দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: চারটি শর্তসাপেক্ষে বিজেপিকে রথযাত্রার অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি বলেছেন, বিজেপির রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ করা যেত। কিন্তু সরকার তা নাকচ করে দিয়েছে।
তাঁর বক্তব্য, রাজ্য সরকার যান্ত্রিকভাবে যাত্রা নাকচ করে দিয়েছিল। আদালত বলেছিল, পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে রথযাত্রার দিনক্ষণ স্থির করতে হবে। কিন্তু রাজ্য সরকার আলোচনা করার পরে যাত্রার অনুমতি দেয়নি। রাজ্য সরকারকে সমালোচনা করে বিচারপতি বলেন, ২৯ অক্টোবর যখন বিজেপি রথযাত্রার অনুমতি চেয়ে রাজ্য সরকারকে চিঠি দিল, তখন প্রশাসনের কোনও হেলদোল দেখা যায়নি। ৬ ডিসেম্বর মামলা যখন হাইকোর্টে এল, তখনই গোয়েন্দা রিপোর্ট চেয়ে পাঠাল। দু’টি জেলার গোয়েন্দা রিপোর্ট দেখিয়ে বলা হল, এই যাত্রা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে বিপজ্জনক। বিজেপি নেতারা আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, আমরা এই শর্ত মানতে আগে থেকেই রাজি ছিলাম। কিন্তু সরকার আমাদের সঙ্গে বসতেই চায়নি। কোর্টের কাছে থাপ্পড় খেয়ে রথযাত্রার কর্মসূচি মেনে নিতে হল। বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেছেন, শৃঙ্খলা মেনেই আমরা কর্মসূচি পালন করব। সরকারের মুখোশ খুলে দেব। রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার কথা বলব। মোদী সরকারের সাফল্যের কথা বলব। বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, এমন রায় হওয়ারই ছিল। বিজেপি নেতারা আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। রায় ঘোষণার পর বিজেপি-র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা বাংলার পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, “বিজেপি-র রথযাত্রার উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক। তাকে রাজনৈতিক যাত্রাও বলা যেতে পারে। বাংলায় যে গণতন্ত্র নেই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলের স্বৈরাচারী শাসন চলছে তা নিয়ে মানুষের জ্ঞান-চোখ খুলে দিতেই উত্তর থেকে দক্ষিণে রথ নিয়ে বেরোনোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। বিজেপি-ও চায় যে যাত্রা শান্তিপূর্ণ হোক।”
রাজ্য বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে, আদালতের সবিস্তার রায় হাতে পেলে তা নিয়ে সন্ধ্যায় আলোচনায় বসা হবে। এ ব্যাপারে সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ-র সঙ্গে কথা বলবেন। তার পর অমিত শাহ যে দিন সময় দিতে পারবেন সে দিনই রথযাত্রার সূচনা হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে প্রশাসন রথ যাত্রায় অনুমতি না দেওয়ার পরই দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন অমিত শাহ। তিনি বলেছিলেন, আদালতের উপর বিজেপি-র ভরসা ও আস্থা রয়েছে। রথযাত্রা হবেই। বাংলার গ্রামে গ্রামে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরবে বিজেপি-র রথ।
অমিত শাহ ছাড়াও রথ যাত্রা চলাকালীন বাংলায় একাধিক জনসভা করারও কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর।হাইকোর্টের রায় নিয়ে তৃণমূল অবশ্য দলীয় ভাবে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি। সরকার হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাবে কিনা তাও এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ঘরোয়া আলোচনায় দলের একাধিক নেতা বলেন, বাংলায় কোনও দলকে রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করতে কখনও বাধা দেয়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। কিন্তু বাংলায় বিভাজনের রাজনীতি করার জন্যই রথ নিয়ে বেরোতে চাইছে বিজেপি। তাতে রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল প্রশাসনের। সেই কারণেই ওদের রথযাত্রায় আপত্তি জানিয়েছিল পুলিশ ও প্রশাসন।