ইন্দ্রজিৎ রায়, শান্তিনিকেতন:
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২o১৯ সালে বিভিন্ন কোর্সে ভর্তির অস্বাভাবিক ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলনে নামল বিশ্বভারতীর ছাত্র ছাত্রীরা।

“ভাঙো অচলায়তন” স্লোগান তুলে এদিন বিশ্বভারতী সেন্ট্রাল অফিসে প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হন সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের ঐক্য মঞ্চ। তাদের দাবি অবিলম্বে কমাতে হবে সমস্ত ফি। ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কোন রকম কোনো আলোচনা ছাড়াই এই ফি বৃদ্ধি হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা।

শুক্রবার তপ্ত দুপুরে ভর্তি ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে ছাত্রছাত্রীরা একটি প্রতিবাদ মিছিল করে উপাচার্যকে স্মারকলিপি জমা দিতে গেলে সেন্ট্রাল অফিস এর মূল ফটকে নিরাপত্তারক্ষীদের সাথে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন পড়ুয়ারা। ছাত্র-ছাত্রীদের অভিযোগ নিরাপত্তারক্ষীরা ডেপুটেশন জমা দিতে বাধা দেন, তার প্রতিবাদে রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে প্রতিবাদ শুরু করেন পড়ুয়ারা। তবে এদিন উপাচার্য না থাকায় রেজিস্টার এর হাতে স্মারকলিপি জমা দেন আন্দোলনরত ছাত্র ছাত্রীরা।

২০১৯ সালে বিশ্বভারতীর বিভিন্ন কোর্সে ভর্তির জন্য যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে তাতে অস্বাভাবিক হারে ফি বৃদ্ধি হয়েছে বলে পড়ুয়াদের অভিযোগ। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে একাদশ স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল,পিএইচডি সার্টিফিকেট কোর্স, ডিপ্লোমা ও অ্যাডভান্স ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তির আবেদন করা যাবে আগামী ১০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু ভর্তির জন্য আবেদন ফি এর বৃদ্ধি হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ কোন কোন ক্ষেত্রে বৃদ্ধির পরিমাণ বেড়েছে ১০ গুণ পর্যন্ত।

২o১৮সালেও সাধারন ও ওবিসি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আবেদন ফি ছিল ৫oo টাকা এবছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১000 টাকায়। এস সি এস টি এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পড়ুয়াদের আবেদন ফি ১৫0 টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩00 টাকায়। সব থেকে বেশি ফি লাগু হয়েছে বিদেশি পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে, ২০১৮সাল পর্যন্ত যা ছিল ৫00 টাকা সেই ফি দশ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫000 টাকায়। এ তো গেল সার্ক অন্তর্ভুক্ত দেশের কথা। সার্ক বহির্ভূত দেশ গুলির পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে আবেদন ফির পরিমাণ ১000 টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়ে হয়েছে ১0000 টাকায়। স্বাভাবিকভাবেই এই হারে ফি বৃদ্ধির কারণে চরম বিপাকে নানা স্তরের ছাত্রছাত্রীরা।

বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গেছে ইউজিসি তাদের নির্দেশিকায় জানিয়েছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কে নিজেদের তহবিল নিজেদের তৈরি করতে হবে। সেই কারণেই সেন্ট্রাল এডমিশন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই ফি বাড়ানো হয়েছে। গত ৮ বছরে বিশ্বভারতীতে ভর্তির কোন ফি বাড়েনি স্বাভাবিকভাবেই এবছর এত ফি বাড়ায় ক্ষুব্ধ পড়ুয়া ও তাদের অভিভাবকরা। তাদের দাবি এভাবে অস্বাভাবিক হারে ফি বৃদ্ধি না করে ধাপে ধাপে বাড়াতে পারতেন কর্তৃপক্ষ। এরই প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন বিশ্বভারতীর আভ্যন্তরীণ পড়ুয়ারা। বিশ্বভারতীর বিভিন্ন দেয়ালে তারা “ভাঙ্গো অচলায়তন” এই উদ্ধৃতি ব্যবহার করে প্রতিবাদ করেছেন। শান্তিনিকেতনের বিভিন্ন জায়গায় দেওয়াল লিখন করে প্রতিবাদ করেছেন তাঁরা। এরই মধ্যে একটি ঐতিহ্যবাহী দেওয়াল বিশ্বভারতীর পাঠভবনের রথীন্দ্র লাইব্রেরীর একটি দেওয়াল। সেখানে লেখা হয়েছে “১৭ ই মে দিচ্ছে ডাক অচলায়তন নিপাত যাক।”

তবে এই দেওয়াল লিখনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে শান্তিনিকেতন আশ্রমে। কিছু আশ্রমিক ঐতিহ্যবাহী ভবনের দেওয়ালে প্রতিবাদী শব্দ লেখার প্রতিবাদ জানিয়েছেন, তাদের বক্তব্য এটা বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য বা সংস্কৃতি নয়। প্রতিবাদের ভাষা অন্যরকম হতে পারে তবে তা আশ্রমের পরিবেশ ও সম্পত্তি নষ্ট করে নয়। আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য বিভিন্ন সাধারণ জায়গায় তাদের প্রতিবাদের বিষয়গুলি মুছে দিয়ে কণ্ঠরোধ করতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ। তাই যাতে মুছতে না পারে সেই কারণে পাঠভবনের রথীন্দ্র লাইব্রেরীর কার্নিশে লেখা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় যদি কেউ ব্যথিত হন তাহলে ভবিষ্যতে এরকম কোন ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য আমরা অঙ্গিকার বদ্ধ। আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই আন্দোলন করতে নেমেছি। তবে, যতদিন না পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবি মানছেন ততদিন পর্যন্ত চলবে আমাদের এই আন্দোলন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here