দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ ইয়াসের তাণ্ডবে দুই জেলায় বিপুল ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করতে রবিবার রাজ্যে আসছে কেন্দ্রীয় দল । সাত সদস্যের এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক যুগ্ম সচিব। এ ছাড়াও কৃষি এবং খাদ্য দপ্তরের আধিকারিকরা থাকবেন। পরিদর্শন সেরে বুধবার তাঁদের দিল্লি ফেরার কথা। দিঘা পাথরপ্রতিমা, গোসাবা-সহ ইয়াস-বিধ্বস্ত এলাকায় দল যাবে বলে ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারকে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক । কেন্দ্রীয় দল সরেজমিন ওই সব ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দেখতে চায়। মঙ্গলবার তারা রাজ্য সরকারের সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বৈঠক করবে। এদিকে, সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক করবেন।
কেন্দ্রীয় দলের এই আগমনকে অবশ্য রাজ্য সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ। কারণ, গত বছর উম্পুনের পরেও কেন্দ্রীয় দল এসেছিল। তাদের কাছে ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত রিপোর্ট তথ্য-সহ পেশ করেছিল রাজ্য সরকার। পুনর্গঠনের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজও চাওয়া হয়। পরে রাজ্য সরকার কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানায়, অন্তত ৭ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হোক।
কিন্তু একটি টাকাও পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ। তাই ইয়াসে কত টাকা ক্ষতিপূরণ মিলবে, তা নিয়ে সন্দিহান রাজ্য। গত ২৮ মে মুখ্যমন্ত্রী কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রীকে প্রাথমিকভাবে ২০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে রিপোর্ট দিয়েছিলেন। একইসঙ্গে ইয়াস-বিধ্বস্ত সুন্দরবন ও দিঘার জন্য দশ হাজার কোটি টাকা করে দু’টি মাস্টার প্ল্যানের প্রস্তাবও দেওয়া হয়। সূত্রের খবর, এখনও কোনও টাকা আসেনি।
জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় দলটি দু’ভাগে ভাগ হয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে যাবে। সেখানে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলতে চায় তারা। তারপর রাজ্যের সঙ্গে কথা বলে দিল্লিতে ফিরে রিপোর্ট দেওয়ার কথা।
এদিকে, শুক্রবার দুয়ারে ত্রাণ শিবিরের দ্বিতীয় দিনেই ইয়াস দুর্গত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪২ হাজার ৬০৫ জন সরকারি আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন করেছেন। দুর্গত ছ’জেলায় ২২০টি শিবির খোলা হয়েছে। ১৮ জুন পর্যন্ত ওই এলাকায় ব্লক অফিস বা স্কুল, কলেজ বাড়িতে রাজ্য সরকারের এই শিবির চলবে।
যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা লিখিত আবেদন করবেন। এরপর বিডিওরা সরেজমিন যাচাই করবেন। ঘটনাস্থল থেকে ছবি তুলে জিআই ট্যাগ করে অ্যাপের মাধ্যমে নবান্নে পাঠাবেন। যার ভিত্তিতে ১ জুলাই থেকে ওই ক্ষতিপূরণের অর্থ রাজ্য সরকার সরাসরি দুর্গত মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেবে। এ জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েত বা পুরসভার সুপারিশ লাগবে না।
প্রসঙ্গত,গত মাসের শেষেই রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে তাণ্ডব করেছে ঘূর্ণিঝড়। কলকাতায় তেমন প্রভাব না পড়লেও উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরে ঝড়ের প্রভাব দেখা গিয়েছিল। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে রাজ্যে। জেলাগুলি থেকে পাওয়া প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, প্রায় তিন লক্ষ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সমুদ্রের নোনা জল চাষের জমিতে ঢুকে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া প্রায় এক কোটি মানুষ এই দুর্যোগ কবলিত। গত ২৮ মে কলাইকুণ্ডায় ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠকের শেষে বাংলার জন্য ২৫০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণাও করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
রাজ্য সরকারের দেওয়া ক্ষয়ক্ষতির হিসেব খতিয়ে দেখতেই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে পাঠানো হচ্ছে বলে খবর। গত বছর আমফানের পরেও রাজ্য ঘুরে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করে গিয়েছিল কেন্দ্রের পাঠানো প্রতিনিধি দল। সূত্রের খবর, রবিবার রাত ৮টা ৫মিনিটে দিল্লি থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে নামবে কেন্দ্রের টিম। তাজবেঙ্গল হোটেলে রাত কাটিয়ে পরদিন সোমবার সকালে দলটি পৌঁছবে ডুমুরজোলা হেলিপ্যাডে। সেখান থেকে দুটি দলে ভাগ হয়ে একটি যাবে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ও অন্যটি পূর্ব মেদিনীপুরে।
সোমবার সকালে হেলিকপ্টারে চেপে একটি দল যাবে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। দুপুর দেড়টা নাগাদ পৌঁছবে গোসাবায়। সেখানে ঘুরে ক্ষয়ক্ষতি দেখবে।
দ্বিতীয় দলটি সকাল আটটা নাগাদ সড়কপথে পৌঁছবে দিঘায়। সেখানে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবে। তারপর দিঘা-মন্দারমনি ঘুরে দুপুরেই ফিরবে কলকাতায়। পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ১০টা নাগাদ নবান্নে গিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা ও অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বৈঠক করবে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।