কোভিড সুরক্ষাবিধি মেনে মহানগরীতে চাকা গড়াল মেট্রোর

0
456

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ রবিবার নিট পরীক্ষার্থীদের জন্য ছিল বিশেষ পরিষেবা। অবশেষে সোমবার থেকে ফের একবার শুরু হল কলকাতা মেট্রো। ১৭৬ দিন পরে চাকা গড়াল মেট্রোর। নিউ নর্মালে নিয়ম মেনেই মেট্রোতে উঠলেন যাত্রীরা। অনেক দিন পরে কলকাতার লাইফলাইন ফিরে পেয়ে স্বস্তি ফিরেছে যাত্রীদের।

দীর্ঘ পাঁচ মাস পর মহানগরীতে গড়াল মেট্রোর চাকা। পূর্ব ঘোষণা মতো সোমবার সকালে শুরু হয় মেট্রো রেল পরিষেবা। রবিবারই কলকাতার সব কটি মেট্রো স্টেশন স্যানিটাইজ করা হয়েছিল। সোমবার সকাল থেকেই প্রতিটি স্টেশনে কোভিড সুরক্ষাবিধি পালনে মোতায়েন করা হয়েছে নিরাপত্তাকর্মী।

স্টেশনে ঢোকার মুখে সব যাত্রীদেরই সেই সুরক্ষাবিধি মানতে হচ্ছে। ভিতরে ট্রেনের কামরাতেও আসনের মধ্যে লাল চিহ্ন দিয়ে বসার স্থান নির্দেশ করা হয়েছে। মাস্ক ছাড়া মেট্রোয় প্রবেশ নিষিদ্ধ যাত্রীদের সেকথা আগেই ঘোষণা করে হয়েছিল। টিকিটের পরিবর্তে সংস্পর্শ এড়াতে যাত্রীদের জন্য ই–পাস ইস্যু করেছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ।

মেট্রো চালু হওয়াতে খুশি শহরবাসীরা বললেন, যাতায়াত সহজ এবং দ্রুত হওয়ার সঙ্গেই স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি পালনেও মেট্রো তাঁদের কাছে অনেকটাই নিরাপদ। কারণ বাসে অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে সামাজিক দূরত্ব বিধি শিকেয় উঠেছে। সেক্ষেত্রে মেট্রোয় সেই সুরক্ষাবিধি সুষ্ঠুভাবেই পালন করা সম্ভব বলে মনে করছেন যাত্রীরা।

মেট্রো কর্তৃপক্ষের তরফে আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল, মোবাইল অ্যাপে ই-পাস বুক করার পরেই মেট্রো স্ট্রেশনে ঢুকতে পারবেন যাত্রীরা। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা পরিষেবা দেবে মেট্রো। প্রতি ঘণ্টার জন্য একটা করে স্লট ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি স্লটের জন্য আলাদা আলাদা ভাবে টিকিট বুক করতে পারবেন যাত্রীরা।

সোমবার সকালে মেট্রো চালু হলেও রবিবার রাত ৮টা থেকেই রাজ্য সরকারের পরিবহণ দফতরের অ্যাপ পথদিশাতে মেট্রোর টিকিট বুকিং শুরু হয়। যাতে যাত্রীরা ঠিকমতো নিজেদের টাইম স্লট চিহ্নিত করতে পারেন, তার জন্য প্রতিটি স্লটকে আলাদা আলাদা রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। এদিন সকালে যাঁরা যাত্রা করবেন, তাঁরা বেশিরভাগই কাল রাতেই টিকিট বুক করে রেখেছিলেন। সেই ই-পাস নিয়ে সকাল ৭টা বাজতেই বিভিন্ন মেট্রো স্টেশনের বাইরে দেখা গেল যাত্রীদের ভিড়।

মেট্রো স্টেশনগুলিতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে পর্যাপ্ত পুলিশ। স্টেশনের বাইরের দায়িত্ব কলকাতা পুলিশের ও স্টেশনের ভিতরে রয়েছেন আরপিএফ কর্মীরা। এছাড়া মেট্রোর কর্মীদেরও নিয়োগ করা হয়েছে। স্টেশনের বাইরেই প্রথমে ই-পাস পরীক্ষা করে তারপর তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হল ভিতরে। তার আগে অবশ্যই প্রত্যেককে থার্মাল স্ক্রিনিং করে দেহের তাপমাত্রা মেপে নেওয়া হল। মেট্রোয় ঢোকার ও মেট্রো থেকে বের হওয়ার জন্য আলাদা গেট করা হয়েছে।

স্টেশনের ভিতরেও রয়েছে একাধিক নিয়ম। প্রথমে স্যানিটাইজারে নিজেদের হাত ধুয়ে নিতে হচ্ছে যাত্রীদের। তারপরে স্মার্ট গেটে আগের মতোই স্মার্ট কার্ড পাঞ্চ করে ভিতরে ঢুকতে হচ্ছে যাত্রীদের। এই স্মার্ট কার্ড রিচার্জ করতে অবশ্য কিছুটা সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে অনেককে। কারও ব্যালান্স কেটে নিলেও রিচার্জ হয়নি। সবাইকে জানানো হয়েছে, রিচার্জ সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হলে ০৩৩-২২২৬-৪৮১৭ এই নম্বরে ফোন করতে। যাঁরা মোবাইলে একটি অপটু তাঁদেরও সমস্যা হয়েছে রিচার্জ করতে। অবশ্য সবার সমস্যা শান্ত ভাবে শুনে জবাব দিচ্ছেন কর্মীরা।

ঘড়ি ধরে এদিন সকাল ৮টায় শুরু হয়েছে প্রথম মেট্রো। কামরার ভিতরে যে ভালভাবে স্যানিটাইজ করা হয়েছে তা স্যানিটাইজারের গন্ধ থেকেই প্রকট। যাত্রীদের বসার সুবিধার জন্য আসনে ক্রস চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে। ওই ক্রস চিহ্ন দেওয়া স্থানে কেউ বসবেন না। অর্থাৎ সাতজনের সিটে এখন বসতে পারবেন চারজন করে।

এদিন প্রথম দিন হওয়ায় একাধিক স্টেশনে মেট্রো আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা পুরো পরিষেবা খতিয়ে দেখছিলেন। যাত্রীদের কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা সে নিয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছিলেন। প্রথম কয়েক ঘণ্টার যা প্রতিক্রিয়া তাতে মেট্রো পরিষেবা নিয়ে সন্তুষ্ট যাত্রীরা। অফিস টাইমের যাত্রীরা অনেক দিন পরে সহযাত্রীদের দেখাও পাচ্ছেন। যদিও সেই আগের চেনা গল্প, হাসি অনেকটাই কম। সবার মধ্যেই একটা অন্য মানসিকতা কাজ করছে। কিন্তু তারমধ্যেও যেন ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে তিলোত্তমা৷

Previous articleসংসদে বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনেই কোভিড পজিটিভ পাওয়া গেল১৭ জন এমপি’র
Next articleপুজোর শুভেচ্ছা: ইলিশে নিষেধাজ্ঞা তুলে দিল বাংলাদেশ, পেট্রাপোল সীমান্তে ওপার বাংলার ১২টন পদ্মাপারের ইলিশ ঢুকল পশ্চিমবঙ্গে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here