দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সোমবার থেকে লকডাউন কলকাতা। নবান্নের এই সিদ্ধান্তর আগেই অবশ্য সারা দেশে করোনা সংক্রামিত ৭৫টি জেলা লক ডাউনের পরামর্শ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। আর এই তালিকায় ছিল কলকাতাও।
আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত মহানগরকে সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের পরামর্শ মেনেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করল রাজ্য। তবে বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দোকান খোলা থাকবে বলে জানা গিয়েছে। কোনও জরুরি পরিষেবা এই লকডাউনের আওতায় থাকছে না। আগেই কলকাতায় লকডাউনের পরামর্শ দেয় কেন্দ্রে। সেই পরামর্শ মানার পাশাপাশি রাজ্য একটু এগিয়ে গিয়ে গোটা রাজ্যের সব পুরসভা এলাকা এই লকডাউনের আওতায় নিয়ে এল।
করোনা সংক্রমণ রুখতে ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে রেল চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। লকডাউন করা হয়েছে একের পর এক রাজ্য। রাজস্থান, ওড়িশা, পাঞ্জাবের মতো রাজ্যে লকডাউন ঘোষিত হয়েছে। এরই মাঝে বিহারে ৩৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তির করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর মেলে। সে আবার দু’দিন আগে কলকাতা হয়েই পাটনা ফিরেছে জানা যায়। এরপরই নবান্নে শুরু হয় উচ্চপর্যায়ের বৈঠক। শেষে কলকাতা সহ সমস্ত বড় শহর লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সোমবার অর্থাৎ ২৩ মার্চ বিকেল ৫টা থেকে শুক্রবার অর্থাৎ ২৭ মার্চ রাত ১২টা পর্যন্ত এই লকডাউন বলবৎ থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। নিত্যপ্রয়োজনীয় এবং জরুরি পরিষেবার বাইরে থাকা যাবতীয় কার্যকলাপ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই সাড়ে চার দিন রাজ্যে সব রকমের গণপরিবহণও বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা করেছে নবান্ন।
থানা, সংশোধানাগার, আদালত চালু থাকলেও অন্য অধিকাংশ সরকারি ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে এই সাড়ে চার দিন। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা, দোকান-বাজারও বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু খাবার, দুধ, সবজি, ওষুধ-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্রের দোকান আর হাসপাতাল ও চিকিৎসা পরিকাঠামো খোলা থাকবে। টেলিকম, ইন্টারনেট, তথ্যপ্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, পানীয় জল সরবরাহ, জঞ্জাল অপসারণ পরিষেবাও ছাড় পাচ্ছে। ছাড় পাচ্ছে সংবাদমাধ্যমও।
এক নজরে:কী কী বন্ধ – কী কী খোলা থাকছে।
১। আগেই সব লোকাল ও মেল, এক্সপ্রেস ট্রেন বন্ধ রাখার ঘোষণা করেছে রেলমন্ত্রক।
২। বন্ধ থাকবে কলকাতা মেট্রো রেল এবং চক্র রেলের পরিষেবা।
৩। চলবে না বাস, অটো, ট্যাক্সি। যাবতীয় গণপরিবহণ ব্যবস্থাই বন্ধ রাখতে হবে।
৪। নিত্য প্রয়োজনীয় নয় এমন দোকান, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, অফিস, কারখানা, গুদাম বন্ধ থাকবে।
৫। হাসপাতাল ও অন্যান্য জরুরি কাজে ব্যবহৃত গাড়ি চলবে।
৬। খোলা থাকবে সব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান।
৭। খোলা থাকবে টেলিকম ও তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্র।
৮। খাবার বিক্রি করার দোকান খোলা থাকবে। এর মধ্যে দুধ থেকে সবজি সবই রয়েছে।
৯। মাছ, মাংসের বাজার খোলা থাকবে।
১০। ওষুধের দোকান ও কারখানা খোলা থাকবে।
১১। সংবাদমাধ্যমের দফতর খোলা রাখা যাবে।
১২। পেট্রোল পাম্প, এলপিজি গ্যাসের দোকান ও সরবরাহ চালু থাকবে।
যে সব এলাকার জন্য লকডাউন ঘোষিত হল, সেই সব এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ির বাইরে বেরতে বারণ করা হয়েছে। খুব জরুরি কাজে বেরলেও এক জায়গায় ৭ জনের বেশি লোককে জমায়েত হতে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে।
কোনও প্রতিষ্ঠান বা পরিষেবা অত্যাবশ্যকীয় কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হলে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক বা পুর কমিশনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বলে জানানো হয়েছে। বিধিনিষেধের রূপায়ণ সুনিশ্চিত করার জন্য যখন যে রকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন, তা নেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে জেলাশাসক, পুলিশ কমিশনার, পুর কমিশনার, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত জেলাশাসক, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, মহকুমাশাসক, বিডিও এবং এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের।
এই আধিকারিকদের সব রকম সাহায্য করতে স্থানীয় পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে যে সব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা যদি কেউ ভাঙেন, তা হলে প্রশাসন তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করবে বলে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। ছবি তুলেছেন- কুন্তল চক্রবর্তী৷