দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ রাতের শহরে দুর্ঘটনার শিকার দুই তরুণ সাংবাদিক। নিহত সাংবাদিকের নাম সোহম মল্লিক। তাঁর সতীর্থ ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ গুরুতর জখম। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি তিনি। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে দক্ষিণ কলকাতার রাস্তা দিয়ে মোটরবাইকে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সোজা একটি গাছে ধাক্কা মারে মোটরবাইকটি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সোহমের। গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ময়ূখকে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত সাড়ে ৩টে নাগাদ মোটরবাইকে যাচ্ছিলেন সোহম এবং ময়ূখ। লর্ডসের মোড়ের কাছে দুর্ঘটনাটি ঘটে। বাইকসমেত রাস্তায় দু’জনকে পড়ে থাকতে থেকে, সেই সময় অনলাইন খাবার ডেলিভারি সংস্থা সুইগির কিছু কর্মী ছুটে আসেন। তাঁরাই দু’জনকে তুলে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে সোহমকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। তড়িঘড়ি সিসিইউ-তে নিয়ে যাওয়া হয় ময়ূখকে। পরে সেখান থেকে মল্লিকবাজারের নিউরো সায়েন্সে স্থানান্তরিত করা হয়। মাথায় গুরুতর চোট পেয়েছেন তিনি। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। ময়ূখের এক সতীর্থের কথায় জানাগিয়েছে , দুর্ঘটনায় ময়ূখের একটি চোখ মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চোখটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা।
পুলিশ জানিয়েছে, সোহম মল্লিক এবং ময়ূখরঞ্জন ঘোষ মোটরবাইকে করে ফেরার সময়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আছড়ে পড়েন রাস্তায়। আনোয়ারশাহ রোডের লর্ডসের মোড়ের কাছেই ঘটে এই মারাত্মক কাণ্ড। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সোহমকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। ময়ূখকে মাথায় গুরুতর চোট নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালের আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয়। আজ বেলায় তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় পার্কসার্কাসের ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সে।
শুক্রবার সাত সকালে এই খবর জানাজানি হতেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে সাংবাদিক মহলে। জানা গিয়েছে, দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরে সদ্য নতুন চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন ময়ূখ। গতকাল রাতে সে চাকরি তিনি ছেড়েও দেন, অন্তত তেমনটাই বলছে তাঁর ফেসবুক পোস্ট। সোহমও ছুটিতে কলকাতায় ফিরেছিলেন, সম্ভবত তাঁরা দু’জনেই নতুন কোনও কাজে যোগ দেওয়ার কথা ভাবছিলেন। এমনটাই জানিয়েছে তাঁদের বন্ধুমহল। সোহম ও ময়ূখের বন্ধুত্বও সুপরিচিত ছিল ঘনিষ্ঠ মহলে।
গতকাল রাতে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক ইমনকল্যাণ লাহিড়ির বাড়িতে গিয়েছিলেন ময়ূখ আর সোহম। ইমন বাবুর ফেসবুক পোস্টেও রয়েছে সে কথা, পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারার কথা লিখেছেন তিনি, সেলফিও পোস্ট করেছেন তিনজনের।
জানা গেছে, সেখান থেকেই ভোর চারটে নাগাদ বেরিয়ে বাইকে করে বাড়ি ফিরছিলেন ময়ূখ ও সোহম। লর্ডসের মোড়ের কাছে বলরাম মিষ্টান্ন ভান্ডারের সামনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাইক দুর্ঘটনা ঘটে। ছিটকে পড়ে যান দু’জনেই। সোহম ঘটনাস্থলেই মারা যান, ময়ূখের অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক। মাথার গভীর চোটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তাঁর দৃষ্টিশক্তি।
সাংবাদিক মহলে তো বটেই, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং দুনিয়াতেও ময়ূখ রঞ্জন বেশ পরিচিত মুখ। নানা বিষয় নিয়ে লেখালেখি করেন ফেসবুকে। করেন বিভিন্ন মানুষের ভিডিও সাক্ষাতকারও। বহু ফ্যান-ফলোয়ারও রয়েছে তাঁর। সোহমও পরিশ্রমী ও উদ্যমী সাংবাদিক হিসেবেই পরিচিত। আচমকা দুর্ঘটনায় হতচকিত সকলে।