দেশের সময়: গুনে গুনে ১৭ দিনও হয়নি বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিন্তু এরই মধ্যে গেরুয়া দলের প্রতি তাঁদের মোহভঙ্গ হওয়ায় জোর আলোচনা শুরু হয়ে গেল রাজ্য রাজনীতিতে। এতো দ্রুত কেন বিজেপি থেকে মন উঠে গেল শোভনের?
বিজেপি ছাড়ার ব্যাপারে শনিবাসরীয় দুপুরে খোলাখুলিই হুমকি দিয়েছেন বৈশাখী। তিনি দাবি করেছেন, শোভনবাবুও বিজেপি থেকে নিষ্কৃতি পেতে চাইছেন! রাজ্য রাজনীতির অনেকে মনে করছেন, বৈশাখী যা সব বলছেন, তার মধ্যেই প্রকৃত কারণটা লুকিয়ে রয়েছে। হতে পারে বিজেপি-তে বৈশাখী বিশেষ পাত্তা পাচ্ছে না! বস্তুত রাজ্য বিজেপি-র মধ্যেও ধারনাটা এমনই।
বৈশাখী এ দিন অভিযোগ করেন, “আমাদের অন্ধকারে রেখে বিজেপি-তে সামিল করানো হয়েছে। আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করা হচ্ছে। মিটিংয়ে না ডেকে বলা হচ্ছে, ডাকা হয়েছে”। তাঁর কথায়, এ সব দেখে শোভনদা বলছেন, তা হলে পুরনো দল মন্দ কী ছিল? বিজেপি যেন আমাদের পুরনো দলের চটিতেই পা গলিয়েছে।
এখানেই থামেননি বৈশাখী। তিনি বলেন, “শোভনদা বলছেন, বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার জন্য সেতু ছিলে তুমি। কিন্তু তোমাকেই গুঁড়িয়ে গিয়ে আমার কাছে পৌঁছতে চাইছে ওরা। এক মুহূর্তও আর থাকতে চাই না এই দলে। আমি নিষ্কৃতি চাইছি” বৈশাখী এও দাবি করেন, শোভন রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নতুন চ্যালেঞ্জের জন্য তিনিই রাজি করিয়েছিলেন।
বৈশাখীর এ সব কথা শুনে রাজ্য বিজেপি-র এক নেতা এ দিন বলেন, বাস্তব হল শোভন চট্টোপাধ্যায়কে দলে নেওয়ার আগ্রহ আমাদের ছিল। কারণ, কলকাতা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায় ওনার রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। কিন্তু বৈশাখীর ব্যাপারে দলে বিশেষ আগ্রহ তো ছিলই না, উল্টে মহিলা সংগঠনে অনেকেরই আপত্তি ছিল। কিন্তু ওঁদের শর্তই ছিল যে ওঁরা একই সঙ্গে যোগ দেবেন। সেটা দল মেনে নিয়েছিল। রাজ্য বিজেপি-র ওই নেতার কথায়, তার মানে এই নয় যে শোভন আর বৈশাখীর রাজনৈতিক ওজন ও গুরুত্ব এক। হতে পারে শোভনের কাছে বৈশাখীর গুরুত্ব অসীম। কিন্তু তাতে বিজেপি-র কী?
বিজেপি নেতাদের অনেকের মতে, হতে পারে বৈশাখী শোভনকে মাধ্যম করে দ্রুত রাজনীতির সিঁড়ি চড়তে চেয়েছিলেন। তা ধাক্কা খেয়েছে বলেই প্রকাশ্যে এ সব কথা বলছেন।
তবে তৃণমূলের নেতারা অন্য সন্দেহ করছেন। তাঁদের অনেকের মতে, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সিবিআই-ইডি তদন্ত শুরু হওয়ার পরই রাজনীতিতে ক্রমশ নিস্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। হতে পারে সে সব থেকে পরিত্রাণ পেতেই বিজেপি-তে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু এর পরেও নারদ কাণ্ডে যে ভাবে শোভনকে সিবিআই তলব করেছে, তা থেকেই হয়তো মোহভঙ্গ হয়ে থাকতে পারে তাঁর।
শোভন-বৈশাখীর দল ছাড়ার হুমকি নিয়ে এ দিন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বিশেষ কিছু মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “ওঁদের কোনও অভিযোগ থাকলে উপযুক্ত জায়গায় বলুন”। অনেকে মনে করছেন, এ কথা বলার মধ্যে দিয়ে দিলীপবাবু বোঝাতে চেয়েছেন, এ সব হুমকিকে বিশেষ আমল দিচ্ছেন না তিনি।