দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শুক্রবার সকালে নিরাপত্তার জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, তখনই মোটামুটি একটা ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। বোঝা গিয়েছিল, পুলওয়ামার ঘটনায় আন্দোলিত সাউথ ব্লক প্রত্যাঘাতের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। শুক্রবার মন্ত্রিসভার নিরপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকের পর সোজা ঝাঁসিতে চলে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তার পর সেখানেই খোলা মঞ্চে দাঁড়িয়ে জানালেন, “পুলওয়ামার ঘটনা নিয়ে দেশের ১৩০ কোটি মানুষের মনে আক্রোশ তৈরি হয়েছে। আমি অনুধাবন করতে পারছি। চিন্তা নেই। কবে, কোথায়, কীভাবে প্রত্যাঘাত হবে তার অনুমতি দিয়ে দিয়েছি সেনা বাহিনীকে।”
এর আগে ২০১৬ সালে উরির সেনা ছাউনিতে হামলা করেছিল সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জইশ ই মহম্মদের চার জঙ্গি। ওই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৭ জন সেনা জওয়ান। উরির সেই ভয়াবহ ঘটনার ১১ দিন পর ভারত-পাক নিয়ন্ত্রণ রেখা টপকে ওপারে গিয়ে সার্জিক্যাল অপারেশন চালিয়ে জঙ্গি শিবির ধ্বংস করেছিল ভারতীয় সেনা। পুলওয়ামার ঘটনার পর দেশের বহু মানুষের রাগ, ক্রোধ, আক্রোশের ইতিমধ্যে বহিঃপ্রকাশ ঘটতে শুরু করেছে। বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের মধ্যে থেকে চাপ বাড়ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপরেও।
ফলে সেই ভাবাবেগ আঁচ করেই প্রধানমন্ত্রীও পদক্ষেপ করতে শুরু করলেন বলে মনে করা হচ্ছে। উনিশের ভোটের আগে একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাসের জন্য এ দিন ঝাঁসিতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই জনসভায় তিনি বলেন, ঝাঁসির মাটি হল বীর বীরাঙ্গনার মাটি। এখানে দাঁড়িয়ে কথা দিচ্ছি, পুলওয়ামায় হত্যালীলার নেপথ্যে যারা রয়েছে, তাদের মাথা যারা, তাদের শাস্তি হবে। কড়ায় গণ্ডায় হিসাব হবে। কেউ ছাড় পাবে না।
এ প্রসঙ্গে এ দিন পাক প্রশাসনেরও তীব্র সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। পাকিস্তানের নাম মুখে না আনলেও তিনি বলেন, “আমাদের পড়শি দেশ ভুলে যাচ্ছে হয়তো বর্তমান ভারতবর্ষ নতুন রীতি ও নতুন নীতির ভারতবর্ষ। নয়াদিল্লি এর পরেও চুপ থাকবে না।”
সাউথ ব্লকের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, সীমান্তের ওপারে প্রত্যাঘাতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি নয়াদিল্লির তরফে কূটনৈতিক দৌত্যও শুরু হয়ে গিয়েছে। যাতে কূটনৈতিক ভাবে গোটা বিশ্বে এক ঘরে হয়ে পড়ে ইসলামাবাদ। সেই কারণে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতীয় দূতও গতকাল থেকেই সক্রিয়।
এ দিন ঝাঁসির সভায় তারও ইঙ্গিত দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে বলেন, “আমাদের পড়শি দেশের খুবই খারাপ অবস্থা। এতটাই গরিব যে হাতে বাটি নিয়ে ঘুরছে। ওদের নীতির জন্যই কোথাও সাহায্যও পাচ্ছে না। ওরা চাইছে ভারতের অবস্থাও খারাপ হোক।”
তবে প্রধানমন্ত্রীর এ হেন পাক-বিরোধী কথায় অনেকে আবার রাজনীতিও দেখছেন। তাঁরা মনে করছেন, পুলওয়ামার ঘটনাকে সামনে রেখে মোদী উনিশের ভোটের আগে জাতীয়তাবাদের পরিবেশ তৈরি করতে চাইছেন। এবং তার থেকে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইছেন।
অবশ্য পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, সে দিক থেকে দেখতে গেলে ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে মুম্বই সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছিল। তখন তো একই ভূমিকা নিয়েছিল নয়াদিল্লি। যদিও প্রতিঘাতের প্রস্তুতি তখন নেওয়া হয়নি। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, নয়াদিল্লি যে প্রতিক্রিয়া এখন জানাচ্ছে সেটা মোদীর পরিবর্তে সরকারে অন্য কেউ থাকলেও সেটাই করতেন। কারণ, সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনার বিরুদ্ধে গোটা দেশের অসন্তোষের আগুন জ্বলছে। প্রত্যাঘাতের দাবিও জোরালো। বরং মোদীর পক্ষেই গোটা ঘটনাটি সমস্যার। বর্তমান সময়ে লিমিটেড ওয়ারফেয়ার বলে কোনও কথা হয় না। ফলে তেমন কিছু হলে ইসলামাবাদ থেকেও জবাব আসবে। দুটি পরমাণু শক্তিধর দেশ এরকম সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে উপমহাদেশে শান্তি পরিস্থিতি ঘেঁটে যেতে পারে। ফলে প্রধানমন্ত্রীকে সে কথাও মাথায় রাখতে হচ্ছে। তবে দেশবাসী যে ফুসছে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই৷ এখন দেখার ভারতীয় সেনাবাহিনী কিভাবে এর প্রতিক্রিয়া দেয়,তারই অপেক্ষায় গোটা দেশ৷