দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ পুলওয়ামা কাণ্ডে পাকিস্তানের কোনও সংগঠনের জড়িত থাকার প্রমাণ থাকলে ইসলামাবাদ ব্যবস্থা নেবে বলে মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সেই সঙ্গে বলেছিলেন, পাকিস্তান স্থিতাবস্থার দিকে এগোচ্ছে। এই অবস্থায় কেন আমরা এরকম করব!” তাঁর কথায়, পুলওয়ামার ঘটনায় পাক-যোগের প্রমাণ দিক নয়াদিল্লি। গ্যারান্টি দিচ্ছি কঠোর ব্যবস্থা নেব। তা এই জন্য নয় যে পাকিস্তান চাপে রয়েছে, বরং এই কারণে যে যদি এ দেশের কেউ ওই ঘটনায় জড়িত থাকে তা হলে তারা পাকিস্তানেরও শত্রু।

পাক প্রধানমন্ত্রীর ওই কথা শেষ হতে না হতেই সমালোচনা শুরু হয়েছিল বিভিন্ন মহল থেকে। পরে সন্ধ্যায় ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেন, “পাকিস্তান গোটা বিশ্বকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। এ সব বন্ধ করে বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ করে দেখাক ইসলামাবাদ।

পরে সাউথ ব্লকের এক কর্তা বলেন, পাক প্রধানমন্ত্রী তথ্য চাইছেন তো! নয়াদিল্লি তো আগেই জানিয়েছে, বাহাওয়ালপুরে বসে রয়েছে জইশ ই মহম্মদের মাথা মাসুদ আজহার। ইমরান খান ওকে গ্রেফতার করুন দেখি!ভারতীয় কূটনীতিকদের বক্তব্য, এ সব বুজরুকি অনেক হয়েছে, এ বার কাজ করে দেখাক পাকিস্তান।

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের বাহাওয়ালপুরে রয়েছে জইশ ই মহম্মদের হেড কোয়ার্টার। যার নাম জামিয়া সুভান আল্লাহ। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে জইশের ওই ডেরা থেকে মাত্র সাত-আট কিলোমিটার দূরে রয়েছে পাক সেনার ৩১ কোরের হেড কোয়ার্টার। নয়াদিল্লির বরাবরের অভিযোগ, মাসুদ আজহারকে নিরাপত্তা ও সব রকম মদত দিচ্ছে পাক সেনা ও আইএসআই।

প্রসঙ্গত, অতীতে মুম্বই সন্ত্রাসের ঘটনার নেপথ্যে পাক-যোগের সুনির্দিষ্ট তথ্য ও প্রমাণ ইসলামাবাদকে দিয়েছিল নয়াদিল্লি। আজমল কাসভ-সহ মুম্বই হানার জঙ্গিরা যে পাকিস্তান থেকে এসেছিল, তাদের মাস্টারমাইন্ড যে পাকিস্তানে বসে তাদের নির্দেশ দিচ্ছিল তা বিশ্ব সংসারের সকলেরই জানা। কিন্তু তার পরেও ইসলামাবাদ কোনও পদক্ষেপ করেনি। পাঠানকোটে বায়ুসেনা ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার পরেও ইসলামাবাদকে তথ্য প্রমাণ দেওয়া হয়েছিল। পাক সেনা কর্তারা পর্যন্ত এসেছিলেন পাঠানকোটের তদন্তে। কিন্তু তার পরেও ইসলামাবাদ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ইমরানকে এ দিন সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহ এবং জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিও।

এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে ইমরান আরও বলেছিলেন, ভারতে ভোট আসছে। সম্ভবত সেই কারণেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে ভারত। জবাবে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এ দিন একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়, এ ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ নয়াদিল্লি খারিজ করছে। গণতান্ত্রিক কাঠামো হিসাবে গোটা বিশ্বে ভারত একটি মডেল। পাকিস্তানের পক্ষে তা কখনওই বোঝা সম্ভব নয়।
পাক প্রধানমন্ত্রীর এ দিনের মন্তব্য যে নয়াদিল্লি কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে না সেটাই স্বাভাবিক। এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে নয়াদিল্লিকে হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভারত যদি পাকিস্তানে আক্রমণ করে তা হলে ইসালামাবাদ পাল্টা মারের জন্য প্রস্তুত। তবে ইমরানের ও কথায় কোনও গুরুত্বই দিচ্ছে না সাউথ ব্লক। বিদেশ মন্ত্রকের কূটনীতিকদের মতে, ঘরোয়া রাজনীতির চাপেই এ সব বলছেন ইমরান। বাস্তবে আইএসআই, পাক সেনা এবং জইশের উপর ওঁর কোনও নিয়ন্ত্রণই নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here