহিনীও নামানো হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরে ৫টি, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৯টি এবং উত্তর ২৪ পরগনায় ৭টি দল মোতায়েন রয়েছে।

কন্ট্রোল রুমে থেকে যাবতীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করা হবে বলে জানা গিয়েছে নবান্ন সূত্রে । পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মতো উপকূলবর্তী জেলার প্রশাসনের কর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করে বিপর্যয় মোকাবিলার রূপরেখা প্রস্তুত করছেন।

Previous articleকরোনা বিধি মেনে নাওভাঙা সংস্থার উদ্যোগে বনগাঁয় রক্তদান শিবির
Next articleইয়াস কি আমফানের মতোই শক্তিশালী ? যা জানাচ্ছে আবহাওয়া দফতর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here