দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ তদন্ত ঠিকমতো গতি পায়নি। হাথরসের তরুণীর গণধর্ষণ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডে যখন উত্তাল দেশ, তখন নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করেই নির্যাতিতার দেহ তাঁর বাড়ি থেকে বের করে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে উত্তরপ্রদেশের পুলিশের বিরুদ্ধে। হাথরস কাণ্ডে তদন্তে অনিয়মের অভিযোগে এবার পাঁচ পুলিশকর্মীকে বরখাস্ত করা হল। এঁদের মধ্যে পুলিশ সুপারও রয়েছেন। শুক্রবার রাতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার।
হাথরস কাণ্ডের তদন্ত করছে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম তথা সিট। সূত্রের খবর, সিটের তদন্তের সূত্র ধরেই সাসপেন্ড করা হয়েছে ওই পাঁচ পুলিশকর্মীকে। নির্যাতিতার পরিবার আগেই অভিযোগ করেছিল, তাঁদের বয়ান সত্ত্বেও অভিযুক্তদের ধরতে অনেক দেরি করেছে পুলিশ। উত্তরপ্রদেশে পুলিশের এক সিনিয়র অফিসার তো মিডিয়ার সামনেই বলেছিলেন যে, ফরেন্সিক রিপোর্টে ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি। তরুণীর গোপনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে আর গলায় ফাঁস দিয়ে তাঁকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল সেটা জানা গেছে। তাঁর দাবি ছিল, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে যৌন নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
হাথরস কাণ্ডে বিক্ষোভের আগুন জ্বলছে দেশে। এর মধ্যেই পুলিশের এমন বক্তব্যে আগুনে ঘি পড়ে। প্রতিবাদে মুখর হয় আমজনতা। চাপের মুখে উচ্চবর্ণের চার যুবককে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। নির্যাতিতার পরিবারকে ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের একজনের চাকরির কথাও ঘোষণা করে যোগী আদিত্যনাথ সরকার।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে হাথরস গ্রামে এক ভয়ঙ্কর তাণ্ডবলীলা চালায় পুলিশ। তরুণীর মৃতদেহ জোরজবরদস্তি বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে একটি গমের ক্ষেতের মধ্যে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নির্যাতিতার পরিবার বাধা দিতে গেলে তাঁদের চূড়ান্ত হেনস্থার মুখে পড়তে হয়। পুলিশি হেনস্থার ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। দেখা যায়, নির্যাতিতার মা অ্যাম্বুলেন্সের উপর পড়ে বুকফাটা আর্তনাদ করছেন।
পুলিশের ভ্যান ঘিরে দাঁড়িয়ে তরুণীর বাবা, দাদা ও গ্রামবাসীরা। সকলকে টেনে হিঁচড়ে ঘরে ঢুকিয়ে তালাবন্ধ করতেও দেখা যায় পুলিশকে। হাথরসের ঘটনার বীভৎসতা ও পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডের পরে ক্ষোভের আগুন আরও বেড়ে যায়।
চাপের মুখে পড়ে সিটকে তদন্তভার দেয় উত্তরপ্রদেশ সরকার। তদন্তকারী অফিসাররা জানিয়েছেন, ন্যাক্রো অ্যানালাইসিস বা লাই-ডিটেকটর টেস্ট হতে পারে অপরাধীদের। নির্যাতিতার পরিবারের লোকজনের বয়ানও নেওয়া হবে। তদন্তে কতটা গাফিলতি হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে আজ সন্ধে থেকেই উত্তাল রাজধানী। আমজনতার সঙ্গে পথে নেমে বিক্ষোভ মিছিলে সামিল হয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, ভীম আর্মি প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ, সীতারাম ইয়েচুরি প্রমুখ। মিছিল থেকে গলা চড়িয়ে কেজরিওয়াল বলেছেন, এই জঘন্য অপরাধের সুবিচার চায় দেশ। উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে হাতজোড় করে তাঁর বিনীত অনুরোধ, অপরাধীদের যেন ফাঁসি দেওয়া হয়। বিক্ষোভকারীদের সামাল দিতে পথে নামে পুলিশ।
ইন্ডিয়া গেট থেকে গোটা এলাকায় জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। পুলিশ জানায়, ১০০ জনের বেশি যন্তর মন্তরের কাছে জমায়েত করতে পারবে না। তবে পুলিশি নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে এদিন বিকেল থেকেই যন্তর মন্তরের কাছে প্রায় পাঁচশো বিক্ষোভকারীর জমায়েত লক্ষ্য করা গেছে।