দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ গত কয়েক দিন ধরে কৃষক আন্দোলনে জেরবার দিল্লি। দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে কয়েক লাখ কৃষক জড়ো হয়েছেন দিল্লির বাইরে। সেখানেই অবস্থানে বসেছেন তাঁরা। তার জেরে কার্যত অবরুদ্ধ রাজধানী। কৃষকদের দাবি কিছুদিন আগে নিয়ে আসা তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নিতে হবে। এই দাবি নিয়ে কৃষকদের সংগঠনের সঙ্গে আগেও দু’বার বৈঠক করেছেন বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। আজ, শনিবার ফের তৃতীয়বারের জন্য বৈঠকে বসতে চলেছেন তাঁরা।
তার আগে এ দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে গিয়ে বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল, এবং কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর। তবে এ দিনের বৈঠক ফলপ্রসূ না হলে এ বার সংসদ ঘেরাওয়ের হুঙ্কার দিয়েছেন আন্দোলনকারী কৃষকরা।
আজ দুপুর ২টোয় দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে হবে এই বৈঠক। কৃষকদের তরফে সরকারের কাছে একটি ৩৯ পয়েন্টের আবেদন পত্র পেশ করা হয়েছে। সেখানেই তাঁদের যাবতীয় দাবি লেখা রয়েছে। তাঁর মধ্যে প্রধান হল কৃষি আইন প্রত্যাহার। এর আগেও বারবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে এই আইন কৃষকদের ভালর জন্যই আনা হয়েছে। কিন্তু তাতে চিড়ে ভেজেনি। নিজেদের দাবিতে অনড় তাঁরা।
এর মধ্যেই আগামী মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর সারা ভারত বন্ধের ডাক দিয়েছেন কৃষকরা। সেদিন দিল্লিগামী সব রাস্তা অবরোধ করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। এমনকি দেশের সব টোল গেটে গিয়ে সেদিন সরকারকে টোল নিতে তাঁরা দেবেন না, এমনটাই হুঁশিয়ারি দিয়েছে কৃষক সংগঠনগুলি।
এক কৃষক সংগঠনের নেতা হরিন্দর সিং লাখোয়াল সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “আগামী মঙ্গলবার আমরা ভারত বন্ধের ডাক দিয়েছি। দিল্লিগামী সব রাস্তা সেদিন বন্ধ করে দেওয়া হবে। এছাড়া দেশের সব টোল গেট অবরুদ্ধ করব আমরা। সেদিন সরকারকে কোথাও টোল নিতে আমরা দেব না। এই আন্দোলনের সঙ্গে আরও অনেক মানুষ যোগ দেবেন।”
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় সরকার ও কৃষক সংগঠনগুলির মধ্যে বৈঠক হয়। কিন্তু সাত ঘণ্টার বৈঠকের পরেও কোনও সমাধান পাওয়া যায়নি। তারপরেই কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর বলেন, “সাত ঘণ্টা ধরে বৈঠক হয়েছে। কৃষকরা যে দাবি করেছেন তা মন দিয়ে শোনা হয়েছে। ৫ তারিখ ফের আমরা বৈঠকে বসব।”
গত সপ্তাহ থেকেই শুরু হয়েছে কৃষক আন্দোলন। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে দিল্লি আসার পথে বারবার বাধা পেতে হয়েছে কৃষকদের। অনেক জায়গায় ব্যারিকেড করে আটকানো হয়েছে তাঁদের। কোথাও লাঠিচার্জ, কোথাও জলকামানের সামনে পড়তে হয়েছে তাঁদের। কিন্তু তাতেও থামেনি মিছিল। ট্রাকে করে, পায়ে হেঁটে কয়েক লাখ কৃষক জড়ো হয়েছেন দিল্লি সীমান্তে। সেখানেই অবস্থান করছেন তাঁরা। এই আন্দোলনে তাঁরা অনেক সেলিব্রিটি থেকে শুরু করে একাধিক বিরোধী রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে পেয়েছেন। প্রতিদিনই যেন বহর আরও বাড়ছে আন্দোলনের।
এর মধ্যেই আবার কৃষকদের আন্দোলনের জেরে জরুরি পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে বলেই অভিযোগ উঠেছে। এই বিষয়ে একটি পিটিশন দায়ের হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। দেশের শীর্ষ আদালতে দায়ের হওয়া এই পিটিশনে বলা হয়েছে, কৃষকরা নিজেদের দাবিদাওয়া মেটানোর জন্য আন্দোলন করছেন। কিন্তু তাতে দিল্লি অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। তার ফলে দিল্লির বাইরে থেকে ভিতরে ঢুকতে ও ভিতর থেকে বাইরে যেতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সবথেকে বেশি সমস্যা হচ্ছে জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে। এই কোভিড পরিস্থিতিতে তা খুবই উদ্বেগজনক। আর তাই দেশের শীর্ষ আদালতের উচিত এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা।
এখন দেখার এদিনের বৈঠকে কোনও সমাধান সূত্র বের হয় কিনা।