দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ মাসখানেক আগে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এক চিনা জাহাজ থেকে একটা অটোক্লেভ ( রাসায়নিক উপাদান কিংবা উচ্চ তাপমাত্রায় কোনো উপাদান সুরক্ষিত রাখার জন্য ব্যবহৃত কন্টেনার ) বাজেয়াপ্ত করে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন ( ডিআরডিও )। এই অটোক্লেভ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল পাকিস্তানে। ডিআরডিও-র আশঙ্কা নিউক্লিয়ার মিসাইল কিংবা স্যাটেলাইট তৈরিতে এই অটোক্লেভকে কাজে লাগাত পাকিস্তান।
৩ ফেব্রুয়ারি দাই সুই ইয়ুং নামের একটি চিনা জাহাজকে কান্ডলা পোর্টে আটকান শুল্ক দফতরের অফিসাররা। জাহাজটি পাকিস্তানের করাচির পোর্ট কাশিমের দিকে যাচ্ছিল। সেই জাহাজ থেকেই এই অটোক্লেভ বাজেয়াপ্ত করা হয়। চিনা জাহাজের তরফে জানানো হয়েছিল ব্যবসার জন্য এই অটোক্লেভ ব্যবহার করা হবে। কিন্তু তাতে বিশ্বাস হয়নি শুল্ক দফতরের। এই অটোক্লেভ বাজেয়াপ্ত করার পরে জাহাজটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অটোক্লেভটি বাজেয়াপ্ত করার পরে তা ডিআরডিও-র হাতে তুলে দেয় শুল্ক দফতর। ডিআরডিও-র মিসাইল বিশেষজ্ঞরা গত কয়েকদিন ধরে এই অটোক্লেভটি পরীক্ষা করে দেখেন। তারপরে তাঁরা বিদেশমন্ত্রক ও কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে জানান, ১৮ মিটার বাই ৪ মিটারের এই অটোক্লেভ দিয়ে সহজেই নিউক্লিয়ার মিসাইল তৈরি করা যায়। এছাড়াও স্যাটেলাইট তৈরির ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যায় এটিকে। সেই কাজেই হয়তো একে চিন থেকে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
ডিআরডিও-র এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “১৫০০ থেকে ২০০০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে আঘাত হানতে সক্ষম এমন নিউক্লিয়ার মিসাইলের মোটর তৈরি করতে কাজ লাগে এই অটোক্লেভ। এছাড়াও স্যাটেলাইটের মোটরও তৈরি করা যায়। পাকিস্তানের কাছে শাহিন ২ মিসাইল আছে। এই মিসাইল ১৫০০ থেকে ২০০০ কিলোমিটার দূরে আঘাত হানতে সক্ষম। গত বছর মে মাসে এই মিসাইল পরীক্ষা করে দেখা হয়েছিল।”
এই ঘটনা জানার পরে ভারত এবার রাষ্ট্রপুঞ্জে ‘উইপনস অফ মাস ডেস্ট্রাকশন অ্যান্ড দেয়ার ডেলিভারি সিস্টেমস অ্যাক্ট’-এর আওতায় চিন ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে পারে। বেজিং ও ইসলামাবাদের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে কারও আর জানতে কিছু বাকি নেই। এর আগে নিউক্লিয়ার মিসাইল বানাতেও পাকিস্তানকে সাহায্য করেছিল চিন। সঙ্গে ছিল উত্তর কোরিয়া। এম ১১ ও এম ৯ মিসাইল পাকিস্তানকে দিয়েছিল তারা। ১৯৮০ সাল থেকে অস্ত্র বানানোর ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে সাহায্য করে থাকে চিন। এমনকি নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপে ভারতের অন্তর্ভুক্তি চিনের কারণেই আটকে রয়েছে। যতদিন না পাকিস্তান এই গ্রুপে ঢোকার যোগ্যতা পাচ্ছে, ততদিন ভারতের ঢোকাকে আটকে রেখেছে চিন।
তবে এই ঘটনার পরে এবার ভারতের হয় আমেরিকা, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশ চিনের উপর চাপ বাড়াতে পারে, যাতে নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপে ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এখন দেখার এই বিষয়ে দেশের কূটনৈতিক মহল কী সিদ্ধান্ত নেয়। কী ভাবেই বা প্রতিক্রিয়া দেয় পাকিস্তান ও চিন।