দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনা নিয়ে সরকারের বক্তব্য তুলে ধরতেই হবে সমস্ত সংবাদমাধ্যমকে।করোনা ভাইরাসের প্রকোপে দেশ জুড়ে যখন আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে, ঠিক সেইসময় এমন নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট ।
করোনা সঙ্কট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে না পড়ে, তার জন্য প্রতি ২৪ ঘণ্টা অন্তর সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির মাধ্যমে সরকারি পরিসংখ্যান প্রকাশ করতে হবে বলে কেন্দ্রকেও নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত।
লকডাউনের জেরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পরিযায়ী শ্রমিকরা যে হেনস্থার শিকার হয়েছেন, তা নিয়ে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদে এবং বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাওয়ের ডিভিশন বেঞ্চে একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানি চলছিল। সেখানে সরকারের তরফে ভুয়ো খবরের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভুয়ো খবরের জেরেই লকডাউন উপেক্ষা করে পরিযায়ী শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আসেন বলে অভিযোগ করেন তিনি৷
যে সব পরিযায়ী শ্রমিকরা নিজেদের বাড়ি ফিরতে পারলেন না লকডাউনের সময়। এবং সরকারি ত্রাণ শিবিরে আটকে গেলেন তাঁদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার, আশ্রয়, ওষুধ এবং মানসিক স্থিতি ফেরাতে নিজের নিজের ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতাদের পরামর্শ প্রদানের ব্যবস্থা করতে কেন্দ্রকে আদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।
মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতে লকডাউনের ফলে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুরবস্থা নিয়ে আইনজীবী অলখ আলোক শ্রীবাস্তবের জনস্বার্থ মামলার পিটিশের শুনানি ছিল। ভিডিও কনফারেন্সিং–এর মাধ্যমে শুনানি হয়ে প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদে–এর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে। বেঞ্চের অন্য বিচারপতি ছিলেন এল নাগেশ্বর রাও।
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সওয়াল করেন। প্রধান বিচারপতি কেন্দ্রকে বলেন, ‘আপনাদের নিশ্চিত করতে হবে যাঁদের আপনারা আটকে দিলেন তাঁরা যেন ঠিকমতো খাবার, আশ্রয়, চিকিৎসা পরিষেবা পান। আমরা বলতে চাইছি, আতঙ্ক ভাইরাসের থেকে বেশি প্রাণ কাড়তে পারে। আপনাদের কাউন্সেলর লাগবে।
ওঁদের মানসিক স্থিতি ফেরাতে প্রশিক্ষিত কাউন্সেলর এবং সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের শীর্ষ নেতাদের ত্রাণ শিবিরে গিয়ে ওঁদের সঙ্গে কথা বলতে বলুন। ভজন, কীর্তন, নমাজ যা প্রয়োজন সব করুন।’
এরপরই তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টকে আশ্বস্ত করে বলেন, ২৪ ঘণ্টার সব কটি ত্রাণ শিবিরে প্রশিক্ষিত কাউন্সেলর এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়ের গুরুরা পৌঁছে যাবেন। সুপ্রিম কোর্টকে বিস্তারিত স্টেটাস রিপোর্ট পেশ করে তিনি বলেন, অসহায়, পরিযায়ী শ্রমিক এবং দিনমজুর মিলিয়ে এখন ২২,৮৮,০০০ মানুষকে খাবার এবং আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। শেষ আদমসুমারির রিপোর্ট অনুযায়ী দেশের ৪.১৪ কোটি মানুষ ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়েছিলেন। নির্দিষ্ট সংখ্যা জানাতে কেন্দ্রকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করতে আদেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
মেহতা বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ভয়েই পরিযায়ী শ্রমিকরা পালাচ্ছিলেন। কিন্তু এতে আরও সংক্রমণের ভয় ছিল। কেন্দ্র নিশ্চিত করেছে যাতে আর পরিযায়ী শ্রমিকরা বেরিয়ে না পড়তে পারেন।’ মঙ্গলবার সকাল ১১টা পর্যন্ত কোনও পরিযায়ী শ্রমিক রাস্তায় নামেননি বলে আদালতকে জানান মেহতা।
তাঁর আরও দাবি, ‘এপর্যন্ত সন্তোষজনকভাবে সরকার করোনা সংক্রমণের মোকাবিলা করেছে। অন্য অনেক দেশের থেকে আমরা অনেক কড়া পদক্ষেপ নিয়েছি। ভারতে রোগ আসার আগেই আমরা বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দরে থার্মাল স্ক্রিনিং শুরু করেছিলাম।’ যদিও তারপরও দেশে কোভিড–১৯–এর থাবা এড়ানো যায়নি এবং সংক্রমণের সংখ্যা ১৩৫০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। বাড়ছে মৃত্যুও।
বিচারপতি নাগেশ্বর রাও কেন্দ্রকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো খবর রুখতে ব্যবস্থা নিতে আদেশ করেন। প্রধান বিচারপতি মেহতাকে বলেন, ভুয়ো খবর রুখতে কেন্দ্র ব্যবস্থা নেবে বলেছে। কিন্তু সেটা কীভাবে নেওয়া হবে এবং যারা ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছে তাদের শাস্তি দিতে কোনও কড়া আইন আছে কিনা তা সরকারের কাছে জানতে চান প্রধান বিচারপতি।
স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লার একটি রিপোর্ট তুলে ধরে আদালতে তুষার মেহতা বলেন, ‘‘ইচ্ছাকৃত ভাবে হোক বা অনিচ্ছাকৃত ভাবে, সংবাদপত্র, টেলিভিশন এবং ওয়েব পোর্টালগুলি ভুল রিপোর্ট প্রকাশ করলে সমাজের একটা বড় অংশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াবে। গোটা বিশ্ব যখন এই সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়ছে, সেইসময় ভুয়ো খবরের জেরে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়লে বর্তমান পরিস্থিতির পক্ষে তা ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে। এতে গোটা দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’’
সরকারের দেওয়া তথ্যের বাইরে সংবাদমাধ্যমগুলি যাতে কোনও পরিসংখ্যান ছাপতে বা সম্প্রচার করতে না পারে, সে ব্যাপারেও সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ চান তুষার মেহতা। কিন্তু আদালত করোনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীন আলোচনায় হস্তক্ষেপ করতে চায় না বলে সাফ জানিয়ে দেন প্রধান বিচারপতি। বরং নিজেদের রিপোর্টে করোনা নিয়ে সরকারের বক্তব্য এবং পরিসংখ্যান সংবাদমাধ্যমগুলিকে প্রকাশ করতে হবে বলে জানান তিনি।
সেইসঙ্গে সংবাদমাধ্যমগুলিকেও আরও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দেয় আদালত। বলা হয়, যাচাই না হওয়া তথ্য পরিবেশন করে যাতে আতঙ্কের সৃষ্টি না করা হয়, সে ব্যাপারে দায়িত্বশীল হতে হবে সংবাদমাধ্যমকে।