দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গে সংক্রমণ বিগত বহুদিন ধরেই নিম্নমুখী। সংক্রমণ কমে এই মুহূর্তে ৫০ হাজারের ঘরে। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সোমবারের বুলেটিনে দেশের কোভিড পরিসংখ্যাণ দেখে তাই মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। হিসেব করে দেখতে গেলে প্রায় ৮৮ দিন পরে দেশে প্রথম দৈনিক আক্রান্ত ৫০ হাজারের কাছাকাছি এসেছে। গত মাসেও লাখের বেশি দৈনিক সংক্রমণ ধরা পড়ছিল। সেখানে নতুন সংক্রমণ এখন ৫৩ হাজারের কাছাকাছি। আরও একটা ভাল খবর হল, সংক্রমণের হার তথা কোভিড পজিটিভিটি রেটও কমেছে দেশে। সপ্তাহের হিসেবে সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশেরও নীচে নেমে গেছে।
যদিত্ত কোভিডে মৃত্যু কমেছে বলা যায় না। কারণ গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণজনিত কারণে দেশে মৃত্যু হয়েছে ১৪২২ জনের। এখনও দৈনিক মৃত্যু হাজারের বেশি। স্বাস্থ্যমন্ত্রক কিছুদিন আগেই বলেছিল, বিহার ও মহারাষ্ট্রের মতো বেশ কিছু রাজ্যে করোনায় মৃত্যু যা দেখানো হয়েছিল, বাস্তবে সংখ্যাটা তার চেয়ে বেশি। উদ্ধব ঠাকরে সরকারের সংশোধিত পরিসংখ্যাণে দেখা গেছে, মহারাষ্ট্রে কোভিড সংক্রমণজনিত কারণে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার ৮০০ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে বিহারের পুনর্গণনা করে দেখা গেছে কোভিডে মৃত্যু প্রায় ৭২% বেশি। এই পরিবর্তিত পরিসংখ্যাণেরই রেশ পড়েছে দেশের জাতীয় পরিসংখ্যাণেও।
গত এপ্রিল মাসের মেসে সংক্রমণ বেড়ে গোটা দেশে সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৪ লক্ষ। সেখান থেকে সংক্রমণ কমে ৫০ হাজারের ঘরে আসায়, নিশ্চিন্ত চিকিৎসকেরা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৫৩ হাজার ২৫৬ জন। যা তিন মাসে সর্বনিম্ন। এই পর্যন্ত দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ২ কোটি ৯৯ লক্ষ ৩৫ হাজার ২২১।
রবিবার থেকে সোমবার সকাল ৮ টা পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন ১ হাজার ৪২২ জন। চলতি বছর এপ্রিল মাসের পর যা এত কম। এই পর্যন্ত ভারতে করোনায় বলি হয়েছেন ৩ লক্ষ ৮৮ হাজার ১৩৫ জন। দেশে এখনও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি মহারাষ্ট্রে। মৃত্যুর হারে বাকি সমস্ত রাজ্যকে পিছনে ফেলে দিয়েছে মহারাষ্ট্র। গত ২৪ ঘণ্টায় শুধুমাত্র মহারাষ্ট্র করোনায় বলি হয়েছেন ৬০৫ জন। অন্যান্য রাজ্যে যা ১০০ এর নীচে। সংক্রমণ, মৃত্যুর হারের মতোই কমেছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা। এই পর্যন্ত দেশে সক্রিয় রোগী প্রায় ৭ লক্ষ। তৃতীয় ঢেউ নিয়ে ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি করেছে চিকিৎসকেরা। তৃতীয় তরঙ্গ আছড়ে পড়ার আগে দেশে টিকা নিয়েছেন ২৮ কোটির বেশি মানুষ।
কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ শেষের দিকে চলে এলেও, তৃতীয় ঢেউ যে অনিবার্য সে কথা স্বীকার করেছেন দেশের অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞই। বস্তুত, দিল্লি এইমসের প্রধান ডাঃ রণদীপ গুলেরিয়া বলেছেন, দেশে সংক্রমণের হার যেভাবে বেড়েছিল তাতে কোভিডের তৃতীয় ঢেউ আটকানো যাবে না। আগামী ৬-৮ সপ্তাহের মধ্যেই তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে দেশে। এমনকি মহারাষ্ট্রেও কোভিডের তৃতীয় ঢেউ খুব তাড়াতাড়ি চলে আসতে পারে বলেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
করোনা সংক্রমণ নিয়ে মানুষের সচেতনতার অভাবই এই বিপর্যয়ের কারণ বলে ব্যাখ্যা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আনলক পর্যায়ে কোভিড নিয়ে গা ছাড়া মনোভাব ছিল বেশিরভাগ মানুষেরই। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া কোভিড গাইডলাইন মেনে চলা হয়নি বেশিরভাগ জায়গাতেই। উৎসব-অনুষ্ঠানও চলেছে দেদাড়। এইসব কারণেই সংক্রমণ বেশি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনার একাধিক নতুন প্রজাতিও ছড়িয়ে পড়েছে দেশে। তবে কোভিডের তৃতীয় ঢেউ এলেও বাচ্চাদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কম বলেই ভরসা দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।