দেশের সময় ওযেবডেস্কঃ বাতিল হয়ে গেল মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কী পদ্ধতিতে দশম এবং দ্বাদশের পড়ুয়াদের মূল্যায়ণ করা হবে তা আগামী ৭ দিনের মধ্যে জানিয়ে দেওয়া হবে। জনমতকে গুরুত্ব দিয়ে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পড়ুয়াদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সে বিষয়টিও দেখতে হবে, জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্য়মন্ত্রী জানান, ‘জনমতকে গুরুত্ব দিয়েই মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক না করার সিদ্ধান্ত। কীভাবে হবে পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন, তা সাতদিনের মধ্যে জানিয়ে দেওয়া হবে।’
একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্ষদ সভাপতি ও সংসদ সভাপতিকে বলেন, পড়ুয়াদের যাদের কোনও অসুবিধে না হয় সেই দিকে নজর রাখতে। তিনি বলেন, ‘মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক-সিবিএসইর মূল্যায়ন যেন একসঙ্গে হয়, তা দেখতে হবে।’
মাধ্যমিক, সিবিএসই, আইসিএসসি সব বোর্ডের মূল্যায়ণ যেন একসঙ্গে করা হয়, সেই কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । গতকালই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হওয়া নিয়ে পড়ুয়াদের অভিভাবকদের মতামত চেয়েছিলেন। সেই মতো এদিন ৩৪ হাজারের কাছাকাছি ইমেল আসে। সেই ইমেলের মতামতের ভিত্তিতেই পরীক্ষা বাতিলের ষোষণা করা হল।
৮৩ শতাংশ মানুষ পরীক্ষা নেওয়ার বিপক্ষে। কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই বাতিল করা হল পরীক্ষা। বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যরাও জানিয়েছেন যে এবছর যেন পরীক্ষা না নেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগেই সিবিএসই এবং আইএসসি পরীক্ষাও বাতিল করে কেন্দ্র।
এর আগে পরীক্ষা না হলে মূল্যায়ন নিয়ে ছ’সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটির পরামর্শ দিয়েছিলেন, উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে হোম অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে পরীক্ষা হতে পারে। অর্থাৎ বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নপত্র স্কুলের মাধ্যমে পড়ুয়াদের বাড়িতে পাঠিয়ে, তার ভিত্তিতে লেখা উত্তর আবার স্কুলেই জমা করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দ্রুত ফলপ্রকাশ সম্ভব। কারণ, স্কুলের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারাই তার মূল্যায়ন করবেন। অথবা ইতিমধ্যে ল্যাবভিত্তিক বিষয়ে যে ৩০ নম্বর ও নন-ল্যাবভিত্তিক বিষয়গুলিতে ২০ নম্বরের প্রজেক্টে পড়ুয়াদের প্রাপ্ত নম্বর স্কুলের মাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদে জমা পড়েছে, প্রয়োজনে রেজাল্ট তৈরির ক্ষেত্রে সেগুলোও বিবেচনা করা যেতে পারে। সবটাই অবশ্য নির্ভর করছে, রাজ্য প্রশাসনের চূড়ান্ত সম্মতির উপর।
মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কী হবে? মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ২০১৯ সালের নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্ট বিবেচনা করে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞ কমিটির মত। অথবা নবমের প্রথম সামেটিভ, ষাণ্মাসিক এবং বার্ষিক পরীক্ষার গড় করে ৫০ শতাংশ ওয়েটেজ আর এ বছর মাধ্যমিকের প্রজেক্টে বরাদ্দ ১০ নম্বরকে ভিত্তি করে পড়ুয়াদের যে নম্বর দেওয়া হয়েছে, তার উপরে ৫০ শতাংশ ওয়েটেজ দিয়ে একযোগে রেজাল্ট তৈরি করা যেতে পারে। তবে সবই চূড়ান্ত সম্মতির জন্য প্রস্তাবিত রিপোর্টে পেশ করা খসড়া মাত্র।
সরাসরি স্কুলে এসে পরীক্ষায় সমস্যা কোথায়? এই প্রশ্নে পড়ুয়াদের পক্ষে একাধিক পয়েন্ট উঠে এসেছে। প্রথমত, করোনা পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যে সিবিএসই এবং সিআইএসসিই দশম ও দ্বাদশের বোর্ড পরীক্ষা বাতিল করেছে। তারা বাড়ি বসে গত এক বছরে অনলাইনে স্কুলের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন ব্যবস্থার মাধ্যমেই পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়নের পথে হাঁটতে চলেছে। একই পথ ধরে দেশের আরও সাতটি রাজ্য দশম ও দ্বাদশের বোর্ড পরীক্ষা বাতিল করেছে। ফলে বহু রাজ্যেই মাসের পর মাস ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় বোর্ড পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে তাদেরও হাতের পাঁচ বলতে সেই স্কুলের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন প্রক্রিয়া।